সমাজ/সংস্কৃতি/সভ্যতা

নারী-পুরুষের ফ্রি মিক্সিং

আমার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড, তবে আমার ডিপার্টমেন্টের নয়। ওর কয়েকটা ছেলে বন্ধু ছিল। ছেলেগুলো অবশ্য ভালোই, ফটকা ধরনের না। তারপরও আমার ব্যাপারটা পছন্দ হতো না। যে যতই বলুক না কেন, আমার কেন যেন বিশ্বাস হতে চাইত না যে ছেলে-মেয়ে শুধুই ফ্রেন্ড হতে পারে। অন্য কোনো আবেগ একটুও কাজ করে না। যাইহোক, অনেকদিন ওকে মানা করেছিলাম। কিন্তু ও শোনেনি। ও আমাকে উলটো বুঝাত যে, মেয়েরা অনেক হিংসা করে, হেল্প করতে চায় না, নোট দিতে চায় না। কিন্তু ছেলেরা এমন না। ওরা অনেক হেল্পফুল। নোট না থাকলেও অন্যের কাছ থেকে জোগার করে দেয়। আমি বলতাম, ‘তোমার হয়তো ওদের প্রতি অন্যরকম কোনো ফিলিংস নেই। কিন্তু ওদের তো থাকতে পারে।’ কিন্তু ও আমার কথা হেসেই উরিয়ে দিয়েছে, বলেছে: ‘অসম্ভব! ওরা জানে যে আমি একজনকে পছন্দ করি।’ ওর কথা শুনে মনে হয়েছিল, ও মনে হয় ঠিকই বলছে। আমার মনই ছোট; খালি আজেবাজে কথা চিন্তা করি। আমার ফ্রেন্ডটা হিজাব পড়ত তবে ফেইস খোলা থাকত। একদিন দেখি সে মুখ ঢাকা শুরু করেছে। এমনকি ক্লাসেও নাকি সে মুখ ঢাকে। খুবই বিস্মিত হলাম, খুশিও হলাম। পড়ে অবশ্য এর শানে নযুল জানতে পেরেছিলাম। তার এক ধার্মিক ফ্রেন্ড তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল, রিলেশন আছে জানার পরও! আমি অবশ্য সেই ছেলেটাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করি। কারণ সে ছাত্র অবস্থায় বিয়ে করতে চেয়েছে, তার নিয়ত খারাপ হলে সে কখনোই এমনটি করত না। কিন্তু আমার ওই ফ্রেন্ডের অন্য একটা পছন্দ থাকায় সে এই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল।

আসলে এতে আমি ছেলেটার কোনো দোষ দেখি না। ছেলে-মেয়ে একসাথে থাকলে, পড়াশুনা করলে বা কর্মক্ষেত্রে কাজ করলে সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক আর না হওয়াটা অস্বাভাবিক। আমাদের দেশের সিস্টেমটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, একটা ছাত্র বা ছাত্রী মেধাবী হলে কলেজ লেভেল পর্যন্ত আলাদা থাকা সম্ভব হলেও ভার্সিটি লেভেলে গিয়ে তাদেরকে একসাথে হতে বাধ্য করা হয়। অবশ্য সমস্যাটা ভার্সিটিতে নয় বরং অধিকাংশের ক্ষেত্রে এর আগেই শুরু হয়—কোচিং বা স্যারের বাসায় ছেলে-মেয়ে একসাথে পড়তে গিয়ে। বিষয়টা সত্যি দুঃখজনক।

এখনকার সময়ের অনেক ব্যায়বহুল ইংলিশ মিডিয়াম ও কিছু বাংলা মিডিয়াম স্কুলে ছেলে-মেয়েরা একসাথে পড়াশুনা করে। পরিবার থেকেও এরা নৈতিকতা সম্পর্কে তেমন কোনো শিক্ষা পায় না। আমি বলছি না সবাই, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব ছেলে-মেয়ে ভালো থাকে না। বয়ঃসন্ধিকালের এই সংকটময় মুহূর্তে ফ্রি মিক্সিং যে কত ভয়াবহ রূপ নিতে পারে তা চিন্তা করতেও ভয় হয়। ক্লাস এইটে পড়া আমার এক কাজিনের কাছে মাঝে মাঝে শুনতে হয়, তার অমুক ক্লাসমেটের এত নাম্বার বয়ফ্রেন্ড চলছে, অমুক অমুক ছেলেদের সাথে একসাথে পার্টিতে নেচেছে…আরও কত কী!

