আদব ও আমল

অন্তরের আমল – ৩ (তাওবা)

তাওবাঃ

সবসময় তাওবা করা ওয়াজিব। গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া মানুষের স্বভাব। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

كُلُّ ابْنِ آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الْخَطَّائِينَ التَّوَّابُونَ

আদম সন্তান সবাই ভুল করে। ভুলকারীদের মধ্যে উত্তম তারাই যারা তওবা করে। (তিরমিযী)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন,

لَوْ لَمْ تُذْنِبُوا لَذَهَبَ اللَّهُ بِكُمْ وَلَجَاءَ بِقَوْمٍ يُذْنِبُونَ فَيَسْتَغْفِرُونَ اللَّهَ فَيَغْفِرُ لَهُمْ

তোমরা যদি গুনাহ না কর, তবে আল্লাহ্‌ তোমাদের সরিয়ে দিবেন এবং সে স্থলে এমন জাতি সৃষ্টি করবেন যারা গুনাহ করবে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, তখন তিনিও তাদের ক্ষমা করে দিবেন। (মুসলিম)

তওবা করতে দেরী করা এবং গুনাহের কাজে অটল থাকা মস্ত বড় অন্যায়।

শয়তানের বাধা:

শয়তান সাত ধরণের বাধা-প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের উপর বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করে এবং তাকে ইসলাম ও তাওবার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। একটি বাধায় অপারগ হলে তার পরেরটি দ্বারা চেষ্টা চালায়। সেগুলো হচ্ছে:

  1. সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে: শিরক ও কুফরিতে লিপ্ত করার মাধ্যমে মানুষেকে ইসলাম থেকে দূরে রাখে।
  2. এতে সফল না হলে,বিদআত তথা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর ছাহাবীদের অনুসরণের ক্ষেত্রে নতুন নীতি সৃষ্টি করার মাধ্যমে।
  3.  এতেও যদি সফল না হয়,তখন কবিরা গুনাহে লিপ্ত করার চেষ্টা করে।
  4. এক্ষেত্রে সমর্থ না হলে ছাগীরা গুনাহে লিপ্ত করে।
  5. এতেও সফল না হলে, দুনিয়াবি বৈধ কাজ বেশী পরিমাণে করায়।
  6. এখানেও অপারগ হলে, অধিক ফযিলত ও বেশী নেকী আছে এমন কাজের তুলনায় কম নেকীর কাজের দ্বারা।
  7. এতেও সফল না হলে পথভ্রষ্ট করার জন্য জিন ও মানুষরূপী শয়তানকে তার বিরুদ্ধে নিয়োগ করে দেয়।

গুনাহের কাজ দুভাগে বিভক্ত:

(১) কবিরা (বড়) গুনাহ। যে সমস্ত কাজে দুনিয়াতে দণ্ড-বিধি নির্ধারণ করা আছে অথবা আখেরাতে শাস্তির ধমক দেয়া হয়েছে অথবা আল্লাহর গযব বা লা’নত বা ঈমান থাকবে না এমন কথা বলা হয়েছে তাকে কবিরা গুনাহ বলে।

(২) সাগীরা (ছাট) গুনাহ। উহা হচ্ছে কাবীরার নিম্ন পর্যায়ের পাপ। বিভিন্ন কারণে সাগীরা গুনাহ কবিরা গুনাহে পরিণত হতে পারে। যেমন: ছোট গুনাহের কাজে অটল থাকা, অথবা তা বারবার করা, বা তা তুচ্ছ মনে করা বা গুনাহের কাজে লিপ্ত হতে পেরে গর্ব করা অথবা গুনাহের কাজ প্রকাশ্যে করা।

সব ধরণের পাপ থেকেই তওবা করা আবশ্যক। পশ্চিমাকাশে সূর্য উদিত হওয়া অথবা মুমূর্ষু অবস্থায় মৃত্যুর গরগরা আসার পূর্ব পর্যন্ত তওবার দরজা উন্মুক্ত। তাওবাকারী যদি নিজ তাওবায় সত্যবাদী হয়, তবে তার পাপরাশীকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করা হবে- যদিও তা আকাশের মেঘমালার সংখ্যা বরাবর অধিক হয়।

