সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

গৃহযুদ্ধের দাবানলে জ্বলছে সিরিয়া : মুক্তির পথ কোথায়?

আজ থেকে প্রায় ২ বছর আগে সিরিয়াতে আরব বসন্তের ঢেউ লাগে। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আসাদ পরিবারের শাসনের বিরুদ্ধে সিরিয়ার মানুষ ফুঁসে উঠে। কিন্তু সে বসন্তের ঢেউ এখনো আলোর মুখ দেখেনি, বরং বিরাজ করছে গ্রীষ্মের অস্থিরতা। মিসর ও তিউনিসিয়ার মত এখানে বিনা রক্তপাতে ফল নির্ধারণের মত কিছুই ঘটেনি। লিবিয়ার মত এখানকার বিদ্রোহ সশস্ত্র যুদ্ধে রূপান্তরিত হলেও সফলতা এখনো অধরা। বরং দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। একদিকে বাশার আল-আসাদের অনমনীয়তা ও তাঁর প্রতি রাশিয়াসহ কট্টর শীআপন্থী হিযবুল্লাহ এবং তার পৃষ্ঠপোষক ইরানের সমর্থন, অন্যদিকে বিদ্রোহীদের প্রতি সঊদী, কুয়েত এবং তুরস্কের সমর্থন এই যুদ্ধকে এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আর হিযবুল্লাহ্র প্রত্যক্ষ যোগদান এই যুদ্ধকে শী‘আ-সুন্নী যুদ্ধে পরিণত করে দিয়েছে। ফলত আজ মধ্যপ্রাচ্যের সর্বত্র শী‘আ-সুন্নী উত্তেজনা বিরাজ করছে। মধ্যপ্রাচ্য পরিণত হয়েছে এক জ্বলন্ত অগ্নিগর্ভে। হাযার হাযার আবাল বৃদ্ধ বণিতার ছোপ ছোপ রক্তে সিরিয়ার মাটি আজ রঞ্জিত। লাখ লাখ মানুষ গৃহহারা হয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। সরব বিশ্ব মোড়লরা নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তোড়জোড় যা করা হচ্ছে তা নামে মাত্র, এতে আন্তরিকতার লেশমাত্র নেই। একটু বাড়িয়ে বললে ভুল হবেনা যে, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে ইচ্ছাকৃত ভাবে জিইয়ে রাখা হচ্ছে। সিরিয়ার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মুসলিম বিশ্বকে এক দীর্ঘস্থায়ী সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাশার আল-আসাদ এবং তার আলাভী সম্প্রদায় ও তার সহযোগী ইরান এবং হিযবুল্লাহ সম্পর্কে মুসলিম বিশ্বকে আরেকবার ভাবতে হচ্ছে। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে সিরিয়ার বর্তমান আবস্থা বিশ্লেষণ করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।       

কুরআন ও হাদীছে সিরিয়ার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব :

রাসূল (ছাঃ) সিরিয়ার জন্য বরকতের দো‘আ করেছেন। তিনি বলেন, اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي شَأْمِنَا اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي يَمَنِنَا ‘হে আল্লাহ! আমাদের সিরিয়ায় বরকত দাও। হে আল্লাহ! আমাদের ইয়ামেনে বরকত দাও। এই দো‘আ তিনি তিন বার করেন (বুখারী,  মিশকাত হা/ ৬২৬২)। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, طُوبَى لِلشَّامِ قِيلَ وَلِمَ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ إِنَّ مَلَائِكَةَ الرَّحْمَنِ بَاسِطَةٌ أَجْنِحَتَهَا عَلَيْهَا ‘সিরিয়ার জন্য সুসংবাদ। জিজ্ঞেস করা হ’ল কেন হে রাসূল (ছাঃ)? তিনি বলেন, কেননা আল্লাহ্র ফেরেশতারা এর উপর তাদের পাখা বিছিয়ে রাখে’ (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/ ৬২৬৪)। 

রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, سَيَصِيرُ الْأَمْرُ إِلَى أَنْ تَكُونُوا جُنُودًا مُجَنَّدَةً جُنْدٌ بِالشَّامِ وَجُنْدٌ بِالْيَمَنِ وَجُنْدٌ بِالْعِرَاقِ قَالَ ابْنُ حَوَالَةَ خِرْ لِي يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ أَدْرَكْتُ ذَلِكَ فَقَالَ عَلَيْكَ بِالشَّامِ فَإِنَّهَا خِيرَةُ اللَّهِ مِنْ أَرْضِهِ يَجْتَبِي إِلَيْهَا خِيرَتَهُ مِنْ عِبَادِهِ فَأَمَّا إِنْ أَبَيْتُمْ فَعَلَيْكُمْ بِيَمَنِكُمْ وَاسْقُوا مِنْ غُدُرِكُمْ فَإِنَّ اللَّهَ تَوَكَّلَ لِي بِالشَّامِ وَأَهْلِهِ ‘পরিস্থিতি তার কাজের ধারা অনুযায়ী চলতে থাকবে যতক্ষণ তোমরা তিনটি বাহিনীতে পরিণত না হও। একটি বাহিনী শামের, আরেকটি বাহিনী ইয়ামানের এবং অপরটি ইরাকের। ইবন হাওয়ালাহ (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! যদি আমি সেই দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকি তবে আমার জন্য একটি নির্ধারণ করে দিন। উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমার শামে যাওয়া উচিত হবে। কারণ এটি আল্লাহ্র ভূমিসমূহের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম এবং তাঁর সবচেয়ে ভাল বান্দারাই সেখানে জড়ো হবে। আর যদি তুমি তা না চাও তবে তোমার ইয়ামান যাওয়া উচিত এবং সেখানকার কূপ থেকে পানি পান করা উচিত। কারণ আল্লাহ আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি শাম এবং তার মানুষের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন’ (আহমাদ ৪/১১০, আবুদাঊদ হা/২৪৮৩, মিশকাত হা/ ৬২৬৭)। তিনি আরো বলেন, إِنَّ فُسْطَاطَ الْمُسْلِمِينَ يَوْمَ الْمَلْحَمَةِ بِالْغُوطَةِ إِلَى جَانِبِ مَدِينَةٍ يُقَالُ لَهَا دِمَشْقُ مِنْ خَيْرِ مَدَائِنِ الشَّامِ ‘কুফফার মুশরিকদের সাথে মহাযুদ্ধের দিন (কিয়ামতের পূর্বের কোন যুদ্ধ বা দাজ্জালের সাথে যে যুদ্ধ হবে) মুসলমানদের তাঁবু (ফিল্ড হেডকোয়ার্টার) ‘গুতা’ নামক স্থানে হবে যা একটি শহরের পাশে আবস্থিত। যার নাম দিমাশক যা শাম বা সিরিয়ার শ্রেষ্ঠ নগরী’ (আবুদাউদ, মিশকাত হা/৬২৭২)। উল্লেখ্য যে, ‘গুতা’ নামক জায়গাটা বর্তমানে সিরিয়ার রাজধানী দামেশক থেকে ৮ কিঃমিঃ পূর্বে আবস্থিত। এখানকার মওসুম শুষ্ক ও গরম (তিসরী জঙ্গে আযীম আওর দাজ্জাল, মুহাম্মাদ আসেম উমর, ফরিদ বুক ডিপো, দিল্লী, পৃ, ৬৯)। উপরের হাদীছগুলো প্রমাণ করে শাম বা সিরিয়া একটি বরকতময় জায়গা।   

অতীত ও বর্তমানের আলোকে সিরিয়া : 

সিরিয়া (আরবীতে السورية আস-সূরিয়া) এশিয়ার মধ্যপ্রাচ্যের একটি রাষ্ট্র। এর দক্ষিণে তুর্কী ও পূর্বে ইরাক। ভূমধ্যসাগরের নীল জলরাশি এর পশ্চিম পাদদেশে এসে আছড়ে পড়েছে। উত্তরে রয়েছে এরই খন্ডিত অংশ ইসরায়েল, লেবানন, জর্ডান ও ফিলিস্তীন। আরবীতে ‘শাম’ বললে বর্তমান সিরিয়া, জর্ডান, ইসরায়েল, লেবানন ও ফিলিস্তীনের কিছু অংশকে বুঝায়। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্রাজ্যবাদী ফ্রান্স তাদের দখলদারী টিকিয়ে রাখার জন্য একে টুকরা টুকরা করে। এর সরকারী নাম আরব প্রজাতন্ত্রী সিরিয়া (الجمهورية العربية  السورية)। আয়তন মোট ১,৮৫,১৮০ বর্গ কি.মি.। জনসংখ্যা  ২০,৩১৪,৭৪৭। সিরিয়া সার্বভৌম প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় ১৭ এপ্রিল ১৯৪৬ সালে। জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর। তখন থেকেই পৃথিবীর মানচিত্রে এ দেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে৷ সরকারী ভাষা আরবী। এখানকার প্রায় চার-পঞ্চমাংশ লোক আরবী ভাষাতে কথা বলে। সিরিয়াতে প্রচলিত অন্যান্য ভাষার মধ্যে আদিজে ভাষা, আরামীয় ভাষা, আর্মেনীয় ভাষা, আজারবাইজানি ভাষা, দোমারি ভাষা (রোমানি ভাষা), কুর্দী ভাষা এবং সিরীয় ভাষা উল্লেখযোগ্য। আন্তর্জাতিক কাজকর্মে ফরাসি ভাষা ব্যবহার করা হয়। মুসলিম সংখ্যা ৯৫%। তন্মধ্য ৮৫% সুন্নী এবং ১৬% শী‘আ। মুদ্রার নাম সিরিয়ান পাউন্ড। শিক্ষিতের হার ৭৫%।

