তথ্য-প্রযুক্তি/মিডিয়া

একটি বিজ্ঞাপন : কয়েকটি প্রশ্ন

(২০১১ সাল)

নীতিহীন পুঁজিবাদের আধিপত্যের যুগে বিজ্ঞাপন ব্যবসা এখন তুঙ্গে। বর্তমানে দেশের সর্বত্র সব মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। এসব বিজ্ঞাপনের অধিকাংশই নীতি-নৈতিকতার মানদণ্ডে অনুত্তীর্ণ। বিজ্ঞাপন-কুশীলবদের পোশাকের ফ্যাশন বা বাচনিক স্টাইল- কোনোটাই দেশের বা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মানানসই নয়। অনেক বিজ্ঞাপনে নারীকে উপস্থাপন করা হয় পণ্য হিসেবে। কিছু বিজ্ঞাপন সরাসরি ইভটিজিংয়ের রসদ যোগান দেয়। আবার অনেক বিজ্ঞাপন ব্যাখ্যাতীত অশ্লীতার দোষে দুষ্ট। ইতোপূর্বে এইডস বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির বিজ্ঞাপনে কনডমের বাজির দৃশ্য সুস্থ বোধসম্পন্ন অনেক অমুসলিম অভিভাবককে সমালোচনামুখর করে তুলেছিল। এখনো রোজ বেড়ে চলেছে শিল্প রুচিহীন বিকার মানসিকতার বিজ্ঞাপন নির্মাণ ও তার প্রচার। মাঝে মধ্যেই এ সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখা পত্র-পত্রিকা মারফত নজরে পড়ে। বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিকের ঈদ সাময়িকীতে বিজ্ঞাপনে শারীরিক কসরতের সমালোচনা করে জনপ্রিয় কৌতুকবিদ হানিফ সংকেত একটি সরস রচনাই লিখেন ‘কী জ্ঞাপনের বিজ্ঞাপন’ শিরোনামে। মূলত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষকে জ্ঞাপন করা হয় তথা কোনো পণ্যের সংবাদ দেয়া হয়। কিন্তু বিজ্ঞাপনে পণ্যের চেয়ে নারীদের শরীরী উপস্থাপনা এত বেশি যে এটি কি পণ্য না শরীরের বিজ্ঞাপন সে প্রশ্ন উত্থাপনও সঙ্গত হয়ে ওঠে?

অনেক দিন ধরে গ্রামীণফোনের একটি বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়ে আসছে। গ্রামীণফোন ইন্টারনেট মোডেমের বিজ্ঞাপন সেটি। ‘আলো আসবেই’ শীর্ষক এই বিজ্ঞাপনটিতে দেখানো হয় প্রভাতপূর্ব আঁধার চিরে আলো ফুটছে। দুয়ার-বাতায়ন পেড়িয়ে ঘরে অনাবিল আলো ঢুকছে। আলোর দেখা পেয়ে সবাই ছুটছে বাহির পানে। এরপরেই দেখানো হচ্ছে, গ্রাম্য মক্তবের বালক-বালিকা দল আলোর দেখে তাদের কায়দা-আমপারা ও কুরআন-কেতাব ফেলে বাইরে ছুটছে।

ছোটবোনের জন্য সিম কিনতে গ্রামীণফোনের এক কাস্টমার সেন্টারে গিয়েছিলাম। সেখানে স্থাপিত বিজ্ঞাপনের পর্দায় প্রথম এ বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। অমনোযোগের সঙ্গে প্রথমবার দেখলেও টুপি-পাঞ্জাবি পরিহিত বালকদের রেহাল-কায়দা ফেলে ছুটে যাওয়ার দৃশ্য আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। মুহূর্তকাল পরেই আমার দৃষ্টি ফিরে এলো সেই পর্দার দিকে। সবিস্ময়ে আমি লক্ষ্য করি মডেমের ওপর নির্মিত এই বিজ্ঞাপনটি। চেষ্টা করি এর তাৎপর্য অনুধাবন করতে। অবশ্য বেশি দেরি লাগে না। আমার সামনে পরিষ্কার ধরা পড়ে, কুরআনের শিক্ষাকে যারা পশ্চাৎপদতা বলে অভিহিত করেন, মাদরাসা শিক্ষাকে যারা জঙ্গিবাদের উস্কানিদাতা বলে মনে করেন, তাদের উর্বর মগজ থেকেই ধার নেয়া হয়েছে এই বিজ্ঞাপনের থিম। শিউরে উঠলাম এ কথা জেনে, বিজ্ঞাপনটি নাকি টিভি চ্যালেনগুলোতেও ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত হয়েছে।

এ দৃশ্য দিয়ে স্পষ্টতই এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, মক্তব তথা কুরআনের শিক্ষা মানে অন্ধকারের শিক্ষা! ইন্টারনেটের আলো আসা মাত্র এ শিক্ষা ফেলে সবার ছুটে যাওয়া থেকে অন্তত তা-ই প্রতিভাত হয়। কুরআন ও কুরআনী শিক্ষার প্রতি অভিভাবকদের নিরুৎসাহিত করতে চলচ্চিত্র তৈরির পর এখন দেখি বিজ্ঞাপন বানানোও শুরু হয়েছে! জানি না এ কোন অশনি সংকেত। দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করি আমাদের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও বামপন্থী ভাইয়েরা ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি জেনে না জেনে বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব লালন করেন।