একটা ছেলে বা মেয়ে মাস্টার্স পাস করার আগে তাদেরকে বাচ্চা মনে করা হয়। বিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তাই করে না। আর ওদিকে ফ্রি মিক্সিংকে ফ্যামিলি থেকে খুব পজিটিভ বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অথচ সন্তানদের রুচির বিকৃতি ও মানসিক অবক্ষয়ের দিকে বাবা-মা কোনো নজরই দেয় না। আর ওদিকে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনকি এদের অনেকেই ড্রাগের দিকেও ঝুঁকে পড়ছে।

আর সমস্যাটা যে কেবল অবিবাহিতদের ক্ষেত্রেই হয়, তা কিন্তু নয়। অনেক বিবাহিতরাও বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে এধরনের সমস্যায় পড়ে। নারী বা পুরুষ কলিগের সাথে একত্রে কাজ করতে গিয়ে অন্য ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে একটা আর্টিকেলে এই কমন সমস্যাটাকে একটা ঘটনার মাধ্যমে তুলে ধরে মনোবিশেষজ্ঞের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে, আজকাল অনেক বিবাহিত পুরুষদেরই কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন নারী কলিগদের সাথে কাজ করতে হয়। দেখা যায় ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ভালোলাগা শুরু হতে থাকে এবং সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। প্রথমে শুধু চ্যাট, এরপর স্কাইপে কথাবার্তা এবং সবশেষে গভীর রাতে বাড়ি ফেরা। আর ওদিকে স্ত্রী বেচারি স্বামীর পথপানে চেয়ে না খেয়ে বসে থাকে। স্বামীরও স্ত্রীর জন্য খারাপ লাগে, তবে তার কেবলই মনে হয় তার স্ত্রী অনেক ব্যাকডেটেড, তার সাথে স্ত্রীর মিলে না। আর অন্যদিকে তার কলিগ কত স্মার্ট, কত আধুনিক, তার জন্য সেই আপ্রুপ্রিয়েট। আর এভাবেই পরকীয়া প্রেম চলতে থাকে। কেউ কেউ হয়তো স্ত্রীকে তালাক দিয়ে কলিগকে বিয়ে করে আর কেউ কেউ এভাবেই কাঁটিয়ে দেয় বাকি জীবন। পরিণতিতে পরিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শুরু হয় পারিবারিক অশান্তি। আমি বলছি না, সবার ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটবে। তবে এই চিত্রটা সত্যি খুব কমন হয়ে উঠছে। আপনারা একটু খেয়াল করলেই লক্ষ্য করবেন যে গত বিশ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে ডিভোর্সের হার কত আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এর অন্যতম একটি কারণ শিক্ষাঙ্গন ও কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা।  

ইসলামে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইসলাম জানে যে নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশার পরিণতি কোথায় গিয়ে গড়াতে পারে, তাই গোড়াতেই একে দমন করেছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে নারী-পুরুষ উভয়ের দৃষ্টি সংযত রাখতে বলেছেন। কুরআনে এসেছে, ‘মুমিনদেরকে বলুন , তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে । এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে । নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন । ঈমানদার নারীদেরকে বলুন , তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে ।’ (আন নূর, আয়াত: ৩০-৩১)  

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বড় কোন ফিতনা রেখে যাইনি।” (বুখারী ও মুসলিম)

সত্যি বলতে নারী যেমন পুরুষদের জন্য ফিতনা, তেমনি পুরুষেরাও নারীদের জন্য ফিতনা। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যিয়াহ বলেছেন, ‘When men mix with women, it is like mixing fire and wood.’ [al-Istiqaamah, 1/361]

শুধু ইসলামেই নয় অনেক বিশিষ্ট জনও একথার স্বীকার করেছেন যে নারী-পুরুষের মধ্যে ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ সম্ভব নয়। আইরিশ কবি Oscar Wilde বলেছেন, ‘Between men and women there is no friendship possible. There is passion, enmity, worship, love, but no friendship.’