সিরিয়া এক ঐতিহাসিক জনপদ। সিরিয়ায় জনবসতি শুরু হয় ৪৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। ইসলামের ইতিহাসে সিরিয়া একটি বিরাট অংশ দখল করে আছে। এই ভূমিতেই রোমানদের পরাজিত করে ইসলাম বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়। উমাইয়া খিলাফতের গোড়াপত্তনও এখানে হয়। বহুদিন যাবত দামেশক ইসলামী খিলাফতের রাজধানী ছিল। এখানে বসেই মুসলমানরা একসময় অত্যন্ত প্রতাপের সাথে অর্ধ জাহান শাসন করেছে। এই মাটিতেই সিংহ শার্দুল ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী ইসলামের দুশমন ক্রুসেডারদের নাকানি চুবানি খাইয়ে ছেড়েছেন। এই মাটিতে বসেই আপোষহীন মুজাদ্দিদ ও মুহাদ্দিছ ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) ও নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) ইসলামের বিশুদ্ধতাবাদী আন্দোলনের শক্তিমান প্রবল দ্বীপ্তিশিখা প্রজ্জ্বলন করেছেন। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে আরব জাতীয়তাবাদের উত্থানও এখানেই ঘটে। এরই পথ ধরে দীর্ঘ সংগ্রামের পর সিরিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। ৭০-এর দশকে অনেকটা নাটকীয়ভাবে সিরিয়ার শাসন ক্ষমতায় আসাদ পরিবারের আগমন ঘটে। ইসরায়েলের কাছে গোলান মালভূমি হারানো নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আল-আতাসি তৎকালীন সেনাপ্রধান হাফিয আল-আসাদকে সকল সরকারী ও সামরিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। সরে দাঁড়াবার নির্দেশ পাবার পর হাফিয আল-আসাদ ও মুস্তাফা ত’লাস বাথ পার্টির অভ্যন্তরে একটি অভ্যুত্থান ঘটান। ফলস্বরূপ রাষ্ট্রপতি আল-আতাসি, বাথ মহাসচিব সালাহ জাদীদ ও অন্যান্য সহযোগী সমেত কারান্তরীণ হন। এই অভ্যুত্থানটিকে সাধারণ সিরীয়রা স্বাগত জানিয়েছিল। যা সিরিয়ার ‘সংশোধনী বিপ্লব’ (কারেক্টিভ রেভুল্যুশান) নামে খ্যাত হয়। এইভাবে ১৯৭১ সালে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশারের পিতা হাফিয আল-আসাদ। তখন থেকে সিরিয়ায় শুরু হয় আসাদ পরিবারের শাসন। হাফিজ আল আসাদ তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ২৯ বছর প্রতাপের সাথে সিরিয়া শাসন করেছেন। প্রেসিডেন্ট আসাদের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হিসেবে তাঁর পুত্র বাশার আল-আসাদ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ১০ জুন ২০০০ সালে। অতঃপর ২০১১ সালে তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিশর ও ইয়েমেনে যে গণজাগরণ, গণঅভ্যুত্থান তথা ‘আরব বসন্ত’ শুরু হয় তার ছোঁয়া লাগে সিরিয়ায়। মূলতঃ সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সুন্নী হলেও শাসন ক্ষমতায় তাদের কোন অংশীদারিত্ব নেই। সেখানে তারা বহুদিন থেকে নিকৃষ্ট বাতেনী ফিরকা নুসাইরিয়াদের নির্যাতনের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। ইতিপূর্বে তাদের অনেক বিদ্রোহকে অস্ত্রের জোরে নির্মমভাবে দমন করা হয়েছে। এভাবেই এক ভয়াবহ যুদ্ধের উৎপত্তি ঘটে সিরিয়ায়।

জাতিসংঘের মতে সিরিয়ায় গত দু’বছরে সংঘাত-সহিংসতার হাত থেকে জান বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে যত মানুষ তাঁদের সংখ্যা এখন ১০ লক্ষে গিয়ে পৌঁছেছে। আর দেশের ভেতরে গৃহহারা-ঘরছাড়া হয়েছেন আরো লক্ষ লক্ষ মানুষ। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা মার্চ মাসের এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে  এ পর্যন্ত ৬০ হাযারের অধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে যার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য নারী ও শিশু। সিরিয়ার বর্তমান সহিংসতার কারণে সেখানে খাদ্য সাহায্য পৌঁছানো যাচ্ছে না। ফলে ২২ মাস ধরে চলা সংঘর্ষে ১০ লাখ মানুষ খাদ্যাভাব ও অসহায় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। সিরিয়ার চলমান সংকট নিরসনে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথমে ঝানু কূটনীতিক কফি আনানকে সিরিয়া সংকট সমাধানে জাতিসংঘ ও আরব লীগের বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তিনি সংকট সমাধানে ছয় দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’ নিয়ে এগিয়ে যান। সংকট সমাধানে দেশটির উপর অবরোধ আরোপের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কয়েকবার প্রস্তাব তোলা হয়। কিন্তু চীন ও রাশিয়ার ভেটোর কারণে তা নাকচ হয়ে যায়। সর্বশেষ প্রস্তাব তৈরী করেছিল যুক্তরাজ্য। এটি পাশ হলে দেশটিতে বাইরের সামরিক হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হত। কিন্তু পুনরায় ভেটো দেয়ায় এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ফলে কফি আনানের ছয় দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’ কূটনৈতিক সমাধিতে পরিণত হয়। উত্তাল সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় কফি আনানের ব্যর্থতার পর জাতিসংঘ ও আরব লীগের বিশেষ দূতের দায়িত্ব নিয়েছেন লাখদার ব্রাহিমি। অশান্ত সিরিয়ায় শান্তির বার্তা আনতে তিনি নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছেন। সিরিয়া সরকার ও বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে চলেছেন। পরোক্ষভাবে পক্ষ নেওয়া দেশগুলোর সাথে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সর্বশেষ জেনেভায় অনুষ্ঠিত হয় ত্রিপক্ষীয় আলোচনা। কিন্তু তাতেও কোন ফল হয় নি। এদিকে কট্টরপন্থী শী‘আ গ্রুপ হিযবুল্লাহও এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধের আগুনে আরো ঘি ঢেলেছে। ফলত যুদ্ধটি সকল পক্ষেরই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং নিছক রাজনৈতিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে শী‘আ-সুন্নী যুদ্ধে রূপ নেয়। আজ পুরো মুসলিম দুনিয়া থেকে সুন্নী মুজাহিদরা নিজেদের ভাইদের রক্ষার জন্য শামে এসে জমা হচ্ছে। ঠিক শী‘আরাও এভাবে এখানে আসছে। পরিস্থিতি আজ এমন হয়ে গেছে যে, শামে যেন শী‘আ-সুন্নী বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এদিকে বিশ্ব মোড়লরা নিজ নিজ স্বার্থকে সামনে রেখে এই যুদ্ধ নিয়ে ভয়াবহ খেলায় মেতে উঠেছে। আমেরিকা বাশার আল-আসাদের পতন চাইলেও সে তার পরিবর্তে তাঁবেদার সরকার চায়। তাই সিরিয়ার ‘ফ্রী সিরিয়ান আর্মি’ সে সমর্থন করলেও অস্ত্র সহযোগিতা দিচ্ছে না। কেননা এই অস্ত্র সেখানে যুদ্ধরত ইসলামপন্থীদের হাতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়ার সাথে সিরিয়ার বরাবর ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। বাশারের পিতা হাফেয আল-আসাদ স্নায়ুযুদ্ধকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পরবর্তীতে রাশিয়ান ফেডারেশনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং বাশার এই বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করেছেন। ফলে রাশিয়া এই যুদ্ধে একচেটিয়াভাবে সিরিয়ার পক্ষ নিয়েছে। আর অন্যদিকে ইরান শুধু সমর্থন নয় বরং হিযবুল্লাহকে সরাসরি মাঠে নামিয়েছে। সঊদী আরবও পূর্ণভাবে বিদ্রোহী সুন্নীদের আর্থিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করছে। ফলত গৌণভাবে শী‘আ-সুন্নী যুদ্ধ এবং বাহ্যত বিশ্বমোড়ল দেশগুলোর ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরিণত হওয়া এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কি হতে পারে তা নিয়ে মুসলিম বিশ্বে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কি তা আন্দাজ করা মুশকিল হলেও এটা নিশ্চিত যে, এই যুদ্ধে যে পক্ষের জয় হবে তার উপর ভবিষ্যৎ বিশ্ব রাজনীতিরও অনেক কিছুই নির্ভর করছে।  

বাশার আল-আসাদ ও তার সম্প্রদায়ের আসল চেহারা :

বাশার আল-আসাদ (بشار الأسد )-এর জন্ম ১৯৬৫ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর। তিনি সাবেক সিরীয় রাষ্ট্রপতি হাফেয আল-আসাদের পুত্র ও রাজনৈতিক উত্তরসূরী। আল-আসাদ পরিবার সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিসরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিবারটি মূলত সিরিয়ার  সংখ্যালঘু আলাবী বা নুসাইরিয়া সম্প্রদায় হতে আগত, যার আদিবাস মূলত লাতাশিয়া প্রদেশের ক্বারদাহা শহরে। আরবীতে ‘আল-আসাদ’ শব্দের অর্থ ‘সিংহ’। ১৯৭০ সালে এই পরিবার সিরিয়ার রাজনীতিতে ‘সংশোধনী বিপ্লব’ (কারেক্টিভ রেভুল্যুশান) নামক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আগমন করে।

এরপর থেকে আজ পর্যন্তসিরিয়ায় ক্ষমতাসীন বাশার আল-আসাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ সিরিয়ার সামরিক অসামরিক বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী ও নেতৃস্থানীয় পদসমূহে আসীন রয়েছেন। পরিবারের সদস্য ছাড়াও মূল আলাব সম্প্রদায়ের প্রচুর মানুষও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ অধিকার করে আছেন। বাশার আল-আসাদের নেতৃত্বাধীন বাথ পার্টি বর্তমানে সাংবিধানিকভাবে সিরিয়ার সরকারী দল। ২০০০ সালে রাষ্ট্রপতিত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত বাশার সিরিয়ার রাজনীতিতে তেমনভাবে জড়িত হননি। বরং ক্ষমতার  রাজনৈতিক কার্যক্রম বলতে তিনি এর আগে সিরিয়ার কম্পিউটার সমিতির প্রধান ছিলেন। উল্লেখ্য, এই কম্পিউটার সমিতির অবদানেই ২০০১ সালে সিরিয়ায় ইন্টারনেটের বিস্তার ঘটে। বাশার আল-আসাদ ২০০১ সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি পদে স্থায়িত্ব অর্জন করেন। প্রথমে আমরা তাদের সম্প্রদায় সম্পর্কে আলোচনা করব।