এখন প্রশ্ন হলো, আসলেই কি কুরআনী শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে অন্ধকারের শিক্ষা দেয়া হয়? বাস্তবেই কি কুরআনের শিক্ষা অন্ধতা ও উগ্রতা ছড়ায়? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আসুন নিচের প্রশ্নগুলোর প্রতি একটু নজর দেয়া যাক।

ক. দেশে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। যৌতুকের বলি হয় অসহায় নারী। ধর্ষণের শিকার হয় বিপন্ন রমণী। এসব অপরাধের কয়টি সংঘটিত হয় কুরআন পড়ুয়াদের হাতে?

খ. প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটছে। ইভটিজিংয়ের জ্বালা সইতে না পেরে অনেকে তরুণী আত্মহত্যা করছে। ইভটিজিংয়ে বাধা দেয়ায় শিক্ষককে পর্যন্ত পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। কঠোর আইন আর দেশজুড়ে সমালোচনা সত্ত্বেও এই বখাটেদের নিবৃত করা যাচ্ছে না। এদের কয়জন মক্তবে পড়ুয়া?

গ. প্রেম-পরকীয়ার রেশ ধরে অহরহ খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে। স্বামীর হাতে স্ত্রী আবার স্ত্রীর হাতে স্বামীও খুন হচ্ছে। কোনো প্রচার বা সচেতনতা অভিযান চালিয়েই এদের বাঁচানো যাচ্ছে না। এসব অমানুষদের কয়জন কুরআনী শিক্ষায় শিক্ষিত?

ঘ. কয়দিন পরপরই মিডিয়ায় সশস্ত্র ছাত্রদের মহড়া দেখা যায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। হল দখল ও চাঁদাবাদি-টেন্ডারবাজির শিকার হয়ে খুন হয় নিরপরাধ ছাত্র-ছাত্রীরা। এসব কি কুরআন শিক্ষার প্রতিষ্ঠান?

ঙ. দেশে মাদক ও অবৈধ দেহ ব্যবসা দৈনিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকাসক্তদের হাতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে নারী ও শিশু এমনকি আপন পিতামাতাকে। আবাসিক হোটেলগুলো থেকে আপত্তিকর অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হররোজ ধরে পড়ছে অনেক স্মার্ট ও ভদ্রবেশী তরুণ-তরুণী। এরা কি ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত?

আমরা নিশ্চিত কোনো কট্টর কুরআন বিদ্বেষীও এসবের উত্তরে কুরআনী শিক্ষার প্রশংসা বৈ নিন্দা গাইতে পারবেন না। তাহলে কুরআনী শিক্ষার দিকে কেন অন্ধকারের ইঙ্গিত? আসলে এটি ইউরোপ-আমেরিকা ফেরত বুদ্ধিবেপারীদের দালালি আবিষ্কার। এ শুধু ইসলাম আর ইসলামী পোশাকে যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের সুরে কথা বলা। যে পশ্চিমা বিশ্ব সন্ত্রাসের মিথ্যা অভিযোগে ইরাক-আফগানে হামলা করে এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থায় পড়েছে, মানবাধিকারের বুলি ফেরি করে বেরানো যে পশ্চিমা প্রভুরা ইরাক-আফগানে নিরীহ নাগরিকদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতনের সর্বশেষ গোপন নথি প্রকাশ হওয়ায় মহাবিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে- এ কেবল তাদের নির্দেশে পুচ্ছ দুলনো।

কুরআনী শিক্ষাকে কটাক্ষ করার এই রোগ ইদানীং পশ্চিমের দানাপানি না পাওয়া অনেকের মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছে। সাদা প্রভুদের দান-দাক্ষিণ্যের ভাগ নিয়ে বিলাসী জীবনের স্বপ্নে বিভোর অনেক কালো মনের মানুষও এ দেশে জন্মগ্রহণ করেছে। এই শ্রেণীর লোকেরাই নির্মাণ করেছে কুরআনী শিক্ষা তথা মক্তব-মাদরাসার দিকে মন্দ ও কুৎসিত ইঙ্গিতপূর্ণ চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’ ও ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ এবং মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘রানওয়ে’ ও ‘প্রতীক্ষা’ ইত্যাদি সিনেমা। খবরের কাগজ ও মিডিয়ার লোকদের মাধ্যমে অন্তত আমি এমনই জেনেছি।