নারী-পুরুষের মধ্যে স্বাভাবিক মেলামেশা, ভালো জানা, ভালো লাগা, ভালোবাসা…এরূপ বিভিন্ন মাত্রার সম্পর্ক যে আরও কতদূর যেতে পারে তা আমাদের ভালোভাবেই জানা হয়ে গেছে। আর অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের সাথে তাল রাখতে গিয়ে আমাদের আর কত দূর যেতে হবে তা চিন্তা করতেও দুঃখ লাগে। সত্যি বলতে, এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য অন্যতম যে পদক্ষেপটি নেওয়া যেতে পারে তা হলো নারী-পুরুষ কম্বাইন্ড এডুকেশন ও ওয়ার্কিং সিস্টেমকে বন্ধ করা। কথাটা হয়তো আপনাদের কাছে খুবই সেকেলে এবং অবাস্তব সম্মত মনে হবে। তবে আমি সত্যি বলছি, যারা কর্মক্ষেত্র বা শিক্ষাঙ্গনে আবেগ তাড়িত সম্পর্কে জড়ায় অথবা যারা যুদ্ধ করে এর থেকে মুক্ত থাকে, তারা উভয়ই একধরনের টর্চারের মধ্য দিয়ে যায়, যা তাদের কর্মদক্ষতা, প্রতিভার বিকাশে অনেক সময়ই একটা বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। কর্মক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের সেপারেশনটা এমন হওয়া উচিত যেন কাউকে ব্যক্তিগতভাবে জানা, চেনা বা ভালোলাগার কোনো সুযোগ তৈরি না হয়। আপনার যদি ইসলামি বিধান সম্পর্কে ধারণা থাকে তবে আপনি অবশ্যই আমার সাথে একমত হবেন। আমি এমন অনেক ভাইকে চিনি যারা শুধুমাত্র ফ্রি মিক্সিং থেকে বাঁচার জন্য লাখ টাকার চাকরি ছেড়ে ছাপোষা জীবন যাপন করছে। আমাদের উচিত আমাদের নিজেদের এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ফিতনা মুক্ত এমন একটি পরিবেশ গড়ে তোলা যেখানে তাদের পরিপূর্ণ মেধার বিকাশ ঘটা সম্ভব।    

আমি ছেলে-মেয়ে ফ্রি মিক্সিং এর বিরুদ্ধে। আমি নিজের বুদ্ধিজাত কোনো চেতনার ভিত্তিতে এই মত অবলম্বন করিনি, বরং ইসলাম সম্পর্কে যতটুকু জ্ঞান আছে তার ভিত্তিতে এবং সমাজের বর্তমান দশা দেখেই এমনটি করেছি। অনেকে আপত্তি তুলছে যে ছেলে-মেয়েদের ফ্রি মিক্সিং তো খারাপ কিছু নয়। নিজে ভালো তো জগত ভালো। কেউ কেউ বলছে যে, ফ্রি মিক্সিং এর মাধ্যমে ছেলে-মেয়ে পরস্পরকে চিনতে পারছে, জানতে পারছে। ফলে তারা পছন্দমতো বিয়ে করতে পারছে। এবং তারা হ্যাপি আছে।

আগের চেয়ে এখনকার সময় আরেঞ্জ ম্যারিজের হার অনেক কমেছে। যারা ধার্মিক, বোকা ধরণের এবং এক বা একধিকবার ছ্যাকা খেয়েছে তারাই এখন আরেঞ্জ ম্যারিজের ট্র্যাডিশনকে ধরে রেখেছে। সত্যি বলতে আমিও দেখেছি যে ক্লাসমেটদের সাথে অনেকের মধ্যে বিয়ে হয়েছে। তবে তাদের আফ্যেয়ার চলাকালীন সময়ে আমি তাদেরকে বিয়ে করে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের কেউই তা করেনি।  তারা ৫-৬ বছর সম্পর্ক রেখেছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সম্পর্ক ভ্যালিড হতে পারে, কিন্তু ইসলামে এধরনের বিবাহপূর্ব সম্পর্কের কোনো ভ্যালিডিটি নেই।

রাসূল (সা) বলেছেন, ‘মানুষ তার সমগ্র ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে জিনা করে। দেখা হচ্ছে চোখের জিনা,ফুঁসলানো কণ্ঠের জিনা, তৃপ্তির সাথে কথা শোনা কানের জিনা, হাত দিয়ে স্পর্শ করা হাতের জিনা, কোনো অবৈধ উদ্দেশ্যে পথ চলা পায়ের জিনা, এভাবে ব্যভিচারের যাবতীয় ভূমিকা যখন পুরোপুরি পালিত হয়, তখন লজ্জাস্থান তার পূর্ণতা দান করে অথবা পূর্ণতা দান থেকে বিরত থাকে’ (বুখারি, মুসলিম ও আবু দাউদ)।