বাশার আল-আসাদ নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের অধিবাসী। মূলতঃ নুসাইরিয়া একটি বাতেনী ফিরকা। এদের আকীদা অত্যন্ত জঘন্য। এমনকি আনেক শী‘আও এদের মুসলিম মনে করেনা। বর্তমান তাদের অধিকাংশ লোকের বসবাস সিরিয়ার দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল, লেবাননের উত্তরাঞ্চল, ইরান, তুর্কিস্তান ও কুর্দিস্তানে তাদের বসবাস রয়েছে। এই ফিরকার বিভিন্ন নাম রয়েছে, যার কতিপয় তারা পছন্দ করে, কতিপয় অপছন্দ করে। যেমন- আন-নুসাইরিয়া, আলাভী, সূরাহ্কা প্রমুখ।

নুসাইরিয়দের উত্থান :

শী‘আদের ধারণা সব যুগে একজন ইমাম থাকেন যিনি মানুষের যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন। কোন যুগ ইমামবিহীন থাকা সম্ভব নয়, অন্যথায় মানুষের জীবন অচল হতে বাধ্য। রাজতন্ত্রের ন্যায় ইমামের ছেলে ইমাম হবেন, অন্য কেউ নয়। এ হিসাবে শী‘আদের একাদশ ইমাম হাসান আসকারী নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যাওয়ার কারণে ইমামিয়া আক্বীদা চরম সংকটের সম্মুখীন হয়। কেউ হাসান আসকারির ছেলে ধারণা করে নেন এক ব্যক্তিকে, যার নাম মুহাম্মাদ। যেহেতু বাস্তবে ছিল না, তাই তারা বলেন জন্মের পরই সে গর্তে বা সমাধিগৃহে আশ্রয় নিয়েছে। অপর দল বাস্তবতা মেনে নিয়ে তার সন্তানের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন। এভাবে তাদের মধ্যে বিভিন্ন দল-উপদলের সৃষ্টি হয়। দ্বাদশ ইমাম যেহেতু বাহ্যিক ছিলেন না, তাই যারা অদৃশ্য ইমাম মানে তারা ‘বাব’ মতবাদ উদ্ভাবন করেন। আর ‘বাব’ হ’ল আহলে বাইতের খাস ব্যক্তি, তিনি অদৃশ্য ইমাম ও মানুষের মাঝে মধ্যস্থতা করেন।

এ কুসংস্কারের জন্য তারা একটি জাল হাদীছ পেশ করে। তাদের ধারণায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন : أنا مدينة العلم وعلى بابها فمن أراد العلم فليأته من بابه   ‘আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী হল তার দরজা। সুতরাং যে ব্যক্তি ইলম অন্বেষণ করে, সে যেন অবশ্যই আলীর দরজায় আসে’ (হাদীছটি জাল, সিলসিলা যঈফাহ, হা/২৯৫৫)। প্রথম ‘বাব’ আলী ইব্‌ন আবু তালিব, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ‘বাব’ ছিলেন। দ্বিতীয় ‘বাব’ সালমান ফারসী (রাঃ), তিনি আলী ইবনে আবু তালিবের ‘বাব’ ছিলেন। এভাবে তারা একাদশ ইমাম হাসান আসকারী পর্যন্ত ‘বাব’ বা দ্বার নির্ধারণ করে। অতঃপর দ্বাদশ ইমামের ‘বাব’ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। নুসাইরিদের দাবী দ্বাদশ ইমাম মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আসকারির কোন ‘বাব’ ছিল না, বরং ‘বাব’-এর ধারাটি একাদশ ইমাম হাসান আসকারি পর্যন্ত চলমান ছিল, অর্থাৎ তিনি ‘বাব’ ছিলেন আবু শুআইব মুহাম্মদ ইব‡‌ন নুসাইরের। এ থেকে নুসাইরিয়া ও দ্বাদশ ইমামিয়ার মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। তাই মুহাম্মদ ইবনে নুসাইর ও তার দল শী‘আ দ্বাদশ ইমামিয়া থেকে বের হয়ে যায়। আর এভাবেই নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়।

নুসাইরিয়াদের বিভ্রান্তিকর আক্বীদা :

১, নুসাইরিরা সম্প্রদায় আলী (রাঃ)-এর প্রভুত্বে বিশ্বাস করে। খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদের ন্যায় এক সত্তা তিন সত্তার মধ্যে দেহ ধারণ করার মতবাদ নুসাইরিয়দের ধর্মে রয়েছে। তারা মনে করে এ তিন সত্তা মূলত এক সত্তা ও চিরস্থায়ী।

নুসাইরিয়দের তিন সত্তার নীতি খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদের সমতুল্য। তারা তিন সত্তার জন্য তিনটি শব্দ ব্যবহার করে। যথা : (ع.م.س ) তারা বলে, এ তিন সত্তার মধ্যে আল্লাহ দেহধারণ করেছেন।

এক. আলী, তার জন্য তারা (المعنى ) শব্দ ব্যবহার করে। দুই. মুহাম্মাদ, তার জন্য তারা (الاسم ) শব্দ ব্যবহার করে। তিন. সালমান, তার জন্য তারা (الباب ) শব্দ ব্যবহার করে। ع দ্বারা আলি, م দ্বারা মুহাম্মাদ ও س দ্বারা সালমান ফারসি উদ্দেশ্য (নুসাইরিয়া সম্প্রদায়, ডঃ গালিব ইবন আলী আওয়াজী, অনুবাদ, সানাউল্লাহ নাজির আহমাদ, ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ পৃ.১৯)

২,  আলী মুহাম্মাদকে সৃষ্টি করেছেন, মুহাম্মাদ সৃষ্টি করেছেন সালমান ফারসিকে, সালমান ফারসি সৃষ্টি করেছেন পঞ্চ ইয়াতীমকে, যাদের হাতে আসমান-যমীনের নিয়ন্ত্রণ। তারা হলেন-

১. মিকদাদ : তিনি মানুষের রব ও সৃষ্টিকর্তা। তার দায়িত্বে রয়েছে বিদ্যুৎ চমক, মেঘের গর্জন ও ভূমিকম্প।

২. আবুদ দার (আবু যর গিফারী) : তিনি নক্ষত্র ও তারকারাজির কক্ষপথসমূহ নিয়ন্ত্রণ করেন।

৩. আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা আল-আনছারী : তিনি বাতাসের নিয়ন্ত্রক ও মানুষের রূহ কব্জাকারী।

৪. উছমান ইবনে মায‘উন : তিনি শরীরের জ্বর, পেট ও মানুষিক রোগ নিয়ন্ত্রণকারী।

৫. কুন্বর ইবনে কাদান : তিনি মানুষের শরীরে রূহ সঞ্চারকারী (ঐ, পৃ. ৫৪)।  

এসব আক্বীদা প্রমাণ দেয় তারা ইসলামের নাম ব্যতীত কিছুই গ্রহণ করেনি। এ সবই কুফরী আক্বীদা। এর যে কোনো একটি আল্লাহ্র দ্বীন থেকে বের করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।

৩. তাদের এক গুরুত্বপূর্ণ আক্বীদা হ’ল, তারা পুনর্জন্মে বিশ্বাসী। তারা এ বিশ্বাসের অন্তরালে কিয়ামত, পরকাল, প্রতিদান ও হিসাব-নিকাশ অস্বীকার করে। তাদের নিকট শরীরই জান্নাত বা জাহান্নাম। তারা সুন্দর, সুখী ও ভালো শরীরে প্রস্থান করে শান্তি পায়; আর কুৎসিত, দুঃখী ও খারাপ শরীরে প্রস্থান করে শাস্তি ভোগ করে। যেমন কুকুর, শূকর, সাপ, বিচ্ছু ও গুবরেপোকা। এভাবে চিরজীবন শরীরই তাদের জান্নাত বা জাহান্নাম। এ ছাড়া কিয়ামত, পুনরুত্থান, জান্নাত, জাহান্নাম বলতে কিছু নেই (ঐ, পৃ. ৬৯)।  

৪. তারা মদের মত নিকৃষ্ট বস্তুকে পবিত্র মনে করে। ধর্ম শেখার জন্য মদ খাওয়া অপরিহার্য বলে তারা বিশ্বাস করে।

আর এই সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে এতটুকুই বলা যথেষ্ট যে, যখন সিরিয়ার মুসলমানরা স্বাধীনতার জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে নিজেদের রক্তে দামেশকের রাজপথ রঞ্জিত করছিল, তখন এই সম্প্রদায় ফ্রান্সের লেজুড়বৃত্তিতে ব্যস্ত ছিল (মধ্যপ্রাচ্য ঃ অতীত ও বর্তমান, ইয়াহিয়া আরমাজানী, বঙ্গানুবাদঃ মুহাম্মাদ ইনামুল হক, জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন, পৃ, ৩২৮)

বাশার আল-আসাদ পরিবারের ইসলামবিদ্বেষী কর্মকান্ড :

আসলে শী‘আরা সর্বদা ইসলামের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। এরা মুখে ইসলামের নাম নিলেও এদের অন্তরে রয়েছে চরম ঘৃণা। যার বহিঃপ্রকাশ সুযোগ মত ভয়াবহভাবে ঘটে। যেমন ২ ফেব্রুয়ারী, ১৯৮২ ইং হামা শহরে নুসাইরি (আলাবি) বংশের প্রেসিডেন্ট আসাদ ও তার সহোদর কর্নেল রিফাত আসাদের নেতৃত্বে সিরিয়ান সেনাবাহিনী আহলে সুন্নাহ, বিশেষ করে ইখওয়ানুল মুসলিমীনের উপর যে আক্রমণ ও গণহত্যা পরিচালনা করেছিল নিকট অতীতে তার নযীর বিরল। সে গণহত্যায় গুম, গ্রেফতার ও দেশত্যাগী ছাড়াও শুধু সরকারী হিসাবেই নারকীয় হত্যার শিকার হয়েছিল প্রায় ৪০ হাযার সাধারণ মানুষ। পৈশাচিক এ দমন অভিযানের বিরুদ্ধে জাতিগত প্রতিবাদ ও বহির্বিশ্বের চাপ ঠেকানোর জন্য সকল প্রকার মিডিয়া বন্ধ করে দেয়াসহ সংবাদপত্রের উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। হামা শহরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী সব রাস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। শহর থেকে কাউকে বের হতে দেয়া হয়নি। বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ কেটে দেয়া হয়, ফলে হামলার প্রথম দিন মঙ্গলবার রাতেই পুরো শহর বিভীষিকাময় অন্ধকারে পতিত হয়। বহু মসজিদ ও গির্জা ধ্বংস করা হয়, অলিতে-গলিতে হত্যাযজ্ঞ চলে, হাযার হাযার মানুষকে হত্যা করা হয়, বহু কবরস্থান গুড়িয়ে দেয়া হয়। অবশেষে স্বৈরশাসক ও তার বাহিনীর হাতে (০২-২৮ ফেব্রুয়ারী, ১৯৮২ইং) লাগাতার ২৭ দিন ব্যাপী চলমান গণহত্যা ও বাড়ি-ঘর ধ্বংসের পর হামা শহরের এক তৃতীয়াংশ নিঃশেষ হলে এ ধ্বংসযজ্ঞের সমাপ্তি ঘটে।

