ধর্মীয় উত্সব/উপলক্ষ

উট-গরুতে শরীকানায় কুরবানী দেয়া প্রসঙ্গ

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কুরবানী করা একটি প্রমাণিত ইবাদত, যাকে অধিকাংশ উলামা সুন্নতে মুআক্কাদাহ (তাগিদী সুন্নত) বলেছেন এবং ক্ষমতাবানদের তা পরিত্যাগ করা অনুচিত মনে করেছেন। [আল্ মুগনী, ইবনু কুদামাহ, ১৩/৩৬০, ফিকহুস্ সুন্নাহ, সাইয়্যেদ সাবেক,৩/১৯৫]

তাই প্রতি বছর যখন কুরবানীর সময় উপস্থিত হয়, তখন মুসলিম সমাজে এই ইবাদতটি যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়। মুসলিম ভাইয়েরা তাদের সাধ্যানুযায়ী ছাগল, ভেড়া, গরু ও উট দ্বারা কুরবানী দিয়ে থাকেন। অনেকে গরু বা উটে শরীক হয়ে ৭ ভাগের এক-দুই ভাগেও কুরবানী দিয়ে থাকেন। কিন্তু এই সময় একটি প্রসঙ্গ প্রায় প্রায় উঠে আসে যে, এই রকম শরীকানায় কুরবানী দেওয়া বৈধ না অবৈধ? অনেকের ধারণা, মুকীম ব্যক্তি [মুসাফির নয় এমন ব্যক্তি] উট-গরুর সাত ভাগের কোন এক ভাগে অংশী হয়ে কুরবানী দিতে পারে না। কারণ স্বরূপ তারা মনে করেন, শরীকানায় কুরবানী দেয়াটা মুসাফির বা সফরের সাথে সম্পৃক্ত; মুকীমের সাথে নয়। তাই এই বিষয়টির শারয়ী সমাধানার্থে কিছু আলোকপাত করার মনস্থ করেছি। ওয়ামা তাওফীকী ইল্লা বিল্লাহ।

এ বিষয়ের দুটি পরিভাষা: আমরা শুরুতে কুরবানী সংক্রান্ত দুটি পরিভাষা জেনে নিব যা, আমাদের আলোচ্য বিষয়টি ভাল ভাবে জানতে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।

  • উযহিয়া: (আমাদের সমাজে যা কুরবানী নামে পরিচিত) সেই গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তুকে বলা হয়, যা কুরবানীর দিন সমূহে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে বাড়িতে যবাই করা হয়। [আল্ মুলাখ্খাস আল্ ফিকহী/২১৩]
  • হাদ্ঈ: সেই চতুষ্পদ জন্তুকে বলা হয়, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানীর দিনগুলিতে হারামে (মক্কায়) যবাই করা হয় ‘তামাত্তু’ কিংবা ‘কিরান’ হজ্জ করার কারণে কিংবা হজ্জ বা উমরার কোন ওয়াজিব কাজ ছুটে যাওয়ার কারণে কিংবা ইহরাম অবস্থার নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করার কারণে। [ফিক্হ বিশ্বকোষ,৫/৭৪, শব্দ উয্হিয়্যাহ] যেহেতু এই পশুকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে হাদীয়া করা হয়, তাই তাকে হাদ্ঈ বলে। [আল্ মুলাখ্খাস আল ফিকহী, ড.ফাউযান,৩১৩]

উভয়ের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্যটি হচ্ছে, হাদ্ঈ হজ্জ বা উমরা পালনকারীর পক্ষ থেকে মক্কায় যবাই করা হয় এবং উযহিয়া হজ্জ বা উমরা পালনকারী নয়, এমন ব্যক্তির মাধ্যমে নিজ বাসস্থানে যবাই করা হয়।

  • হজ্জ ও উমরায় হাদ্ঈতে শরীক হওয়ার প্রমাণ: হজ্জ কিংবা উমরা করার সময় একটি হাদ্ঈতে সাত ব্যক্তি শরীক হয়ে কুরবানী দেয়ার একাধিক প্রমাণ সহীহ হাদীসে বিদ্যমান। আমরা এখানে তারই কয়েকটি উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ।

 عن جابرٍ، قال: خرجنا مع رسولِ الله صلى الله عليه و سلم مُهِلِّيْنِ بالحَجِّ فأمرنا رسول الله صلى الله عليه و سلم أن نشترِكَ في الإبل والبقرِ، كل سبعةٍ منا في بَدَنَةٍ. رواه مسلم