যাদের মধ্যে বিবাহপূর্ব ভালোবাসার সম্পর্ক আছে তারা অবশ্যই উল্লিখিত ধরণগুলোর কোনো না কোনো একটি ধরণের যিনায় লিপ্ত।

পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পর থেকে ইসলাম নারী-পুরুষদের মেলামেশার ব্যাপারে খুবই স্ট্রিক্ট। কুরআনে এসেছে,

‘হে নবী আপনি আপনার পত্নী গনকে ও কন্যা গনকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগনকে বলুন তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবেনা, আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (আল আহযাব, আয়াত-৫৯)

কোনো নারী বা পুরুষকে দেখে অন্তরে কুমন্ত্রণা আসার আশঙ্কা থাকলে তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলীকে বললেনঃ “আলী,দ্বিতীয়বার দৃষ্টি দিয়ো না , কারণ প্রথমবার তোমাকে ক্ষমা করা হবে, কিন্তু দ্বিতীয়বার নয়। (তিরমিযি, আবু দাউদ; আলবানীর মতে হাসান)

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রা) থেকে বর্ণিত, ফযল ইবনে আব্বাস (রা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে সাওয়ারীর উপর উপবিষ্ট ছিল। এমন সময় খাস’আম গোত্রের এক মহিলা তাঁর কাছে ফতওয়া জিজ্ঞেস করার জন্য আসলেন। ফযল (রা) তার দিকে তাকাল এবং মহিলাও ফযলের দিকে তাকাতে লাগলেন । তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফযলের(রা) চেহারা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন।

যেসব ভাইয়েরা অবাধে পর্ণগ্রাফি দেখেন, তাদের এই হাদীসগুলো নিয়ে একটু চিন্তা করে দেখা উচিত। আজকাল দেখা যায় অনেক বোনেরা বোরকা পরে ছেলেদের সাথে অবাধে মেলামেশা করছে, ছেলেদের সাথে হাতাহাতি পর্যন্ত করছে। তাদের চিন্তা করে দেখা উচিত যে, যেই বিষয়টাকে বন্ধ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা শরীরের পর্দা, দৃষ্টির পর্দার বিধান নাযিল করলেন সেটাই যদি বন্ধ না করা হয়, তাহলে আর এই পর্দার প্রয়োজন কী। আসলে কি আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পর্দা করছেন, নাকি এতে অন্য কোনো উদ্দেশ্য মিশ্রিত হয়েছে—তা একটু চিন্তা করে দেখা উচিত।

আপনাদের পছন্দ হোক আর না হোক যারা বিবাহপূর্ব সম্পর্ককে মদদ দেয়, আমি সোজাসাপ্টা কথায় বলতে চাই যে তারা মূলত ব্যাভিচারকেই প্রশ্রয় দিচ্ছে। আর যারা ব্যভিচারকে প্রশ্রয় দেয় তাদের সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে:

“যারা পছন্দ করে যে ঈমানদারদের মধ্যে বেভিচার প্রসার লাভ করুক,তাদের জন্য ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রনা দায়ক শাস্তি রয়েছে,আল্লাহ্ জানেন ,তোমরা জান না। (সুরা আন নুর-১৯)

তাছাড়া আমাকে কেউ কেউ নোমান আলী খান বা অন্যান্য বিশিষ্ট আলীমদের কথা বলেছেন। তারা বলতে চাচ্ছেন যে, এই আলিমরা এত জানেন কিন্তু তারা তো এমন ধরণের অবাস্তবসম্মত কথা বলেন না।

নোমান আলী খান যেখানে অবস্থান করেন সেখানে থেকে ‘ফ্রি মিক্সিং বন্ধ করুন’ একথা বলা আর না বলা সমান। তবুও তার মুখ থেকে আমি রিলেশনের ব্যাপারে নেগেটিভ কথা শুনেছি। তিনি বলেছেন, আপনাদের যদি কাউকে ভালোলাগে তবে তার বাবার কাছে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিন। শুধু শুধু ঝুলিয়ে রাখবেন না।…

তাছাড়া এমন এমন অনেক ঘটনা আমি জানি যেখানে দুজন ছেলে-মেয়ে ভালোবেসে বিয়ে করেছে কিন্তু বিয়ের ৫ বছর/১০ বছর/ ১৫ বছর পর পরনারী বা পরপুরুষের আসক্ত হয়ে পড়েছে। এবং এদের অনেকেরই শেষ পরিণতি হয়েছে ডিভোর্স। প্রফেসর ইসমাঈল আবদ’ আল বারি’ কর্তৃক প্রায় ১৫০০ পরিবারের ওপর চালানো অন্য এক জরিপের ফলাফল ছিল এমন যে শতকরা ৭৫ ভাগ “ভালবেসে বিয়ে” এর পরিণতি ছিল ডিভোর্স যেখানে “প্রথাগত বিয়ে” এর ক্ষেত্রে শতকরা ৫ ভাগেরও কম।