অন্যদিকে বাহ্যত দেখা যায় যে, বাশার সরকার ইসরায়েল ও আমেরিকা বিরোধী। এ বিষয়টিও প্রশ্নসাপেক্ষ। ১৯৬৭ সনে ইসরাইল মিসরে হামলা করে সিনাই উপত্যকা দখল করে নেয়। ফলে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ আরম্ভ হয়, যা ছয়দিন ব্যাপী স্থায়ী হয়েছিল। সিরিয়া ও জর্ডানের চুক্তি ছিল যে, ফিলিস্তীনিদের সাহায্যে জর্ডান ও সিরিয়া ইসরাইলের উপর একযোগে আক্রমণ করবে। নির্দিষ্ট সময়ে জর্ডান হামলা করেছে ঠিক, কিন্তু সিরিয়ার সেনাপ্রধান ফিলিস্তীনীদের সাহায্য করা থেকে বিরত থাকে। ফশ্রুতিতে মিসর, জর্ডান ও সিরিয়ার পরাজয় ঘটে। এ যুদ্ধে ইসরাইল মার্কিন সামরিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিসরের সিনাই মরুভূমি, সিরিয়ার গোলান মালভূমি, জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর, বায়তুল মোকাদ্দাসের পূর্বাংশ এবং গাযা উপত্যকা দখল করে নেয়। তখন সিরিয়ার সেনাবাহিনী প্রধান ছিল বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার-এর পিতা হাফেয আল-আসাদ। হাফেয আল-আসাদ তার বাহিনীকে হামলায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখে এবং সিরিয়ার উঁচু ভূখন্ড গোলান মালভূমি ইসরাইলের হাতে তুলে দেয়, যা ছিল যুদ্ধের কৌশলগত দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেখান থেকে সিরিয়ার সৈন্যবাহিনী সরিয়ে আনে, অতঃপর সংবাদপত্রে মিথ্যা প্রচার করে যে, ইসরাইল গোলান মালভূমি দখল করে নিয়েছে, অথচ তখনো ইসরাইল বাহিনী সেখানে পৌঁছায়নি। তখন সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী সালাহ জাদীদ হাফেয আল-আসাদের ভূমিকার সমালোচনা করেন। এভাবে হাফেয আল-আসাদ জর্ডানের সাথে গাদ্দারি করে ইসরাইলের হাতে নিজ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমি তুলে দেয়। এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী সালাহ জাদীদ ও সেনাবাহিনী প্রধান হাফেয আল-আসাদের মধ্যে তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়। সালাহ জাদীদ যরূরী বৈঠক ডেকে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু হাফেয আল-আসাদ সেনাবাহিনীতে থাকা তার ঘনিষ্ঠ সাথীদের নিয়ে নূরুদ্দীন আতাসি ও সালাহ জাদীদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে জেলে বন্দী করে (প্রেসিডেন্ট ‘নুরুদ্দিন আতাসি’ ও প্রধানমন্ত্রী ‘সালাহ জাদিদ’ উভয়ের মেয়াদকাল ২৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৬ইং, ১৮ নভেম্বর, ১৯৭০ইং)। এখানে নুসাইরী বংশদ্ভূত হাফেয আল-আসাদ বংশের মুসলিম বিদ্বেষ ও গাদ্দারি সুস্পষ্ট (দেখুনঃ হাফিয আল-আসাদ, উইকিপিডিয়া)

হিযবুল্লাহর মুখোশ উন্মোচন :

সিরিয়া যুদ্ধের অন্যতম শরীক হিযবুল্লাহ। এই গ্রুপটি এখন বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ করার পাশাপাশি প্রায় ৬০০০ সিরীয় সৈন্যকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সুতরাং তার সম্পর্কে না জানলেই নয়। আরবী ভাষায় حزب الله অর্থ ‘আল্লাহর দল’। মূলতঃ হিযবুল্লাহ হচ্ছে লেবাননের শী‘আ অধ্যুষিত গেরিলা সংগঠন যার প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। ১৯৮২ সনে প্রতিষ্ঠা হলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে সংগঠনটির অনুপ্রবেশ ঘটে ১৯৮৫ সালে। ইরানের মদদপুষ্ট সংগঠন حركة أمل الشيعية اللبنانية (লেবাননী শী‘আদের স্বার্থ বাস্তবায়নকারী আন্দোলন) থেকে ‘হিযবুল্লাহ’র জন্ম। প্রথমে মূল সংগঠনের নামানুসারে হিযবুল্লাহর নামকরণ করা হয় حركة أمل الشيعية (শী‘আদের স্বার্থ বাস্তবায়নকারী আন্দোলন)। অতঃপর বৃহৎ লক্ষ্যে এ নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় أمل الإسلامية (ইসলামী স্বার্থ বাস্তবায়নকারী আন্দোলন)। কারণ حركة أمل الشيعية এর তৎপরতা লেবাননী শী‘আদের রাজনৈতিক অঙ্গনে সীমাবদ্ধ ছিল, তাকে ব্যাপক করে ‘আমালুল ইসলামিয়াহ’ নামকরণ করা হয়, যেন লেবানন ও অন্যান্য মুসলিম দেশে শী‘আ মতবাদ প্রচারে ‘আমালুল ইসলামিয়া’-কে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এজন্য তারা জিহাদী গ্রুপের আকৃতি ধারণ করে, যেন মানুষ বোঝে তাদের উদ্দেশ্য মুসলিম উম্মাহ থেকে ইহুদী আগ্রাসন প্রতিরোধ করা ও ইসলামের পবিত্র ভূমিসমূহ সংরক্ষণ করা। যদিও তাদর যাবতীয় অর্থের যোগানদাতা ইরান। এভাবে সম্পূর্ণ নতুন নামে অপর একটি সংগঠনের জন্ম দেওয়া হল, যা বর্তমান ‘হিযবুল্লাহ’ নামে প্রসিদ্ধ (হিযবুল্লাহ সম্পর্কে কি জানেন?, আলী আস সাদিক; অনুবাদ : সানাউল্লাহ নাজির আহমাদ, ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ সেন্টার, রিয়াদ, পৃ. ৭)

‘হারাকাতুল আমাল’ নামের যে সংগঠন থেকে হিযবুল্লাহর উত্থান তারা কিভাবে সুন্নী মুসলমানদের উপর নির্যাতনের ষ্টীম রোলার চালিয়েছে বিশেষ করে ফিলিস্তিনী অসহায় শরণার্থীদের সাথে তারা কিভাবে গাদ্দারী করেছে তার কিছু নমুনা তুলে ধরা হল-

১. ২০/৫/১৯৮৫ইং সোমবার : রামাযানের প্রথম রাতে ‘হারাকতে আমালে’র মিলিশিয়ারা ‘সাবরা’ ও ‘শাতিলা’ নামক দুটি ফিলিস্তীনী শিবিরে হামলা করে। অতঃপর গাজার হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের ধরে ‘আমালে’র স্থানীয় অফিস ‘জালুল’-এ নিয়ে আসে। শীআ যোদ্ধারা কয়েকটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান যেমন ‘রেড ক্রিসেন্ট’ ও ‘রেড ক্রস’ সংস্থার চিকিৎসার সরঞ্জামাদি বহনকারী এম্বুলেন্সকে শরণার্থী শিবিরে প্রবেশে বাঁধা দেয় এবং হাসপাতাল থেকে পানি ও বিদুু্যৎ সংযোগ কেটে দেয় (‘হিযবুল্লাহ সম্পর্কে কি জানেন? পৃ ১৬)

২. ২০/৫/১৯৮৫ইং সোমবার : ভোর পাঁচটায় ‘সাবরা’ শরণার্থী শিবির কামান ও বন্দুকের গোলার শিকার হয়। একই দিন সকাল সাতটায় ‘বুরজুল বারাজেনাহ’ শরণার্থী শিবিরেও তার বিস্তার ঘটে। যখন ‘হরকতে আমালে’র নৃশংস হামলা নারী, পুরুষ ও শিশুদের নির্বিচারে শিকার করছিল, তখন ‘নবীহ বারিহ’ লেবাননের ষষ্ঠ ব্রিগেডকে নির্দেশ করল সুন্নীদের বিপক্ষে ‘আমালে’র যোদ্ধাদের সাহায্য কর। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ষষ্ঠ ব্রিগেড এসে চতুর্দিক থেকে ‘বুরজুল বারাজেনাহ’ শিবিরে গোলা বর্ষণ শুরু করল (ঐ)

৩. ১৮/৬/১৯৮৫ইং : এই দিন ‘হরকতে আমালে’র আগুনে বিধ্বস্ত শিবির থেকে ফিলিস্তীনীরা মুক্ত হয়। পুরো একমাস ভয়-ভীতি-আতঙ্ক ও ক্ষুধার্ত জীবনে তারা কুকুর ও বিড়াল পর্যন্ত খেতে বাধ্য হয়েছিল। এমনকি মুসলমানরা বলতে বাধ্য হয় যে, এর চাইতে তো ইহুদীরা ভাল। ৯০% বাড়ি-ঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। নানা তথ্য থেকে হতাহতের সংখ্যা ৩১০০ বলে জানা যায়। ১৫ হাযার শরণার্থী বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে যায়, যা ছিল মোট আশ্রয়প্রাপ্তদের প্রায় ৪০%।

