কুরআন

আল-কুরআনুল কারীমের অর্থানুবাদ: প্রেক্ষাপট ও আবশ্যকীয় জ্ঞান

বাংলায় কুরআনের অর্থানুবাদ ও তাফসীর: প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনীয় জ্ঞান

যাবতীয় স্তুতি ও প্রশংসা কেবল সেই মহান রব আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের চলার পথের পাথেয় হিসেবে নাযিল করেছেন মহগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীম। আর ইসলামের জীবন ব্যবস্থা বাস্তবায়নকারী রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। তাই আমরা সর্বদাই দরূদ ও সালাম পেশ করি প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।

মাস কয়েক আগে দৈনিক সমকালের সহসম্পাদক শ্রদ্ধেয় মুফতি এনায়েতুল্লাহ ভাই ফোন দিয়েছিলেন একটি লেখা চেয়ে। এবার অবশ্য তাঁর পত্রিকার জন্য নয়; গাজীপুর থেকে প্রকাশিতব্য তাফসীর বিষয়ক একটি সাময়িকীর জন্য। বিষয় : বাংলাদেশে পবিত্র কুরআনের তাফসীর চর্চায় উলামায়ে কিরাম। তিনি আমাকে এ জন্য সর্বোচ্চ দশদিন সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু দশদিন একশ দিন পেরিয়ে যাবার পরও আমি এ বিষয়ে লেখা তৈরি করতে পারি নি। কারণ, আমার সদিচ্ছা বা আন্তরিকতার ঘাটতি নয়।

ঘটনা হলো, এ বিষয়ে তথ্য খুঁজতে গিয়ে আমাকে হতাশ হতে হয়। ইন্টারনেটে নানা উপায়ে নানা শিরোনামে সার্চ দিয়েও বাংলা ভাষায় কুরআনের তরজমা বা তাফসীর সংক্রান্ত তেমন কোনো তথ্য পেলাম না। নানা পত্র-পত্রিকা এবং বই পুস্তক ঘেঁটেও তেমন কিছু পাওয়া গেল না। বিভিন্ন তরজমা ও তাফসীরের ভূমিকা দেখে বিচ্ছিন্ন কিছু তথ্য পেলাম। যেখানে যা-ই পেলাম তা-ই নোট করে ফেললাম। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের শীর্ষ খবরের কাগজ দৈনিক প্রথম আলোর শুক্রবারের সাহিত্য সাময়িকীতে ‘বাংলায় প্রথম কোরআন শরীফ’ শীর্ষক একটি গবেষণামূলক নিবন্ধ দেখতে পেলাম।

নিবন্ধকার আখতার হুসেন তাতে লিখেন, ‘বিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায়ের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরিফ-এর বাংলায় প্রথম অনুবাদের সোয়া শ বছর পেরিয়ে গেছে আজ থেকে এক বছর আগে। একেবারে নীরবে। কাউকে কিছু জানান না দিয়ে। অথচ গিরিশচন্দ্র সেন (১৮৩৫-১৯১০) ছয় বছর দীর্ঘ (১৮৮১-১৮৮৬) কঠোর ও একাগ্র শ্রমে যখন কোরআন শরিফ-এর অনুবাদের কাজ শেষ করেছিলেন, তখন সেটা গোটা বাংলা ভাষাভাষী সমাজে একটা চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ঘটনা হয়ে উঠেছিল। ঐতিহাসিক ঘটনা তো বটেই। কোরআন শরিফ-এর সঠিক অনুবাদ সেই প্রথম। অমন পরিশ্রমসাধ্য কাজের দৃষ্টান্ত সত্যিই এক বিরল ঘটনা। অবশ্য মাওলানা মহিউদ্দিন খান নামের একজন বিশিষ্ট আলেম পবিত্র কোরআন শরিফ-এর প্রথম বাংলা অনুবাদ করেছিলেন বলে যে দাবি করা হয়, তার অনুকূলে তেমন জোরালো কোনো সমর্থন বা তথ্য পাওয়া যায় না।’

