নও মুসলিম

ইসলামের সূর্য আমাকে পরিণত করেছে বসন্তের এক প্রাণোচ্ছ্বল নব কিশলয়ে

জার্মান নও-মুসলিম তানিয়া পোলিং

জার্মান যুবতী তানিয়া পোলিং। পাশ্চাত্যের আর দশটা নারীর মতোই ছিল তার উচ্ছৃংখল জীবন। তার কাছে জীবনের অর্থ ছিল, খাও দাও ফুর্তি কর। কিন্তু হামবুর্গের একটি বিপণী কেনেদ্র হিজাব পরিহিতা একজন মুসলিম নারী তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। এ নারীকে লক্ষ্য করে তিনি এবং তার কয়েকজন বান্ধবী হিজাব নিয়ে উপহাস করে বলেছিলেন, ‘অসুস্থ রোগীর মতো এ কী পোশাক তুমি পরেছ?’ কিন্তু ঐ মহিলা এর উত্তরে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘এ পোষাকই মানসিক সুস্থতা ও ভারসাম্যের নিদর্শন এবং হিজাবই নারীকে দেয় স্বাধীনতা ও সামাজিক নিরাপত্তা’। এরপর তারা নিজ নিজ পথে ফিরে গেল। কিন্তু সামান্য এই বাক্যই তানিয়া পোলিংয়ের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। তিনি বলেন, সেই মহিলার বক্তব্য নিয়ে বহুদিন ধরে ভাবনায় মগ্ন থাকলাম। অবশেষে আমি বিভিন্ন দেশের মুসলিম ভাই-বোনদের সাথে কথা বলে উপলব্ধি করলাম যে, হিজাব নারীর জন্য কোন সীমাবদ্ধতা তৈরীই করে না, বরং তাদেরকে সমাজে বেশী বেশী কাজ করার সুযোগ ও সুস্থ উপস্থিতির নিরাপত্তা দেয়।’

আমি বুঝতে পারলাম, কেবল বস্তুগত সম্পদের প্রাচুর্য মানুষকে দেয় না কাংখিত সুখ ও প্রশান্তি। আধ্যাত্মিকতামুক্ত ও ধর্মহীন পরিবেশে ব্যাপক সম্পদ ভোগ করেও মানুষ যে সুখী হয় না তার প্রমাণ হ’ল পাশ্চাত্যের জনগণের প্রশান্তিহীনতা। পশ্চিমা মতাদর্শের মূল কথাই হ’ল, পার্থিব জীবন ভোগের জীবন। মৃত্যুর পরে কিছুই নেই। এ বিষয়টি পশ্চিমাদেরকে উদ্দেশ্যহীনতার যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইসলাম বলে, মৃত্যুই মানুষের জীবনের শেষ কথা নয়। পরকালে থাকবে সৎ কাজগুলোর জন্য অশেষ পুরস্কার। আর এই চিন্তা নিয়ে ধার্মিক মানুষেরা বেশী বেশী ভাল কাজ করেন। ফলে মৃত্যু নিয়ে তারা শঙ্কিত থাকেন না।

…তানিয়া পোলিং বলেন, ‘আমি যেন বিশ বছরের এক সুদীর্ঘ অন্ধকার রাত কাটিয়েছি এবং এরপর আমার জীবনে এসেছে সূর্যোদয়। ইসলামের সূর্য আমাকে পরিণত করেছে বসন্তের এক প্রাণোচ্ছ্বল নব কিশলয়ে, যে কিশলয় জেগে উঠেছে বিশ বছরের দীর্ঘ শীত-নিদ্রার পর।’

তানিয়া বলেন, ‘আমি এই বাস্তবতা বুঝতে পেরেছি যে, ইসলাম নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে তাদের মহৎ প্রকৃতি ও আত্মার কারণে, শরীরের কারণে নয়। তিনি বলেন, ইসলামের অন্যান্য দিক  যেমন আল্লাহ্র সঙ্গে মুসলমানদের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক, মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক আন্তরিক সম্পর্ক এগুলিও আমার কাছে চরম বিস্ময়কর ও আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সংহতির কোন ভৌগোলিক সীমারেখা বা জাতিগত সীমানা আমি খুঁজে পাইনি। মুসলমানরা সবাই একই লক্ষ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। এভাবে যতই মুসলমানদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ বাড়ছিল ততই তাদের প্রতি আমার সম্মান ও ভালোবাসা বাড়তে থাকে। অবশেষে আমি এটা অনুভব করলাম যে, আমি তো নিজেই মুসলমান হয়ে গেছি।’

তিনি পশ্চিমা সমাজ সম্পর্কে বলেছেন, পশ্চিমাদের মধ্যে মানবীয় ও স্নেহময় সম্পর্ক খুবই দুর্বল হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে বাহ্যিকভাবে পরিবার ব্যবস্থার অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও সবাই যেন একাকিত্ব অনুভব করছে ও একাকী জীবন যাপন করছে। মুসলমান হওয়ার পর আমি নানা সমস্যার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও বাবা-মায়ের সঙ্গে জীবন যাপন করাকেই এখনও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমি মুসলমান থাকার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং আমার বাবা-মাও বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। এমনকি তারা আমার ইসলামী আচার-আচরণকে আমার অতীতের আচরণের চেয়ে বেশী পসন্দনীয় বলে মনে করেন। আমি অবসর সময়ে অন্য যে কোন কাজের চেয়ে পবিত্র কুরআন এবং জার্মান ভাষায় অনূদিত ধর্মীয় বই-পুস্তক বেশি অধ্যয়ন করি।

তানিয়া পোলিং মনে করেন তিনি যা যা হারিয়েছেন তার বিনিময়ে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন। সব কিছু থাকলেও  প্রভুর সঙ্গে সম্পর্ক না থাকার কারণে বাস্তবে  কোন  কিছুই  না  থাকার বেদনা বা অস্তিত্বহীনতার বেদনা অনুভব করতেন। কিন্তু এখন প্রভুকে পেয়ে এর মাঝেই যেন সবকিছু খুঁজে পাচ্ছেন। তিনি এখন পেয়েছেন আধ্যাত্মিক স্বাধীনতা ও আত্মার মুক্তি, আত্মিক প্রশান্তি এবং একজন মহত ও পসন্দনীয় নেতা। ইসলাম গ্রহণের ফলে পেয়েছেন পবিত্র কুরআন যা হচ্ছে আল্লাহ্র দেয়া বিধান এবং এটা তার জন্য সবচেয়ে বড় পুঁজি।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button