“জাবের (রাযি:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা নবী (সা:) এর সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হলাম। অতঃপর তিনি (সা:) আমাদের উট ও গরুতে শরীক হওয়ার আদেশ দেন। আমাদের মধ্যে প্রত্যেক সাত জনকে একটি উটে”। [মুসলিম, অধ্যায়, হাজ্জ, অনুচ্ছেদ নং ৬২, হাদীস নং ৩৫১]

عن جابر بن عبد الله، قال: حججنا مع رسول الله صلى الله عليه و سلم، فنحرنا البعير عن سبعة، والبقرة عن سبعة. رواه مسلم

আবদুল্লার পুত্র জাবির থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হজ্জ করলাম। অতঃপর সাত জনের পক্ষে একটি উট নহর করলাম এবং সাত জনের পক্ষে একটি গাভী। [মুসলিম, অধ্যায়, হাজ্জ, অনুচ্ছেদ নং৬২, হাদীস নং ৩৫১]
এ প্রসঙ্গে জাবের (রাযি:) কর্তৃক বর্ণিত আরো কয়েকটি হাদীস সহীহ মুসলিমের উপরোক্ত অনুচ্ছেদে দেখা যেতে পারে।

  • উযহিয়া বা কুরবানীতে শরীক হওয়ার প্রমাণ:

উপরে বর্ণিত হদীসগুলিতে শরীক হওয়ার বিষয়টি যেহেতু হজ্জ-উমরার হাদ্ঈতে সংঘটিত হয়েছে, তাই অনেকে হয়ত বিষয়টা হাদ্ঈর সাথে সম্পৃক্ত মনে করতে পারে, যদিও তা শুধু হাদ্ঈর সাথে নির্দিষ্ট নয়। সামনে  এ প্রসঙ্গে আলোচনা আসছে। তবুও এখন আমরা উযহিয়া বা কুরবানীতে শরীক হওয়ার প্রমাণ নির্দিষ্ট ভাবে জানবো ইনশাআল্লাহ।

عن ابن عباس قال: كنا مع رسول الله صلى الله عليه و سلم في سفرِ فحضر الأضحى، فاشتركنا في البقرة سبعة و في البعير عشرة. [رواه الترمذي والنسائي وابن ماجه]

ইবনে আব্বাস (রাযি:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর সময় উপস্থিত হল। তাই আমরা একটি গাভীতে সাত জন শরীক হলাম এবং উটে দশ জন। [তিরমিযী, অধ্যায়, আযাহী, অনুচ্ছেদ নং ৭, হাদীস নং১৫৩৭/ নাসাঈ, অধ্যায়, যাহাইয়া, অনুচ্ছেদ নং ১৫ হাদীস নং ৪৪০৪/ ইবনু মাজাহ, অধ্যায়, আযাহী, নং ৩১৩১/ মুসনাদ আহমদ,৩/৩০৩]
হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী হাসান বলেছেন এবং শাইখ আলবানী (রহ) সহীহ বলেছেন। [দেখুন সুনান আত-তিরমিযী হাদীস নং ১৫০১ শাইখ আলবানীর হুকুম সহ।]

উপরোক্ত হাদীস থেকে মুহাদ্দিসগণ যা বুঝেছেন:
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মুহাদ্দিসগণ তাঁদের হাদীস গ্রন্থে যেই সব বাব/অনুচ্ছেদ নির্ধারণ করেন, সেটাই তাঁদের ফিক্হ তথা বুঝ হিসাবে পরিচিত। তাই আমরা এখানে দেখবো যে, উপরোক্ত হাদীসটি বিভিন্ন মুহাদ্দিসগণ কোন্ নামের অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন বা তাঁরা সেই অনুচ্ছেদের শিরোনাম কী নির্ণয় করেছেন, যার মাধ্যমে আমাদের বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে।
ক- ইমাম তিরমিযী (রহ) হাদীসটি যেই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন, তার শিরোনাম হচ্ছে, ‘বাবুন্ ফিল্ ইশরাকি ফিল্ উয্ হিয়া’ । অর্থাৎ কুরবানীতে শরীক হওয়ার অনুচ্ছেদ। অতঃপর তিনি হুদায়বিয়ায় উট ও গরুতে ৭ জন করে শরীক হয়ে কুরবানী করার আর একটি হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন:

والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم و غيرهم.