৪. ৪/৬/১৯৮৫ইং : এই দিন কুয়েতী সংবাদ সংস্থা ও তার আগের দিন ‘আল-ওয়াতান’ ম্যাগাজিন প্রচার করে যে, ‘আমালে’র যোদ্ধারা ‘সাবরা’ শরণার্থী শিবিরে পরিবারের সামনে থেকে ২৫ জন যুবতীকে অপহরণ করে তাদের শ্লীলতাহানির মত জঘন্য অপরাধ করেছে।

ইসরাইলি সৈন্যরা যখন লেবানন ঢুকে শী‘আদের মদদে ফিলিস্তীনী স্বাধীনতাকামীদের দমন করে, তখন শী‘আরা দক্ষিণ লেবাননে ইহুদী সৈন্যদের ফুল ও তোরণ দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়! (হিযবুল্লাহ সম্পর্কে কি জানেন? পৃ ২১)। এ বিষয়টি হিযবুল্লাহর তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহও স্বীকার করেছেন (ঐ, পৃ.২১)। বর্তমান হিযবুল্লাহ প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। যিনি এক সময় এই ‘হারকাতে আমালে’র বেক্কা প্রদেশের প্রধান ও কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। 

আর হাসান নাসরুল্লাহ সম্পর্কে জানার জন্য বেশী তথ্যানুসন্ধান ও গবেষণার প্রয়োজন নেই। এতটুকু জানাই যথেষ্ট যে, সে জাফরী শী‘আ দ্বাদশ ইমামিয়ার অন্তর্ভুক্ত। যাদের নিকট আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের উপায় হচ্ছে ছাহাবীদের গালমন্দ করা। সত্যিকার অর্থে যদি হাসান নাসরুল্লাহ ইসরাইলের জন্য হুমকি হত, তাহলে সে কিভাবে লেবাননের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম চষে বেড়ায়, ইসরাইলের বিষোদগার করে বেতার-যন্ত্র ও টিভির পর্দায় সাক্ষাৎকার দেয়। কিভাবে নিজস্ব টিভি চ্যানেল পরিচালনা করে। কিভাবে বিশাল জনসভায় ইসরাঈলকে হুমকি দেয়, যেসব সভার দিন-তারিখ ও স্থান পূর্ব থেকে নির্ধারিত থাকে, অথচ ইসরাইল তাকে কিছু বলে না? তার গাড়ি, বাড়ি বা জনসভাকে লক্ষ্য করে কোন মিসাইল ছুড়ে না? তাকে হত্যার জন্য কেন কোন পুরস্কার ঘোষণা করা হয়না? পক্ষান্তরে সুন্নী যোদ্ধাদের মাথার জন্য লাখ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ড্রোন হামলা হয়তোবা শুধু সুন্নীদের জন্যই নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে তারা লুকিয়েও বাঁচতে না পারে।

যাইহোক এই সুন্নী বিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে হিযবুল্লাহর যাত্রা শুরু হয়। এরপর হিযবুল্লাহর জনসমর্থন বৃদ্ধির স্বার্থে ২০০৬ সালে এক নতুন নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। এই নাটকে হিযবুল্লাহ ফিলিস্তীনের দখলকৃত যমীন মুক্ত করার নামে দু’জন ইসরাইলী সেনাকে অপহরণ করে। সাথে সাথে ইসরায়েলের সাথে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয় এবং যুদ্ধ শেষে হিযবুল্লাহ বিজয় লাভ করেছে বলে প্রচারণা চালানো হয়। এই ‘বিজয়ে’র পর হিযবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ রীতিমত হিরো বনে যান। যারা গতকালও সুন্নী মুসলিমদের উপর নিধনযজ্ঞ পরিচালনা করেছে। দক্ষিণ বৈরূতে ফিলিস্তীনী শরণার্থী শিবির ‘বারাজানাহ’ ক্যাম্পে নিরীহ নিরপরাধ নিরস্ত্র সুন্নী মুসলিমদেরকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে। হলুদ মিডিয়ার কল্যাণে তারাই আজ বীর মুজাহিদ! সত্যিই মিরাকেল! বিচিত্র সেলুকাস এ পৃথিবী!

আসলে এটা যে একটি নিছক নাটকই ছিল তা যেকোন বিবেকবান মানুষ মাত্র বুঝতে পারবে। যেখানে সকল আরব রাষ্ট্র মিলে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেনা। সেখানে মুষ্টিমেয় জনবল আর অস্ত্রবল নিয়ে হিযবুল্লাহ একাই জয়লাভ করল! হঠাৎ কোন উস্কানী ছাড়াই কেন হিযবুল্লাহ ইসরায়েলের দু’জন সেনাকে অপহরণ করল? অথচ যখন হামাসের দু’জন নেতা আহমাদ ইয়াসীন ও আব্দুল আজিজ রানতিসিকে হত্যা করা হয়, তখন কেন হিযবুল্লাহ একটি মিসাইলও ইসরাইলের দিকে নিক্ষেপ করেনি? গাজায় যখন গণহত্যা চালানো হয় তখন কেন সে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি। অথচ তারা ইসরাইলের কলিজায় বসে আছে। তাদেরই বেশী প্রয়োজন ছিল সাহায্য, সমর্থন ও অস্ত্র সহযোগিতা করার! আর সত্যি বলতে কি, এই যুদ্ধে ফিলিস্তীনী জমি পুনরুদ্ধার তো অনেক দূরের কথা বরং হিযবুল্লাহর সাথে এই যুদ্ধ ইসরায়েলকে নিরাপত্তার নামে লেবানন সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন থেকে শুরু করে অনেক কিছুই করার সুযোগ করে দিয়েছে। এই যুদ্ধের ব্যাপারে স্বয়ং হাসান নাসরুল্লাহ ২৭/০৭/২০০৬ইং লেবাননের New TV চ্যানেলের এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যদি জানতাম দু’জন ইসরাইলি সৈন্য অপহরণ করার ফলে লেবাননের এ পরিমাণ ক্ষতি হবে, তাহলে কখনো এ নির্দেশ দিতাম না’। তিনি আরো বলেন, দু’জন সৈন্য অপহরণ করার ফলে যে ক্ষতি হয়েছে, হিযবুল্লাহ তার একভাগেরও আশঙ্কা করেনি। কারণ যুদ্ধের ইতিহাসে এ পরিমাণ ক্ষতি কখনো হয়নি। হাসান নাসরুল্লাহ আরো বলেন, হিযবুল্লাহ দ্বিতীয়বার কখনো ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে জড়াবে না’ (আশ-শারকুল আওসাত সংখ্যা :  ১০১৩৫, তারিখ: ২৮/৮/২০০৬ইং- এর বরাতে, ঐ, পৃ. ১০৭)

হাসান নাসরুল্লাহ’র এই কথাকে সামনে রেখে যদি আমরা একটু আগ বাড়িয়ে বলি তাহ’লে ভুল হবেনা যে, দু’জন ইসরাইলী সৈন্য অপহরণ করে সে লেবাননের উপর ইসরাইলকে ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনার পথ সুগম করে দিয়েছে। এরূপ কাজ হাসান নাসরুল্লাহর পূর্বে তার পূর্বসূরি আববাস মুসাভিও করেছিল। ১৯৮৬ইং সালে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে দু’জন ইসরাইলী সৈন্য অপহরণ করে লেবাননে তাদেরকে হামলার সুযোগ করে দিয়েছিল, যার ফলে তারা লেবাননী সামরিক শক্তি ও তাদের অর্থ-সম্পদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। কেননা আল-কুদস মুক্ত করা তার লক্ষ্য নয়। যেমন ২০০০ইং সালে ‘বিনতে জাবিল’ এলাকা হ’তে ইসরাইলীদের হটে যাওয়ার পর হাসান নাসরুল্লাহ হাযার হাযার দক্ষিণাঞ্চলীয় যোদ্ধার সামনে ঘোষণা দেন যে, হিযবুল্লাহ কখনো কুদসকে মুক্ত করার জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না! (ঐ, পৃ. ১১২)। শুধু এখানেই নয় হিযবুল্লাহর এক সময়ের সেক্রেটারি জেনারেল সুবহি তুফাইলি বলেন, ‘নিশ্চয়ই হিযবুল্লাহ ইসরাইলের বর্ডার পাহারাদার। এ কথার সত্যতা যে যাচাই করতে চায়, সে যেন অস্ত্র হাতে সীমান্তের দিকে অগ্রসর হয় এবং ইহুদী শত্রুদের বিপক্ষে দাঁড়ায়, তাহলে অবশ্যই দেখা যাবে যে, হিযবুল্লাহ কিভাবে সশস্ত্র যোদ্ধাদের প্রতিহত করে’! কারণ, যারা সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, তারা এখন জেলখানায় বন্দী। যাদেরকে হিযবুল্লাহ বন্দী করেছে’ (ঐ, পৃ. ১১৪ ও ১১৬)

উল্লেখ্য যে, সুবহি তুফাইলি হিযবুল্লাহর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। যখন তিনি দেখলেন যে, হিযবুল্লাহ প্রতিরোধ ত্যাগ করে সিরিয়ান ও ইরানী স্বার্থের শুধু সেবক হয়নি, বরং ইসরাইলী উত্তর প্রান্তের সীমানার নিরাপত্তা প্রহরীও বনে গেছে, আর কোনো মুজাহিদ ইসরাইলে হামলা করার চেষ্টা করলে তাকে তারা বাঁধা দেয় ও গ্রেফতার করে। তখন তিনি হিযবুল্লাহ থেকে পৃথক হয়ে যান। ইহুদী এরিয়েল শ্যারন স্বীয় ডাইরিতে লিখেছে, ‘দীর্ঘ ইতিহাসে কখনো দেখিনি শী‘আদের সাথে ইসরাইলের শত্রুতা রয়েছে’ (শ্যারনের ডায়রি, পৃ.৫৮৩ -এর বরাতে ঐ, পৃ. ১৩৬)। এ ব্যাপারে শায়খ ইউসুফ আল-কারযাভী বলেন, ‘হিযবুল্লাহ নয় হিযবুশ শয়তান। তাইতো আমরা দেখতে পাচ্ছি তথাকথিত ইসলামের খাদেম সিরিয়াতে বাশার আল আসাদের যালিম সরকারের পক্ষ নিয়ে সুন্নীদের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে’ (salafibd.com)