তওবা কবুল হওয়ার শর্তাবলী:

  1. সংশ্লিষ্ট গুনাহের কাজটিকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা,
  2.  কৃত অপরাধের কারণে লজ্জিত হওয়া,
  3. ভবিষ্যতে পুনরায় উক্ত অপরাধে লিপ্ত হবে না এ কথার উপর দৃঢ় অঙ্গীকার করা। অন্যায় কাজটি যদি মানুষের অধিকার সংশ্লিষ্ট হয়, তবে উক্ত অধিকার তাদের নিকট ফিরিয়ে দেয়া। 

তাওবার ক্ষেত্রে মানুষ চার স্তরে বিভক্ত:

  1. জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তাওবার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যে সমস্ত ছোট-খাট মানবীয় ভুল-ভ্রান্তি থেকে কেউ মুক্ত নয় তাছাড়া পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার কল্পনা কখনো তার অন্তরে সৃষ্টিই হবে না। এটাকেই বলা হয় তাওবায় দৃঢ় থাকা। এধরণের তাওবাকারী কল্যাণে অগ্রগামী। তার তওবাকে বলা হয় তওবায়ে নাসূহা বা একনিষ্ঠ দৃঢ় তওবা। আর তার আত্মা হচ্ছে প্রশান্তিময় আত্মা
  2. তওবা করার পর মৌলিক আমলগুলোতে দৃঢ় থাকবে। কিন্তু পাপাচার থেকে মুক্ত হতে পারবে না। অপরাধে লিপ্ত হওয়ার জন্যে সুদৃঢ় ইচ্ছা নিয়ে অগ্রসর হবে না; কিন্তু তারপরও ফেতনা থেকে বাঁচতে পারবে না- লিপ্ত হয়েই যাবে। যখনই এধরণের কিছু ঘটে যাবে অপরাধীর মত নিজেকে লাঞ্ছনা দিবে, লজ্জিত হবে এবং অন্যায়ে লিপ্ত হওয়ার যাবতীয় উপকরণ থেকে বেঁচে থাকার জন্যে অঙ্গীকার করবে। একেই বলা হয় নফসে লাওয়ামাহ্ বা তিরস্কারকারী আত্মা।
  3. তওবা করে কিছুকাল দৃঢ় থাকবে। অতঃপর হঠাৎ কোন গুনাহের কাজে প্রবৃত্তি তাড়িত হয়ে লিপ্ত হয়ে পড়বে। অথচ সে নিয়মিতভাবে নেককাজ করেই চলবে। যাবতীয় অপরাধে জড়াতে মন চাইলেও এবং হাতের নাগালে পেলেও তা পরিত্যাগ করবে। কিন্তু দু/একটি বিষয়ে প্রবৃত্তিকে দমন করতে পারবে না, ফলে তাতে লিপ্ত হয়ে পড়বে, শেষে লজ্জিত হবে এবং উক্ত অন্যায় অচিরেই ছেড়ে দিয়ে তওবা করার অঙ্গীকার করবে। একে বলা হয় নফসে মাসঊলা বা জিজ্ঞাসিত আত্মা। এর পরিণাম ভয়াবহ। কেননা সে আজ নয় কাল বলে তওবা করতে দেরী করছে। হতে পারে সে তাওবার সুযোগ না পেয়েই মৃত্যু বরণ করবে। মানুষের শেষ আমলই তার পরিণাম নির্ধারণ করে।
  4. তওবা করে কিছু সময় দৃঢ় থাকবে। কিন্তু পুনরায় দ্রুত অন্যায়ে লিপ্ত হবে, অতঃপর অন্যায় করে আফসোসও করবে না এবং তওবা করার কথা মনেও আনবে না। একেই বলা হয় নফসে আম্মারা বিস সূই বা অন্যায়ে উদ্বুদ্ধ কারী আত্মা। এর পরিণাম খুবই ভয়ানক। এর শেষ পরিণতি খারাপ হওয়ার আশংকা আছে। অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বে তার নসীবে তওবা নাও জুটতে পারে। ফলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button