‘এর উপর সাহাবা এবং অন্যান্য আহলে ইলমগণের আমল রয়েছে’।
এই বাক্যটির ব্যাখ্যায় সাহেবে তুহ্ফা মুবারক পূরী বলেন: ‘অর্থাৎ হাদ্ঈ ও কুরবানীর উট ও গরুতে সাত জন শরীক হওয়ার বৈধতার (আমল)’। [তুহ্ফাতুল আহ্ ওয়াযী,৫/৭৩]
খ- ইমাম নাসাঈ যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি নিয়ে আসেন, তার নামকরণ করা হয় এই ভাবে: ‘বাবু মা তুজযিউ আনহুল্ বাদানাতা ফিয্ যাহাইয়া’। অর্থ, অনুচ্ছেদ, কুরবানীতে একটি উট যত জনের পক্ষে যথেষ্ট’। [নাসাঈ, অধ্যায়, যাহাইয়া, অনুচ্ছেদ নং ১৫]
গ- ইবনু মাজাহ আযাহী/কুরবানী অধ্যায়ে যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি উল্লেখ করেন,তার শিরোনাম এইরূপ: ‘বাবু আন্ কাম্ তুজযিউল্ বাদানাতা ওয়াল্ বাক্বারাহ’। অর্থ, অনুচ্ছেদ, একটি গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট’? [হাদীস নং ৩১৩১]
ইমাম শাওকানী (রহ) আলোচ্য হাদীসের শেষাংশ (এবং একটি উট দশ জনের পক্ষে) এর ব্যাখ্যায় বলেন: ‘এটা দলীল যে কুরবানীতে একটি উট ১০ জনের পক্ষে যথেষ্ট’। [নায়লুল আউতার,৫/১৩৪]
হুদাইবিয়ার ঘটনায় সাহাবিগণ আল্লাহর রাসূলের সাথে একটি উট ও গরু সাত জনের পক্ষে কুরবানী করেন মর্মে যেই হাদীসটি মুসলিম সহ অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা করেন। সেই সম্পর্কে সাহেবে আউনুল মা’বুদ বলেন: ‘সুবুলে বলা হয়েছেঃ হাদীসটি উট ও গরুতে শরীক হওয়া জায়েজের প্রমাণ এবং উভয়ে সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট। এটা হাদ্ঈর ক্ষেত্রে এবং কুরবানীকে এর উপর কিয়াস করা হবে; বরং কুরবানীর সম্পর্কে নাস বা দলীল এসেছে’।[আউনুল মা’বূদ,৭/৩৬২] অতঃপর তিনি ইবনে আব্বাস (রাযি:) থেকে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করেন, যাতে গরুতে ৭ জন এবং উটে ১০ জন শরীক হওয়ার বর্ণনা এসেছে।
মুহাদ্দিসগণের উপরোক্ত অনুচ্ছেদ সমূহ ও বিদগ্ধ উলামাগণের ব্যাখ্যানুযায়ী আমরা একথা স্পষ্ট রূপে বুঝতে সক্ষম যে, হাদীসটি থেকে তাঁরা গরু ও উটের কুরবানীতে শরীক হওয়ার বৈধতা বুঝেছেন, মুকীম ও মুসাফিরের মধ্যে পার্থক্য করা ছাড়াই। অর্থাৎ হাদীসটি কেবল সফর অবস্থায় কুরবানীতে শরীক হওয়ার সম্পর্কে নির্দিষ্ট, এমন নয়। তাই তাঁদের কেউই এটা সফরের সাথে নির্দিষ্ট, এমন কোন অনুচ্ছেদ লেখেন নি আর না ব্যাখ্যাকারীগণ সেই দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
উল্লেখ থাকে যে, একটি উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট? এ বিষয়ে মত ভেদ রয়েছে। জমহূর সাত জনের পক্ষে মনে করেন কিন্তু ইসহাক্ব বিন রাহ্ ওয়াইহ্ এবং ইবনু খুজাইমা ১০ জনের পক্ষে মনে করেন। [নায়লুল আউত্বার,৫/১৫৭/ তুহফাতুল্ আহওয়াযী,৫/৭২]

কুরবানীতে একাধিক ব্যক্তির শরীক হওয়া সম্পর্কে ফুকাহাগণের মতামত:

  • ১- ইমাম নাওয়াভী বলেন: ‘কুরবানীর উদ্দেশ্যে সাত ব্যক্তির একটি উটে কিংবা গরুতে শরীক হওয়া জায়েজ। তারা সকলে এক পরিবারের হোক কিংবা বিভিন্ন পরিবারের। কিংবা কারো গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্য থাক (আর অন্যদের নৈকট্য উদ্দেশ্য) এমতাবস্থায় নৈকট্য কামনাকারীর পক্ষে তা যথেষ্ট। সেই কুরবানীটা মানতের হোক কিংবা নফল কুরবানী। এটা আমাদের মাজহাব এবং এটাই আহমদ, দাঊদ ও জমহূর উলামার কথা। তবে দাঊদ নফল কুরবানীতে শরীক বৈধ বলেছেন ওয়াজিবে নয়’। [কিতাবুল মাজমূ, নাওয়াভী,৮/৩৭১] অতঃপর তিনি প্রমাণ স্বরূপ সহীহ মুসলিমে জাবের (রাযি:) হতে বর্ণিত ঐ হাদীসদুটি উল্লেখ করেন, যা আমরা হাদ্ঈতে শরীক হওয়ার প্রমাণ শিরোনামে উল্লেখ করেছি।
  • ২- ইবনু কুদামাহ (রহ) তাঁর প্রসিদ্ধ মুগনী গ্রন্থে ১৭৬৮ নং মাসআলার ব্যাখ্যায় বলেন: ‘ফলকথা উট ও গরুতে সাত জন শরীক হয়ে কুরবানী দেওয়া বৈধ। সেটা ওয়াজিব হোক কিংবা নফল। তারা সকলে নৈকট্যের আশাবাদী হোক কিংবা কেউ নৈকট্যের আর অন্য কেউ গোশতের। এটাই শাফেয়ী বলেন। মালেক বলেন: হাদ্ঈতে শরীক হওয়া জায়েজ নয়’। [আল মুগনী, ১৩/৩৯২]
  • ৩- ইনবু হায্ম (রহ) তাঁর আল্ মুহাল্লা গ্রন্থে ৯৮৪ নং মাস্আলা বর্ণনায় বলেন: ‘একটি কুরবানীতে শরীক হওয়া বৈধ, সেই দলটি একটি বাড়ির সদস্য হোক কিংবা বিভিন্ন বাড়ির এবং এক জনের একাধিক কুরবানী করাও বৈধ, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি ভেড়া কুরবানী করেন যেমন একটু আগে বর্ণনা করেছি এবং তিনি(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অতিরিক্ত করতে নিষেধ করেন নি। কুরবানী একটি সৎ কাজ। আর বেশী বেশী সৎ কাজ করা উত্তম।
  • আবু হানীফা, সুফ্ইয়ান সাওরী, আওযায়ী, শাফেয়ী, আহমদ, ইসহাক্ব, আবু সাউর এবং আবু সুলায়মান বলেন: একটি গরু কিংবা একটি উট সাত কিংবা তার থেকে কম সংখ্যকের পক্ষে যথেষ্ট, তারা পারস্পারিক পরিচিত হোক অথবা না হোক। তারা তাতে শরীক হতে পারে, তবে এর থেকে বেশী সংখ্যার পক্ষে যথেষ্ট হবে না’। [আল্ মুহাল্লা, ইবনু হায্ ম,৪/৩৮১ পৃঃ, দারুল ফিকরে ছাপা]
  • ৪- মুতাআখ্খির ফকীহদের মধ্যে সাইয়্যেদ সাবেক (রহ) বলেন: ‘কুরবানী যদি উট কিংবা গরু হয়, তাহলে তাতে শরীক হওয়া জায়েজ। আর একটি গরু কিংবা একটি উট সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে, যদি তারা সকলে কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য চায়। জাবের (রাযি:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমরা হুদায়বিয়ায় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে একটি উট সাত জনের পক্ষে এবং একটি গরু সাত জনের পক্ষে কুরবানী করেছিলাম”। মুসলিম, আবু দাঊদ এবং তিরমিযী। [ফিকহুস্ সুন্নাহ, সায়্যেদ সাবিক,৩/১৯৮]

এতক্ষণে আমরা বিষয়টির সম্পর্কে চার জন বিশেষ ইসলামী পণ্ডিতের মন্তব্য জানলাম। দেখা যাচ্ছে তাঁরা সকলে সফর ও মুকীমের পার্থক্য ছাড়াই উট কিংবা গরুর কুরবানীতে সাত ব্যক্তির শরীক হওয়া বৈধ মনে করছেন। তবে তাদের কাছে যেই বিষয়টির মতভেদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা হল: সেই সাত ব্যক্তির একই পরিবারভুক্ত হওয়া আবশ্যক না বিভিন্ন পরিবারের ৭ জন ব্যক্তির পক্ষেও সেই উট-গরুতে শরীক হওয়া চলবে?

আরো একটি মতভেদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ৭ জন শরীক হওয়ার সময় যদি কারো উদ্দেশ্য আল্লাহর নৈকট্য না থাকে; বরং গোশত খাওয়া উদ্দেশ্য হয়, তাহলে শরীক হওয়া যাবে কি যাবে না? কিন্তু কুরবানীতে শরীক হওয়ার বৈধতায় তাঁদের মতভেদ নেই।

এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, তাঁরা হাদ্ঈ ও উযহিয়াতে শরীক হওয়ার বিষয়টি আলাদা আলাদা ভাবে দেখেন নি; বরং হাদ্ঈতে শরীক হওয়ার দলীলগুলিকেই কুরবানীতে শরীক হওয়ার দলীল হিসাবে দেখেছেন। তাই তাঁদের ফিক্হ/জ্ঞান এবং তাঁদের ইস্তিদ্লাল/প্রমাণকরণ পদ্ধতি আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ হতে পারে না কি?