আল-কুদস রক্ষা’র বুলি ইরানের এক নিকৃষ্ট তাকিআ নীতি :

সিরিয়া যুদ্ধে আপামর মুসলিম জনতা অনেক বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাদের ধারণামতে, ইরান ও হিযবুল্লাহ সহ শী‘আ গোষ্ঠী সর্বদা বায়তুল আক্বসা মুক্ত করার জন্য বড় বড় কথা বলে, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেযাদ ইসরাঈলকে দুনিয়ার বুক থেকে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য হুমকি দেয়, খোমেনী সালমান রুশদীকে হত্যার ফতওয়া দেয়, তাহলে তারা কিভাবে ইসলামবিরোধী হতে পারে? মূল বিষয়টি হ’ল, আসলে ‘আল কুদস’ রক্ষা ইরান ও হিযবুল্লাহ সহ শী‘আদের একটি নিকৃষ্ট তাকিয়া। প্রথমত আমরা জানব তাকিয়া কি? ‘তাকিয়া’কে আমরা এক বাক্যে মুনাফেকী বা ধোঁকা দেয়া নীতি বলতে পারি। অন্তরে কোন কথা গোপন রেখে মুখে তার উল্টা বলাকে তাকিয়া বলা হয়। শী‘আরা একে নেকীর কাজ মনে করে। শুধু নেকীর কাজ নয় ছালাত-ছিয়ামের মত ফরয কাজ মনে করে। যেমন ইহসান ইলাহী যহীর (রহঃ) তার ‘আশ-শী‘আ ওয়াস সুন্নাহ বইয়ে বলেন, শী‘আ মুহাদ্দিছ ইবনে কুম্মি তার ‘ইতিকাদাত’ বইয়ে লিখেছেন, ‘তাকিয়া করা ছালাতের মত ফরয। যে ব্যক্তি তাকিয়া করবেনা সে আল্লাহ্র দ্বীন থেকে এবং শী‘আ আক্বীদা থেকে বের হয়ে যাবে (আশ-শী‘আ ওয়াস সুন্নাহ, ইহসান ইলাহী যহীর, উর্দু অনুবাদ : আতাউর রহমান সাকিব, ইদারা তরজুমানে সুন্নাহ, লাহোর, ১৯৯০, পৃ.১৮৭)। তাহলে যাদের নিকট মিথ্যার মত মহাপাপ ফরয ইবাদত, তাদের কথা কিভাবে বিশ্বাস করা যায়? এই তাকিয়ার আশ্রয় নিয়েই এরা আলী (রাঃ)-কে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে কুফাতে রাজধানী করতে বলে এবং বিপদের সময় ধোঁকা দেয়। এভাবেই তারা হোসাইন (রাঃ)-কে ধোঁকা দিয়ে হত্যা করে, এই কুফার লোকেরাই ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-কে বিষ পান করিয়ে হত্যা করে, ইমাম বুখারী (রহঃ)-কে তাড়িয়ে দেয় এবং তিনি আল্লাহ্র কাছে মৃত্যু কামনা করে দুনিয়া থেকে চলে যান। এই কুফাতেই শী‘আসহ সকল জঘন্য ফিরকার উৎপত্তি, এরাই লাখ লাখ হাদীছকে জাল করেছে, এরাই তাশিয়ার আশ্রয় নিয়ে বাগদাদের খলীফাকে ধোঁকা দিয়ে মোঙ্গলদের হাতে বাগদাদকে তুলে দেয়। এরপর তারা সেখানে স্মরণকালের ভয়াবহতম গণহত্যা চালায়। এরাই আবার ‘বায়তুল আকছা’ রক্ষা করার নামে মুসলিম বিশ্বে সুন্নী নিধন প্রক্রিয়া চালানোর এক ভয়ংকর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কুদস রক্ষা যে তাদের জঘন্য তাক্বিয়া তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল তাদের বিশ্বাস মতে, বায়তুল আকছা দুনিয়াতে নয় আসমানে অবস্থিত। শী‘আদের আল্লামা ‘জাফর মুরতাযা আল-আমেলী’ তার এই তথ্য প্রচারের কারণে ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ নিজে তাকে সম্মানিত করেন! অথচ মিথ্যাচার, অপব্যাখ্যা, মসজিদে আকছা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানো ও আসমানে মসজিদে আকছা বলার কারণে বইটি নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত হওয়ার উপযুক্ত ছিল।

শীআদের মুফাসসির ‘আল-ফায়েদ আল-কাশানী’ লিখিত ‘তাফসীরে সাফি’ গ্রন্থে মি‘রাজ সংক্রান্ত আয়াতسُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى  بِعَبْدِه…  (বনী ইসরাঈল ১)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, (তার ইসরা হয়েছিল) আসমানে বিদ্যমান মসজিদে আকছা পর্যন্ত, বিভিন্ন বর্ণনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয়’ (ফায়েদ আল-কাশানি লিখিত ‘তাফসীরে সাফি, ৩/১৬৬-এর বরাতে ‘শীআ ও মসজিদে আকছা’, তারিক আহমাদ হিজাযী, অনুবাদ : সানাউল্লাহ নাজির আহমাদ, ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ পৃ. ১০)

এছাড়া আব্দুল আলী আল-হুওয়াইযী রচিত ‘তাফসীরে নুরুছ ছাকলাইন’, মুহাম্মাদ ইব্‌ন আইয়াশ আস-সালামি আস-সামারকান্দী রচিত ‘তাফসীরুল আইয়াশী’, হাশেম আল-বাহরানি রচিত ‘আল-বুরহান ফি তাফসীরিল কুরআন’ সহ বিভিন্ন তাফসীর ও হাদীছ গ্রন্থে তারা জোরালোভাবে দাবী করেছে কুদস ফিলিস্তীনে নয় বরং আসমানে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, এ বিষয়ে ইহুদী ও শী‘আ একই আকীদা পোষণ করে। আর হবেই না বা কেন, এই ফিরকার জন্মই তো দিয়েছে ইহুদী আব্দুল্লাহ বিন সাবা। চরম মুসলিম বিদ্বেষী ইহুদীদের কোন লেখা, কিতাব ও গবেষণা পাওয়া যাবে না মসজিদে আকছা সম্পর্কে, যেখানে তারা বায়তুল আকছার পবিত্রতার ব্যাপারে সন্দেহের সৃষ্টি করেনি। যাতে করে মুসলমানদের মাঝ থেকে ‘বায়তুল আকছা’র ভালবাসা উঠে যায়। তাহ’লে যারা বাইতুল আকছাকে গুরুত্বহীন করার জন্য পরোক্ষভাবে ইহুদীদের পক্ষে প্রচারনা চালায় তারা কিভাবে বাইতুল আকছা মুক্ত করতে পারে?

২য় প্রমাণ হচ্ছে শী‘আ দ্বাদশ ইমামিয়ার নিকট ততক্ষণ পর্যন্ত জিহাদ নিষিদ্ধ যতক্ষণ তাদের দ্বাদশ ইমাম অদৃশ্য জগত থেকে বের না হয়। এটাই তাদের বিশ্বাস। তাদের কিতাবের ভাষা হচ্ছে, ‘ইমামের ঝান্ডার পূর্বে যে ঝান্ডাই উত্তোলন করা হবে, সেই ঝান্ডাধারী হবে তাগুত’। অদৃশ্য জগত থেকে ইমাম বের হয়ে ইয়াহূদী ও নাছারাদের সাথে সন্ধি করবেন, আলে-দাউদের বিধান মতে ফয়ছালা করবেন, কা‘বা ধ্বংস করবেন, আহলে-সুন্নাহকে হত্যা করবেন, কারণ তারা শী‘আ ইমামিয়াদের দুশমন। আবু বকর ও ওমর (রাঃ)-কে কবর থেকে বের করে তাদেরকে শূলীতে চড়াবেন, অতঃপর তাদেরকে জ্বালিয়ে দিবেন (كتاب الغيبة للنعماني পৃ.৭০-এর বরাতে ‘হিযবুল্লাহ সম্পর্কে কি জানেন?’, পৃ. ১০৯)।  

৩য় প্রমাণ হল, তাদের নিকটে মসজিদে আকছার কোন মূল্য নেই। তাদের নিকটে কারবালা ও কুফার মসজিদ মসজিদে আকছার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। যার প্রমাণ শীআ মতবাদ প্রচারকারী মাসিক পত্রিকা ‘আল-মিম্বার’ (ওয়েবসাইট: www.14masom.com/menber)। এ পত্রিকা ডিসেম্বর ১৯৯৯ইং থেকে শুরু করে কুয়েত সরকারের ২০০৪ইং সনে ‘খুদ্দামুল মাহিদ’ সংস্থা নিষিদ্ধ করা ও সাহাবীদের গালি দেয়ার অপরাধে ইয়াসির হাবিবকে কারাদন্ড প্রদানের আগ পর্যন্ত নিয়মিত প্রকাশিত হত। এ পত্রিকায় ‘কুদসের পূর্বে কারবালা স্বাধীন কর’ শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছিল, তাতে লেখা হয় কুদসের যত মর্যাদা ও পবিত্রতাই থাক, তা কখনো কারবালার সমপরিমাণ নয়। কুদস কারবালার মত নয়’ (শী‘আ ও মসজিদে আকছা, পৃ ৩৬)। আবার তারাই বায়তুল আকছা মুক্ত করার ব্যাপারে বড় বড় কথা বলে। এতদসত্ত্বেও তারা প্রচার করে যে, কুদসই তাদের প্রথম বিষয় এবং তারা দুর্বল ফিলিস্তীনীদের পক্ষে। তারা মসজিদে আকছাকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ করবে। তারা কুদসকে সাহায্য করার জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে তার নাম রেখেছে ‘কুদস দিবস’। কুদসকে মুক্ত করার জন্য একটি বাহিনীর নাম রেখেছে ‘জায়শুল কুদস’ ও ‘ফায়লাকুল কুদস’। কুদসের জন্য একটি সম্প্রচার সংস্থা করেছে, যার নাম ‘কুদস সম্প্রচার সংস্থা’। কুদসের জন্য তাদের নির্দিষ্ট একটি পথ রয়েছে, যার নাম ‘তারীকুল কুদস’। অথচ আমরা দেখছি সে পথ মোড় ঘুরিয়ে ইরাক ও আফগানিস্তানের দিকে ধাবিত হচ্ছে! আমরা দেখার অপেক্ষায় আছি, ইরানের কোন ব্যক্তি কুদসকে মুক্ত করার জন্য জীবন দেয়! ইহুদীদের সাথে তাদের শত্রুতার দাবী মূলতঃ প্রতারণা, ইসরাইলী রাষ্ট্রের উপর হামলার হুমকি মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার নামান্তর। যেমন ইহুদী সাংবাদিক ‘ইউসি মালিমান’ বলেন, ‘এটা কোনোভাবে সম্ভব নয় যে, ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসমূহে হামলা করবে, উপরন্তু একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছে যে, ইরান যদিও কথার মাধ্যমে ইসরাইলের উপর হামলা করে, যা থেকে তার সাথে ইরানের শত্রুতা বুঝা যায়। প্রকৃতপক্ষে ইরানী পারমাণবিক বোমাগুলো আরব রাষ্ট্রসমূহের দিকে তাক করা (জারীদাতুল আম্বিয়া ৭৯৩১ সংখ্যার বরাতে ‘হিযবুল্লাহ সর্ম্পকে কি জানেন?’, পৃ. ৯৫)