অথচ বাস্তবে একমাত্র কুরআনী শিক্ষাই পারে মানুষকে আলোকিত করতে। শুধু পারে তাই নয়; অতীতে পেরেছে, বর্তমানে পারছে এবং ভবিষ্যতেও পারবে। অতীতে এ কুরআনী আখলাকের বাস্তব নমুনা পেশ করেছেন অন্ধকার পৃথিবীকে আলোয় ভরে দিতে পৃথিবীতে আগমনকারী মুহাম্মাদ রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর জীবন এতটা আলোকময় ছিল যে অমুসলিম মনীষীরাও তা স্বীকার করেছেন অকৃপণভাবে। তাই তো তাঁকে একজন অমুসলিম মাইকেল এইচ হার্ট পৃথিবীর সেরা শত মনীষীর জীবনীতে তাঁকে প্রথম স্থানে রাখেন। কী এমন উপাদান, কী এমন বৈশিষ্ট ছিল তাঁর জীবনীতে? চলুন তবে তাঁর সহধর্মিনীর জবানীতে শোনা যাক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র কেমন ছিল এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,

كَانَ خُلُقُهُ الْقُرْآنَ

‘হুবহু কুরআনই ছিল তাঁর চরিত্র।’ [মুসনাদ আহমদ : ২৫১০৮; আল-আদাবুল মুফরাদ : ৩০৮।]

আর ভবিষ্যতেও পারার গ্যারান্টি শুধু কুরআনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ, কিয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত থাকার গ্যারান্টি শুধু এ মহাগ্রন্থেরই রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,

﴿إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ﴾ [الحجر :09]

‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাযতকারী।’ {সূরা আল-হিজর, আয়াত : ০৯}

কুরআনের শিক্ষাই চৌদ্দশ বছর আগে জাহিলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত মরু অধিবাসীদের পরিণত করেছিল ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবগোষ্ঠী। এ কুরআনী শিক্ষাই পেরেছিল অশান্তি ও হানাহানিপূর্ণ পৃথিবীকে শান্তিতে ভরে দিতে। যেদিন থেকে ধূলির ধরায় কুরআনের আগম ঘটেছে সেদিন থেকেই এ শিক্ষা তার ধারক-বাহকদের বানিয়েছে আলোকিত মানুষ। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সব দেশে তারাই সবচে সুনাগরিক যারা কুরআনের আলোয় আলোকিত। কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

﴿قَدۡ جَآءَكُم مِّنَ ٱللَّهِ نُورٞ وَكِتَٰبٞ مُّبِين﴾ [الحجر :[15

‘অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে।’ {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ১৫) অর্থাৎ, এ কুরআন মানব জীবনে আলোর উৎস। মানব চরিত্রে আলোর যোগানদাতা। কুরআনের আলোয় উদ্ভাসিত জীবনই আলোকিত জীবন।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, আমাদের মিডিয়াগুলো এইডস, মাদক ও যৌতুকের বিরুদ্ধে অনেক বেশি সরব। শুধু তাই নয়, অনেক পত্রিকাকে দেখা যায়, মাদক ও যৌতুকের বিরুদ্ধে জেহাদ করতে। অথচ তারা একটিবার একথা বলেন না, বাংলাদেশের লাখ লাখ কুরআনী শিক্ষায় শিক্ষিত লোকের কেউই মাদকাসক্ত নয়। এদের কাউকে ধূমপান ছাড়াতে কোনো প্রচারণাও চালাতে হয় না। এদের কেউই যৌতুকের জন্য স্ত্রীর ওপর নির্যাতন চালান না। এরা সবাই সব ধরনের জেনা-ব্যভিচার থেকে দূরে থাকার ফলে এইডসসহ যাবতীয় মারণব্যাধি থেকে মুক্ত।

কৈশোরের ঊষালগ্নে যখন শিশুদের বুদ্ধির উন্মেষ ঘটে তাদের হৃদয়-মন থাকে তখন সফেদ নির্মল। সেখানে যা-ই রাখা হয় স্থায়ীভাবে তা-ই অঙ্কিত হয়ে যায়। সেখানে যদি সত্য, সুন্দর ও সুকর্মের বীজ বপণ করা হয়, তা-ই হয় তার আজীবনের পাথেয়। এ জন্যই প্রতিটি বুদ্ধিমান জাতি নিজ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিস্তরঙ্গ শৈশবে তার ভেতরে আদর্শ ও ঐতিহ্যের বীজ বুনে দেয়। শিশুরা যদি শিক্ষা জীবনের শুরুতেই মক্তব বা পাঠশালায় কুরআনের শিক্ষায় আলোকিত হতে পারে, তাহলে ভবিষ্যৎ জীবনে তারা যেখানেই পড়ুক কিংবা যাই পড়ুক তা তাদেরকে সুপথ দেখাবে।

তাই আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই, কুরআনী শিক্ষার প্রতি সব ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। সন্ত্রাস ও অশান্তিমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে চাইলে, আদর্শ ও সুনাগরিক সৃষ্টি করতে হলে কুরআনী শিক্ষার প্রসার ঘটান। দেশের প্রতিটি এলাকায় কুরআন শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুন। নতুন শিক্ষানীতিতে কুরআনী শিক্ষাকে উপেক্ষা নয়; বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় দেশের সুখ-সমৃদ্ধি অধরাই থেকে যাবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবার জীবনকে কুরআনের আলোয় আলোকিত করুন। কুরআনের ছাঁচে আমাদের জীবন গড়ার তাওফীক দিন। আমীন।

– আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : ড. মো: আব্দুল কাদের

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button