আপনারা স্বীকার করুন আর না করুন আমার মতে, ফ্রি মিক্সিং এর মাধ্যমেই আমাদের দেশে জন্ম হচ্ছে অসংখ্য ঐশীদের। লিভ টুগেদার এখন খুবই স্বাভাবিক। স্ত্রীর জায়গায় স্ত্রী থাকছে আর সম্পর্ক গড়ে উঠছে বহু নারীর সঙ্গে।

আমি জানি যে আল্লাহ তায়ালা এমন কিছু সৃষ্টি করেননি যার পুরোটাই খারাপ। ভালো কিছুই নেই। তার মানে আল্লাহ তায়ালা যেসব জিনিসকে হারাম ঘোষণা করেছেন সেগুলোর মধ্যেও কিছু না কিছু কল্যাণ আছে। এর উদাহরণ আমরা কুরআনেও দেখতে পাই। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন:

‘তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। ’ (আল বাকারা, আয়াত-২১৯)

অর্থ মদের মধ্যেও কিছু ভালো আছে, কিন্তু তারপরও এটি হারাম। কারণ কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণ বেশি।

ঠিক তেমনিভাবে ফ্রি মিক্সিং এর কিছু ভালো দিক থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু বিষয়টা যেহেতু ইসলামে নিষিদ্ধ এর মানে ভালর চেয়ে খারাপ অনেক বেশি। তবে যত যুক্তি বুদ্ধির কথাই বলি না কেন, আমিও হয়তো ফ্রি মিক্সিংকে সাপোর্ট করতাম। যুক্তি দিয়ে তর্ককে অনেক দূর এগিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু আল্লাহর হারাম ঘষিত বিধানকে হালাল বলে দেওয়া যাবে না। তর্ককে এগিয়ে নেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়, আমার উদ্দেশ্য শুধু আল্লাহর বিধানটিকে আপনাদের কাছে স্পষ্ট করে দেওয়া। তাছাড়া একজন সচেতন মানুষ হিসেবেও আমি কখনোই ফ্রি মিক্সিংকে লাইসেন্স দিয়ে দিতে পারি না। কখনোই না।

– সানজিদা শারমিন

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

৪টি মন্তব্য

  1. কোনো মেয়ে বা মহিলা এতো সুন্দর করে লিখবে আমি এটা কল্পনাতেও আনি নাই। লেখাটা অনেক ভালো লাগলো। স্পষ্ট ভাষা এবং চমৎকার কথা। আমরা একটা সুস্থ-স্বাভাবিক সমাজে বাস করতে চাই।
    তবে কিছু নিচু মানসিকতার লোকের কাছে একথা গুলো খারাপ লাগা স্বাভাবিক।

  2. আমি একজন স্টুডেন্ট। গ্রামে পড়াশোনা করি। পড়ার খাতিরে অনেকে আমাকে এসএমএস করে বা আমিও করি।
    আমার প্রশ্ন, পড়া হোক বা অন্যকিছু কারো সাথে চ্যাট করলে কি তা ফ্রি মিক্সিং এর অংশ হবে??(অযথা নয়)

    বিঃদ্রঃআমি একজন মেয়ে।

  3. আমি একজন স্টুডে। গ্রামে পড়াশোনা করি। পড়ার কহাতিরে অনেকে আমাকে এসএমএস করে বা আমিও করি।
    আমার প্রশ্ন, পড়া হোক বা অন্যকিছু কারো সাথে চ্যাট করলে কি তা ফ্রি মিক্সিং এর অংশ হবে??(অযথা নয়)???

    বিঃদ্রঃআমি একজন মেয়ে।

  4. নিজের মন নিজের বশে না থাকলে এই সব দরকার । শরীর এর সাথে বিবেক টাকেও কালো পর্দা দিয়ে না ঢেকে জ্ঞান চক্ষু খোলা রাখলেই চলবে । আর চোরের ভয়ে মাটিতে যেমন ভাত খাওয়া উচিত না তেমন ই অন্য জন দেখবে এটা ও ভাবা উচিত না

মন্তব্য করুন

Back to top button