আর সত্যি বলতে কি ফিলিস্তীন জয় করেছে উমর (রাঃ)। সুতরাং যারা আক্বীদা ও দ্বীন হিসেবে উমর (রাঃ)-কে লানত করে, গালি দেয়, তার নামে নিরীহ প্রাণীদের বেদম প্রহার করে, যারা বিশ্বাস করে শেষ যামানায় ইমাম মাহদী উমর ও আবু বকর (রাঃ)-কে কবর থেকে তুলে আগুনে জ্বালিয়ে দিবেন, তারা ফিলিস্তীন মুক্ত করার জন্য জীবন দিবে তা দিবা স্বপ্ন বৈ কিছু নয়। অন্যদিকে রাসুল (ছাঃ) বলেছেন, তায়ালিসা কাপড় পরিহিত ইস্পাহানের ৭০,০০০ হাযার ইহুদী দাজ্জালের অনুসারী হবে (মুসলিম, হা/৭৫৭৯)। মজার ব্যাপার হ’ল এই ইস্পাহান শহরটি বর্তমান ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে ৩৪০ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত, যা মধ্য ইরানের একটি প্রসিদ্ধ প্রদেশ। সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, যারা দাজ্জালের অনুসরণ করবে তাদের বাসস্থল হবে ইরান। হয় এই ইরানীরাই ইহুদী হয়ে যাবে, বা ইহুদীরা এখানে চলে আসবে বা শী‘আদেরকেই পরোক্ষভাবে ইহুদী বলা হয়েছে।  

সিরিয়া যুদ্ধের ব্যাপারে সমকালীন উলামাদের ফাতাওয়া :

সিরিয়া যুদ্ধের ব্যাপারে মুসলিম বিশ্বের ১০৭ জন বিদগ্ধ পন্ডিত একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন। সেই বিবৃতিতে মুসলিম বিশ্ব সহ পুরো দুনিয়ার কাছে মোট ৬টি আবেদন করা হয়। সেখানে তারা সাধারণ নিরীহ জনগণ হত্যা বন্ধ করার জন্য উভয় গ্রুপের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তারা বলেন, আল্লাহ্র দরবারে হত্যাকারী অবস্থায় উপস্থিত হওয়ার চাইতে নিহত অবস্থায় উপস্থিত হওয়া অনেক শ্রেয়। এ ছাড়াও তারা সারা দুনিয়ার মুসলিমদের কাছে সিরিয়ার সুন্নী মুসলমানদের প্রতি যেভাবে সম্ভব সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তা সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে হোক বা নৈতিক সমর্থনের মাধ্যমেই হোক।

বর্তমান পরিস্থিতির বিশ্লেষণ :

উপরে আলোচিত বিষয়গুলোকে সামনে রাখলে বর্তমান সিরিয়া পরিস্থিতির একটা নতুন রূপ আমাদের সামনে দাঁড়ায়। এখানে আমরা সিরিয়ার সকল পক্ষকে দুই ভাগে ভাগ করতে পারি।

সুন্নীপক্ষ : জাবহাতুন নুছরা, ফ্রী সিরিয়ান আর্মী, সৌদী আরব, তুরস্ক এবং ইরান ছাড়া আরব বিশ্বের প্রায় সব দেশ। আমেরিকা, বৃটেন সহ ইউরোপীয়ান দেশগুলো এই পক্ষ সমর্থন করেছে।

শী‘আ পক্ষ : সিরিয়া, ইরান, হিযবুল্লাহ, রাশিয়া ও চীন।

উপরে উল্লেখিত সকলের লক্ষ্য এক হলেও উদ্দেশ্য এক নয়। যেমন সোভিয়েত ইউনিয়ন বিরোধী যুদ্ধে মুজাহিদ ও আমেরিকার লক্ষ্য এক থাকলেও উদ্দেশ্য আলাদা ছিল। শুধু আলাদা নয় আমেরিকা মুজাহিদদের উদ্দেশ্যের বিরোধীও ছিল, যা কখনই অস্পষ্ট ছিল না। উভয়ের লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয়, কিন্তু উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে মুজাহিদদের চাওয়া ছিল ইসলাম প্রতিষ্ঠা, অন্যদিকে  আমেরিকার চাওয়া ছিল সুপার পাওয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে একমাত্র বাধাকে দূরীভূত করা। ফলত যুদ্ধ জয়ের পর মুজাহিদরা তাদের নিজ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করলে তাদের এক সময়ের মিত্র আমেরিকাই স্বমূর্তি ধারণ করে তাদের ঘোর বিরোধী হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক অনুরূপভাবে বর্তমান সিরিয়াতে বাশার আল-আসাদের পক্ষে লড়াইরত সকল পক্ষের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই। কিন্তু বাশার আল আসাদের বিপক্ষে লড়াইরতদের লক্ষ্য এক হলেও উদ্দেশ্য আলাদা আলাদা। তথা শী‘আ পক্ষের সকলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হচ্ছে বাশার আল-আসাদের মসনদ অক্ষুণ্ণ রাখা ও সুন্নী নিধন করতঃ শী‘আদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আশংকামুক্ত করা। আর সুন্নী পক্ষের মধ্যে আমেরিকাসহ অন্যান্য ইসলাম বিরোধী শক্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করার মাধ্যমে সিরিয়াকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দেওয়া। এছাড়াও এই যুদ্ধকে দীর্ঘস্থায়ী করার মাধ্যমে ইরান ও সউদী আরবের মদদপুষ্টদের লড়াইকে সরাসরি ইরান-সঊদী আরব লড়াইয়ে পরিণত করা এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাইতো সে বন্ধ করার সমর্থ থাকা সত্ত্বেও এই যুদ্ধকে ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘায়িত করছে। বাশার আল-আসাদের বিরোধিতা করলেও তাকে হটানোর জন্য বিদ্রোহীদের পর্যাপ্ত কোন সাহায্য আমেরিকা করেনি। এ দ্বিমুখী নীতিই তার উদ্দেশ্যকে পরিষ্কার করেছে। অন্য দিকে ‘ফ্রী সিরিয়ান আর্মী’ দীর্ঘদিনের বাশার শাসনের অবসান চায়। সঊদী আরবের উদ্দেশ্য কিছুটা ওপেন সিক্রেট। কেননা সঊদী আরবের সাথে ইরানের ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বহু দিনের। আর এটা যে মাযহাবগত কারণেই তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। যেমন কিছু দিন আগে বাহরাইনের শী‘আ বিদ্রোহ দমনের জন্য সঊদী আরব সরাসরি সেনা আভিযান চালিয়েছিল। অন্যদিকে ইরান বিদ্রোহীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দান করতঃ এই অভিযানের ব্যাপারে কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছিল। ঠিক অনুরূপভাবে ইরাকের নুরী আল-মালেকীর শী‘আ প্রশাসনকে সঊদী আরব কখনো মেনে নেয়নি, কিন্তু ইরান সুগভীর সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তাই তো ইরাকে নিযুক্ত মার্কিন সাবেক রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার হিল অভিযোগ করেছেন, ইরাকের সহিংসতায় মদদ রয়েছে প্রতিবেশী সঊদী আরবের। ক্রিস্টোফার হিল গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে গোপন বার্তায় আরও জানান, সঊদী আরব ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নূরী আল-মালিকির সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে (আমারদেশ অনলাইন, ১৩/৮/২০১৩)।  