উট কিংবা গরুর ভাগে শরীক হয়ে কুরবানী দেয়া সম্পর্কে সউদী স্থায়ী উলামা পরিষদের ফাতওয়াঃ
প্রশ্ন: কুরবানীতে শরীক হওয়া জায়েজ কি, মুসলিমদের কত সংখ্যক লোক তাতে শরীক হতে পারে, তারা কি এক পরিবারের হবে এবং কুরবানীতে শরীক হওয়ার বিষয়টি কি বিদআত?
উত্তর: [তারা প্রথমে একটি ছাগলের কুরবানী, যা একটি বাড়ির সদস্যদের পক্ষে যথেষ্ট তা উল্লেখ করেন, অতঃপর বলেন] এবং একটি উট ও একটি গরু সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট। সেই সাত জন একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হোক কিংবা বিভিন্ন পরিবারের, তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকুক কিংবা না থাকুক; কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  সাহাবিদের মধ্যে প্রত্যেক সাত জনকে একটি উটে ও গরুতে শরীক হওয়ার অনুমতি দেন। ওয়াল্লাহু আ’লাম। [ফাতাওয়াল্ লাজনা আদ্দায়িমাহ,১১/৪০১-৪০২,ফাতওয়া নং ২৪১৬]

যারা ভাগা কুরবানীকে সফরের সাথে খাস বা নির্দিষ্ট মনে করেন:
প্রকাশ থাকে যে, দেশের এক জন বিশিষ্ট লেখক তাঁর ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আকিকা’ নামক গ্রন্থে এবং তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত ধর্ম, সমাজ ও সাহিত্য বিষয়ক মাসিক গবেষণা পত্রিকায় শরীকানায় কুরবানী দেওয়াটা সফর অবস্থার সাথে খাস বা নির্দিষ্ট বলে ফাতওয়া দেন। অর্থাৎ মুসাফির হলে সাত জন শরীক হয়ে একটি উট কিংবা গরু কুরবানী দেওয়া জায়েজ কিন্তু মুক্বীম (নিজ বাসায় অবস্থানকারী) হলে তা জায়েজ নয়। [মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীকা, পৃঃ১৭-২০] এই ফাতওয়ার কারণে সমাজে কিছু লোক শরীকানায় কুরবানী দেওয়া না জায়েজ মনে করছেন, তাই বিষয়টির সমাধান হওয়া উচিৎ।

এই মত পোষণকারী ভাইদের বলবো:
১- কুরআন-সুন্নাহকে বুঝার ব্যাপারে সালাফী নীতি হচ্ছে, তা ঐভাবে বুঝা যে ভাবে আমাদের পূর্ব সুরীগণ বুঝেছেন। এই নীতির আলোকে আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের মতামত ভাল ভাবে জানতে পারছি যে, তাঁরা কেউই এই মত প্রকাশ করেন নি যে, ভাগা কুরবানীর বিষয়টি মুসাফিরের সাথে সম্পৃক্ত; বরং তারা বিষয়টি আম/ব্যাপক হিসাবে বুঝেছেন এবং তা মুক্বীমদের জন্যেও প্রযোজ্য মনে করেছেন। আর তারা যেভাবে বুঝতেন সেভাবে বুঝাই উত্তম।
২- আল্লাহ তাআ’লা রহম করুক ইবনু হায্মের প্রতি তিনি এইরকম তাখসীসকে (নির্দিষ্টকরণকে) অনর্থক বলেছেন। তিনি বলেন: ‘এবং লাইস সফরে কুরবানীতে শরীক হওয়া বৈধ মনে করেন। আর এটা এমন তাখসীস/নির্দিষ্টকরণ যার কোন অর্থ হয় না’। [আল্ মুহাল্লা,৪/৩৮১]
৩- যদি এই কারণে শরীকানায় কুরবানী করাকে সফরের সাথে খাস করা হয় যে, এটা সফরে ঘটেছিল মুকীম অবস্থায় ঘটেনি। তাহলে বলবো: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন কাজ সফরে সংঘটিত হলে সেটা কি সফরের সাথে খাস হয়ে যায়, না বিধানটি আম/অনির্দিষ্ট থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তা দলীলের মাধ্যমে খাস না করা হয়?

আসলে নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এর কথা, কাজ ও সম্মতি অনির্দিষ্ট অর্থেই ব্যবহৃত হয়, যতক্ষণে নির্দিষ্টের প্রমাণ না পাওয়া যায়। তাই উসূলে ফিক্হের একটি মূল কায়েদা হচ্ছে ‘‘আল্ ইবরাতু বি উমূমিল্ লাফযি বি খসূসিস্ সাবাব’ অর্থ, শব্দের অনির্দিষ্ট বিবেচ্য নির্দিষ্ট কারণ নয়’। অর্থাৎ অনির্দিষ্ট তথা আম শব্দ ও বিধান অনির্দিষ্ট হিসাবেই প্রযোজ্য হবে, যদিও বিধানটি বা শব্দটি কোন নির্দিষ্ট কারণে বলা হয়ে থাকে। তাই কুরবানীতে শরীক হওয়ার ঘটনাটি যদিও একটি খাস অবস্থা অর্থাৎ সফরাবস্থায় ঘটেছে কিন্তু সেটা সেই অবস্থার সাথে খাস/নির্দিষ্ট হবে না বরং আম/অনির্দিষ্ট হিসাবে প্রযোজ্য হবে।
৪- সফর অবস্থায় কোন ঘটনা ঘটলে সেটা যে সেই অবস্থার সাথে নির্দিষ্ট হয় না; বরং অনির্দিষ্ট থাকে তার একটি উদাহরণ পেশ করা ভাল মনে করছি, যেন সকলকে বুঝতে সুবিধা হয়। এটা প্রমাণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়া (রাযি:) কে সফরাবস্থায় বিয়ে করেছিলেন খয়বর ও মদীনার মাঝে। তাঁর ওলীমায় গোশত রুটি ছিল না বরং বেলাল (রাযি:) কে দস্তরখান বিছানোর আদেশ করা হয়, আর তাতে খেজুর, পনীর ও ঘি মিশ্রণ করে এক প্রকার খাদ্য তৈরি করে ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হয়। [বুখারী, মাগাযী, অনুচ্ছেদ,৩৮ নং ৪২১৩] সুনান গ্রন্থে অবশ্য সেই অলীমার নাম ছাতু ও খেজুর উল্লেখ হয়েছে। আনাস (রাযি:) হতে বর্ণিত, ‘‘নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়া (রাযি:) এর ওলীমা করেন ছাতু ও খেজুর দ্বারা’’। [ইবনু মাজাহ, নিকাহ অধ্যায়, নং ১৯০৯/তিরমিযী, অধ্যায়, নিকাহ, হাদীস নং ১১০১]
বুঝা গেল, নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর অবস্থায় ছাতু ও খেজুরের মাধ্যমে ওলীমা দিয়েছেন। তাই আমরা বলবো কি যে, ছাতু ও খেজুরের মাধ্যমে ওলীমা দেওয়া কেবল সফর অবস্থার জন্য খাস, মুক্বীম অবস্থায় তা দ্বারা ওলীমা দেওয়া যাবে না? না এই ওলীমা অনির্দিষ্ট সফর ও মুকীম সর্বাবস্থার জন্য প্রযোজ্য। তাই শরীক হয়ে কুরবানীর ঘটনাটি যদিও সফরাবস্থায় ঘটেছে, তবুও সেটা আম বা অনির্দিষ্ট।
৫- এটা সত্য যে, ইসলামে মুসাফিরের জন্য বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কিছু ছাড়ের বিধান রয়েছে। যেমন নামায কসর ও জমা করার বিধান, জুমআ জরুরী না হওয়ার বিধান, রোযা কাযার বিধান, মোজায় মাসাহ করার সময়ে বৃদ্ধি ইত্যাদি। কিন্তু সফরের কারণে একটি পূর্ণ কুরবানী নয় বরং ভাগায় কুরবানী দেয়ার ছাড়, এই রকম কিছু পাওয়া যায় না। বিশেষ করে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার মত পণ্ডিত যখন সফর ও মুকীম অবস্থার বিধান সম্পর্কে বই লেখেন এবং তাতে তিনি এই প্রসঙ্গ উল্লেখও করেন না। এ বিষয়ে তাঁর খুবই মূল্যবান বইটির নাম হচ্ছে ‘আল্ কায়েদাহ আল্ জালীলাহ ফীমা ইয়াতাআল্লাকু বি আহকামিস্ সাফর ওয়াল্ ইকামাহ’। অর্থ (সফর ও মুকীম সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি)।
৬- সফর অবস্থায় ভাগা কুরবানীকে খাসকারী সম্মানিত লেখক বলেন: ‘বিগত বিদ্বানগণের যুগে সম্ভবত: মুক্বীম অবস্থায় ভাগা কুরবানীর প্রশ্ন উত্থাপিত হয় নি’। [মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীকা/১৯] আমি বলবো: উত্থাপিত হয়েছে যেমন হাদ্ঈ ও উযহিয়্যার হাদীসগুলি দ্বারা প্রমাণিত। তাছাড়া প্রাচীন ফুকাহাগণ এই মর্মে মতামত পেশ করেছেন যে, উত্তম কুরবানী কি? তাতে তাঁরা উট-গরুর ভাগের কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনু কুদামাহ বলেন: ‘সর্ব্বোত্তম কুরবানী হচ্ছে উটের কুরবানী, অতঃপর গরু, তার পর ছাগল, তারপর উটের অংশ তারপর গরুর অংশ। এটা আবু হানীফা ও শাফেয়ীর মন্তব্য’। [দেখুন,মুগনী,১৩/৩৬৬]
৭- উপরোক্ত লেখক মুকীম অবস্থায় শরীকানায় কুরবানী চলবে না মর্মে একটি যুক্তি পেশ করে লিখেন: ‘এক্ষণে যদি আমরা ভাগা কুরবানী করি, তাহলে পশুর হাড়-হাড্ডি ও গোশত ভাগ করতে পারবো, কিন্তু তার জীবন ভাগ করতে পারব কি’? [মাসায়েলে কুরবানী/২০] আমি বলবো: এটি একটি কেয়াস। এর প্রয়োজন এই স্থানে তেমন নেই। তবে যেহেতু তিনি নিজেই এটা স্বীকার করেন যে, সফর অবস্থায় একটি গরু বা উটে সাত জন শরীক হতে পারে, সেহেতু বলা উচিৎ হবে যে, যদি সফর অবস্থায় একটি পশুর জীবন ৭ ভাগ হতে পারে, তো মুকীম অবস্থায় অসুবিধা কোথায়?