সুতরাং সিরিয়াতে শী‘আ শাসনের পতন ঘটিয়ে ইরানকে কোনঠাসা করাই সঊদী আরবের আসল উদ্দেশ্য। ‘জাবহাতুন নূছরা’সহ অন্যান্য মুজাহিদ গ্রুপগুলোর উদ্দেশ্যও কিছুটা অভিন্ন। বাশারের পতনের সাথে সাথে তারা সেখানে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের এই উদ্দেশ্যের ভিন্নতার কারণেই তারা আমেরিকার সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে তুরস্ক সহ ইখওয়ানপন্থী গ্রুপের উদ্দেশ্যও বাশারের পতন ঘটানো হলেও তারা কট্টর ইসলামপন্থীদের ক্ষমতায় দেখতে চায়না। এই হিসেবে তুরস্ক ও সঊদী আরবের দ্বন্দ্বও ইতিমধ্যে সামনে এসেছে। আর মিসরের ঘটনাও সঊদী আরবের সাথে ইখওয়ানপন্থীদের দূরত্বের প্রমাণ বহন করে। ধারণা করা হয় যে, মিসরের ইখওয়ান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ইরানের সাথে সম্পর্ক ভাল করার যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়, যা সঊদী আরব মোটেও সুদৃষ্টিতে নেয়নি। যাইহোক বিদ্রোহী পক্ষগুলোর এই উদ্দেশ্যের বিভিন্নতা তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলতঃ বাশার আল-আসাদের শক্তিশালী জোটের সামনে তারা শক্তভাবে দাঁড়াতে পারছেনা। এখানে একটি প্রশ্ন দেখা দিতে পারে যে, সিরিয়ার ক্ষমতাসীন দল ‘বাথ পার্টি’ একটি সমাজতান্ত্রিক দল। অন্যদিকে যারা বিদ্রোহ করছে তাদের দাবী আনুযায়ী তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর ইরানের দাবী আনুযায়ী ইরান একটি ইসলামী দেশ। সেই হিসেবে ইরান বিদ্রোহীদের সাহায্য করবে এমনটাই হওয়া ছিল স্বাভাবিক, যেমন তারা বাহরাইনে বিদ্রোহীদের ইসলামের নামে সর্বাত্মক সাহায্য ও সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু এখানে ঘটল একদম উল্টা। সহযোগিতা অনেক দূরে থাক তারা এখানে বিদ্রোহীদের দমনের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তাদের এই অবস্থানের জন্য আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, বরং যদি আরো কিছু প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসে গভীরভাবে ভাবা যায় তাহ’লে বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির অনেক গোপন জিনিস আমাদের সামনে বেরিয়ে আসবে। প্রথমতঃ এটা একটি সর্বজন স্বীকৃত বিষয় যে, দুশমন এক হলে বন্ধুত্ব হয়। যেমন আমাদের দেশে এরশাদের বিরোধিতায় জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগের মত চিরশত্রু একই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতে পেরেছিল। কেননা এখানে তাদের উভয়েরই দুশমন এক ছিল। তাই তারা তাকে দমনের জন্য জোটবদ্ধ হয়েছিল। ঠিক বিশ্ব রাজনীতিতে আমরা দেখতে পাই আল-কায়েদা ও তালেবান আমেরিকা ও ইসরায়েলের ঘোর শত্রু। ইরান ও হিযবুল্লাহর বাহ্যিক সম্পর্ক দেখলেও তাই মনে হয় যে, এরাও আমেরিকা ও ইসরায়েলের চরম শত্রু। তাহলে সেই হিসাবে ইরান, হিযবুল্লাহ, আল-কায়েদা ও তালেবানের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমানে সিরিয়াতে ইরান ও হিযবুল্লাহ আল-কায়েদা ও তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তাহ’লে কি তাদের শত্রু এক নয়? এদের কোন এক পক্ষ কি আমেরিকা ও ইসরাঈল বিরোধী হওয়ার দাবীতে মিথ্যা?

দ্বিতীয়তঃ দীর্ঘ ইরাক-ইরান যুদ্ধ প্রমাণ করে যে, ইরান ও সিরিয়া ইরাকের শত্রু তথা তৎকালীন শাসক সাদ্দাম হোসেনের ঘোর শত্রু। শুধু শত্রু নয় তারা সুযোগ পেলে সাদ্দামকে ফাঁসিতে ঝুলাতো। অন্যদিকে দীর্ঘ ইরাক-আমেরিকা যুদ্ধ এমনকি আমেরিকা কর্তৃক সাদ্দামের ফাঁসি এটাই প্রমাণ করে যে, আমেরিকাও সাদ্দামের শত্রু। সুতরাং এখানে দুই জনের শত্রুই সাদ্দাম। সেই হিসেবে তাদের মাঝে বন্ধুত্ব না থাকাটা অস্বাভাবিক। যার প্রমাণ বর্তমান নূরী আল-মালিকির শী‘আ তাঁবেদার সরকার নিয়ে উভয় পক্ষই সন্তুষ্ট। শুধু তাই নয় ঈদুল আযহার দিন সাদ্দামের ফাঁসি পুরো মুসলিম বিশ্বকে কাঁদালেও শী‘আরা যে খুশি হয়েছিল তা নিশ্চিত। 

তৃতীয়তঃ বিদ্রোহীদের বিপক্ষে যুদ্ধরত ইরানে আজ থেকে প্রায় তিন দশক পূর্বে আলী খামেনী তাদের দাবী মতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। ঠিক তেমনি বিদ্রোহীদের পক্ষে যুদ্ধরত আল-কায়েদা ও তালেবান আফগানিস্থানে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে। ইরান শুরু থেকে আমেরিকা ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে উচ্চবাচ্য করলেও তাদের শাসন এখনো টিকে আছে। অন্য দিকে তালেবানরা এ ব্যাপারে কোন হুমকি-ধমকি না দিলেও সাজানো নাটকের মাধ্যমে তাদের পতন ঘটানো হয়। আলী খামেনী বহাল তবিয়তে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন, অন্যদিকে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বকে লঙ্ঘন করে হামলার নাটক সাজিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়। উভয়ে ইসলামপন্থী হওয়ার পরেও ইসলাম বিরোধীদের তাদের সাথে এ বৈরী আচরণের কারণ কি?        

চতুর্থতঃ এক সময় ইরাককে ইসরায়েলের জন্য হুমকি মনে করা হত। আর এখন ইরানকে ইসরায়েলের জন্য হুমকি মনে করা হচ্ছে। কিন্তু একদিকে যেমন ইসরায়েলের একসময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিপি জিভনি মোসাদের গোয়েন্দা থাকা অবস্থায় তার নেতৃত্বে ইরাকের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। এমনকি মিথ্যা অভিযোগ তুলে ইরাককে তছনছ করে দেয়া হয়। অথচ ইরানের সাথে এই রূপ কিছু করা হয়নি। অন্যদিকে দু’জনই যদি ইসরায়েলের শত্রু হবে তাহ’লে তারা আবার পরস্পর লড়াই কেন করল? এই লড়াইয়ে যদি ইরাক দুর্বল হয়ে থাকে তাহ’লে এই দুর্বলতায় পরবর্তীতে কার ফায়দা হয়েছে?  

উপরের আলোচনাকে সামনে রাখলে এ কথা দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যায় যে, আজ ইহুদী, খ্রীস্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু, শী‘আ সহ সবাই মূলধারার মুসলমানদের শেষ করার জন্য আদাজল খেয়ে লেগেছে। তাদের এই ইসলামবিদ্বেষী প্রক্রিয়ার একটা অংশ হিসেবে আজ মুসলিম মায়ের আহাজারিতে, মাসুম শিশুর বুকফাঁটা চিৎকারে, লাখো ভাইয়ের পঁচা লাশের গন্ধে সিরিয়ার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। বাশার আল-আসাদ বাহিনী ও হিযবুল্লাহর বুলেটের গুলি ও বেয়ানটের উন্মত্ত ফলা নিরীহ মুসলমানদের লাশ কুকুর শিয়ালের মত মরু বিয়াবনে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। আজ তারা চারিদিকে অন্ধকার দেখছে। এই অসহায় মযলুম মুসলমানদের সাহায্য করার কি কেউ আছে? উল্লেখ্য যে, এখানে দু’টি প্রশ্ন আসতে পারে-

১. তাহ’লে ইসরায়েলের সাথে ইরানের এই বাহ্যিক দ্বন্দ্বের কারণ কি?

২. আমেরিকা কেন তাহ’লে বাশারের বিরুদ্ধে সিরিয়াতে হামলার কথা বলছে?

প্রথমটির কারণ হচ্ছে, ইরানকে বীর মুজাহিদ বানানোর মাধ্যমে শী‘আ মাযহাব প্রচারের সুযোগ করে দেয়া। এইভাবে ইরানের জনসমর্থন বাড়লে সে মুসলিম বিশ্বের আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব হাসিল করে নিতে পারে যা সবসময় মক্কা-মদীনার শাসকদের হাতে থেকেছে। তখন মুসলিম নিধন আরো সহজতর হবে। যদি মুসলমানদের ইরানমুখী বানানো যায় এবং সঊদীসহ অন্য সুন্নী আরবদেশগুলোর লেজুড়বৃত্তিকে পুঁজি করে তাদের প্রতি ঘৃণা তৈরী করা যায়, তাহ’লে ঐ দেশগুলো আক্রমণের সময় বা ইরানকে দিয়ে যেভাবে ইরাককে শেষ করা হয়েছে সেভাবে সঊদীকেও শেষ করার সময় মুসলমানদের এ সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগানো যাবে।

আর দ্বিতীয় প্রশ্নের ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, তা হচ্ছে ইসলামবিরোধীদের দুশমন মূলতঃ তাওহীদপন্থী জনতা। যেমন আমাদের সরকার যদি ইসলাম বিরোধী হয় এবং তাওহীদপন্থী জনতার উপর অত্যাচার চালায় তাহ’লে প্রথমতঃ ইসলাম বিরোধী শক্তির আমাদের দেশ আক্রমণের প্রয়োজন হবেনা। তারপরেও যদি হামলা করে তাহ’লে তার লক্ষ্য কখনো আমাদের সরকার হবেনা বরং তাওহীদপন্থী জনতা হবে। ঠিক অনুরূপ আমেরিকা যদি সিরিয়া আক্রমণ করে তাহ’লে তার উদ্দেশ্য বাশার আল-আসাদ ও তার গোত্র হবে এটা একটা হাস্যকর ব্যাপার। কেননা তারা তো মোট জনতার মাত্র ১০%। সুতরাং ৯০% তাওহীদপন্থী জনতাকে শেষ করার জন্য আমেরিকা সিরিয়া আক্রমণ করবেনা এটাই অস্বাভাবিক বরং করাটাই স্বাভাবিক। হ্যাঁ, আমেরিকার কাজ যদি বাশার আল-আসাদ নিজেই সম্পন্ন করে তাহ’লে হয়তোবা প্রয়োজন পড়বেনা। পরিশেষে শী‘আদের চক্রান্ত থেকে সাধারণ মুসলিম জনতাকে সতর্ক করা আমাদের প্রত্যেকেরই ঈমানী দায়িত্ব। সাথে সাথে সিরিয়ার মযলুম জনসাধারণ যালিমদের হাত থেকে রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব। কিছু না পারলে অন্ততপক্ষে হৃদয়ের গহীন থেকে তাদের জন্য দো‘আ তো করতে পারি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন এবং পথভ্রষ্ট, যালিমদেরকে সুমতি দিন আমীন! 

-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button