তাহলে গরু কিংবা উটের এক ভাগ একটি পরিবারের পক্ষে যথেষ্ট হবে কি?
এ বিষয়ে বিদ্বানগণের দুটি মত রয়েছে।

  • একদল বিদ্বান মনে করেন গরু কিংবা উটের ৭ ভাগের একটি ভাগ নিজ ও নিজ পরিবারে পক্ষে যথেষ্ট। আর এ বিষয়ে তারা একটি ভাগকে একটি ছাগলের মত মনে করেছেন। [এইরকম মনে করার পিছনে তাদের কিছু দলীলও রয়েছে কারণ অনেক ক্ষেত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি উটকে সাতটি ছাগলের সমান মনে করেছেন ও ভাগ করেছেন, দেখুন, নয়লুল আউত্বার,৫/১৩২-১৩৩ ] একটি ছাগলের কুরবানী যেহেতু নিজ ও নিজ পরিবারের পক্ষে যথেষ্ট, তেমন উট কিংবা গরুর একটি ভাগ একটি পরিবারের পক্ষে যথেষ্ট।
  • বিদ্বানদের দ্বিতীয় মতটি হল, গরু-উটের একাংশ পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষে যথেষ্ট হবে না; কারণ ছাগলের কুরবানীর ক্ষেত্রে তা বাড়ির সকলের পক্ষে যথেষ্ট হিসাবে দলীল বিদ্যমান কিন্তু উট-গরুর এক ভাগ বাড়ির সকলের পক্ষে যথেষ্ট মর্মে কোন দলীল নেই। এই মতের বিদ্বানগণ উপরের মতটিকে দলীলের বর্তমানে কিয়াস মনে করেন। আর দলীলের স্থানে কিয়াস অগ্রহণীয়। কারণ ভাগে শরীক হওয়ার দলীলগুলিতে ৭ ব্যক্তির উল্লেখ হয়েছে সাত পরিবার নয়। [সারাংশ,ফতাওয়াল্ লাজনা আদ্ দায়িমাহ,১১/৩৯৫-৩৯৬]

আমি মনে করি, সহীহ দলীল দ্বারা যতখানি প্রমাণিত, ততখানিই বলা ও মানা উচিৎ। অর্থাৎ উট-গরুর এক ভাগ এক ব্যক্তির পক্ষে যথেষ্ট এক পরিবারের পক্ষে যথেষ্ট না। তবে এই রকম ভাগে কুরবানী দাতাদের জন্য বৈধ যে, তারা বাড়ির সকল সদস্যদের সওয়াবে শরীক করার নিয়ত রাখবে। কুরবানীর একটি ভাগে যদিও সকল সদস্যরা শরীক হতে না পারে কিন্তু নেকীতে তাদের শরীক করানো যেতে পারে। কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  একদা ভেড়া কুরবানী দেন এবং বলেন: “বিস্ মিল্লাহি আল্লাহুম্মা! তাকাব্বাল্ মিন মুহাম্মাদ ওয়া আলি মুহাম্মাদ্ ওয়া মিন্ উম্মাতি মুহাম্মাদ”। অর্থ, “আল্লাহর নামে (জবেহ করছি।) হে আল্লাহ! মুহাম্মদের পক্ষ থেকে, মুহাম্মদের পরিবারের পক্ষ থেকে এবং মুহাম্মদের উম্মতের পক্ষ থেকে।” [মুসলিম, আযাহী অধ্যায়, নং ১৯৬৭] হাদীসটি থেকে অনেকে কুরবানীতে অন্যকে নেকীতে শরীক করা যেতে পারে মর্মে দলীল দিয়েছেন। [শারহু মুসলিম, ১৩/১৩১/ আউনুল মা’বুদ,৮/৩/ আহকামুল্ উযহিয়্যাহ ওয়ায্ যাকাত, ইবনু উসায়মীন]

যারা ভাগা কুরবানী দেন তাদের জন্যে একটি উপদেশঃ
যে সকল ভাই উট কিংবা গরুর এক বা একাধিক ভাগে কুরবানী দিয়ে থাকেন, তাদের ভাগে কুরবানী দেয়ার সময় খেয়াল রাখা উচিৎ হবে যে, যেই অর্থ দিয়ে সে এক বা একাধিক ভাগে শরীক হচ্ছে, সেই পয়সা দিয়ে যদি একটি ছাগল বা ভেড়া খরিদ করা যায়, তবে সে যেন ভাগে কুরবানী না দিয়ে একটি ছাগল বা ভেড়া কুরবানী দেয়; কারণ ভাগের কুরবানী থেকে একটি ছাগলের কুরবানী উত্তম। [দেখুন,মুগনী,১৩/৩৬৬]

তাছাড়া একটি ছাগলের কুরবানী নিজ ও বাড়ির সকল সদস্যদের পক্ষে যথেষ্ট। আত্বা বিন্ ইয়াসার আবু আইয়ুব আনসারী (রাযি:) কে জিজ্ঞাসা করেন: রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে তোমাদের কুরবানী কেমন হত? তিনি বলেন: “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে এক ব্যক্তি একটি ছাগল নিজ ও নিজ পরিবারের পক্ষে কুরবানী দিত, নিজে খেত এবং অপরকে খাওয়াত। অতঃপর লোকেরা বাড়াবাড়ি শুরু করে দেয়, যেমন দেখছ”। [তিরমিযী, আযাহী অধ্যায়, অনুচ্ছেদ নং ৭ হাদীস নং ১৫৩৯/ ইবনু মাজাহ, নং৩১৪৭]

আলোচনার সারাংশ:
উট বা গরু হাদ্ঈ হোক কিংবা কুরবানী উভয় ক্ষেত্রে তাতে শরীক হয়ে কুরবানী দেয়া বৈধ। শরীক হয়ে কুরবানী দেয়াটা সফরের সাথে খাস/নির্দিষ্ট মর্মে যারা মন্তব্য করেছেন, তাদের এই মতটি যেমন অভিনব তেমন সালাফগণের জ্ঞানের বিপরীত ও। তারা বিষয়টিকে সফরের সাথে নির্দিষ্ট করেছেন অথচ সেই নির্দিষ্টকরণের কোন কারণ না তো প্রমাণগুলিতে বর্ণিত হয়েছে আর না ইসলামী বিদ্বানগণ উল্লেখ করেছেন। তাই শরীকানায় কুরবানী দেয়াটা সফর ও মুকীম উভয় অবস্থায় বৈধ। যারা সফরের সাথে খাস বলে ফাতওয়া দিয়েছেন আমি তাঁদের নিকট আবেদন করবো, তাঁরা যেন বিষয়টি পুনরায় অধ্যয়ন করেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ফতওয়া প্রত্যাহার করেন। কারণ ইতিমধ্যে সাধারণ লোকের মধ্যে এ নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। অনেকে নিজে শরীকানায় কুরবানী দিচ্ছে না এবং অন্যকেও দিতে নিষেধ করছে; অথচ এটা জায়েজ।[ওয়াল্লাহু তাআ’লা আ’লাম]

লেখক: আব্দুর রাকীব (মাদানী)
দাঈ, দাওয়াহ সেন্টার, খাফজী, সউদী আরব।

সম্পাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

আরও দেখুন
Close
Back to top button