কী আশ্চর্য দাবি ভাই গিরিশচন্দ্রই নাকি কুরআনের প্রথম বঙ্গানুবাদকারী! এর চেয়ে বড় বিস্ময়ের ব্যাপার আখতার হুসেনের দাবি এটিই নাকি কুরআন শরীফে প্রথম সঠিক অনুবাদ! যুগপৎ বিস্ময় ও হাস্যকর তথ্য হলো তার পরেরটি। মহিউদ্দিন খান নামের একজন বিশিষ্ট আলেম নাকি প্রথম অনুবাদের দাবি করেছেন? বুঝলাম না একটি শীর্ষ দৈনিকে প্রকাশিত গবেষণার এই নমুনা! মাওলানা মহিউদ্দিন খান কবে এ দাবি করলেন? কোথায় করলেন এ দাবি? তিনি তো এখনো জীবিত আছেন। তাকে জিজ্ঞেস করলে নিশ্চয় তিনি তো হেসে খুন হবেন। তিনি বরং মাআরেফুল কুরআন নামক উর্দূ তাফসীরের অনুবাদক। গিরিশচন্দ্র সেনের জন্ম ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে আর মদীনা সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন খানের জন্ম ১৯৩৬ সালে। অর্থাৎ ভাই গিরিশের এক শতাব্দী পর। উপরন্তু লোকটি এখনো জীবিত এবং বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচিত এক চরিত্র। এই লোকটিকে শতাব্দী আগের একটি লোকের সঙ্গে তুলনায় আনেন কী করে? এই সামান্য তথ্যটি যিনি জানেন না, তিনি আবার কেবল গবেষক! এই না হলে অসৎ গবেষণা!

লেখাটির নিচে প্রতিবাদ করতে গিয়ে সে সুযোগ পাই নি। এদিকে উল্লেখিত অনুরোধের পর বলতে গেলে এ বিষয়ে প্রকৃত তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়েই এই লেখার সূত্রপাত। আর বাংলাভাষায় অসংখ্য তরজমা ও তাফসীর প্রকাশ হলেও প্রসিদ্ধ কিছু তরজমা ও তাফসীর ছাড়া অধিকাংশই রয়ে গেছে আড়ালে। ইন্টারনেটের যুগে ইন্টারনেটে প্রসিদ্ধ অনেক তাফসীরই এখনো রয়ে গেছে অনুপস্থিত। সেসবের ওপর আলো বিক্ষেপণও এই নিবন্ধের অন্যতম উদ্দেশ্য। চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

ইসলাম কোনো আচারসর্বস্ব ধর্ম নয়। এর প্রকৃতি হলো প্রচারধর্মী। এর আবেদন শ্বাশত এবং বিশ্বজনীন। অতএব কুরআনের বাণীও গোটা বিশ্বমানবতার জন্য। এক গতিশীল, প্রাণোচ্ছল, ঋব্ধ ও সমৃদ্ধ ভাষা আরবী। এ ভাষাকেই বিশ্বনিয়ন্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর সর্বশেষ গ্রন্থ আল-কুরআনের জন্য নির্বাচিত করেছেন। অনাগত কালের মানুষ যাতে মূল আরবী ভাষা থেকেই কুরআনের পথনির্দেশ লাভ করতে পারে। সেহেতু মহান রব আল্লাহ কুরআন নাযিল করে তাকে কিয়ামত অবধি সংরক্ষণ ও অবিকৃত রাখার দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন,

﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [سورة الحجر: ٩]

‘আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক।’ {সূরা আল-হিজর, আয়াত : ৯}

আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হলেও কুরআনের আবেদন বিশ্বজনীন হওয়ায় বিশ্বমানবতার সামনে এর বাণী পৌঁছে দেয়া মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম অবশ্য কর্তব্য ছিল। সেহেতু তিনি তাঁর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের শাসনকর্তাদের নামে পত্রাদির মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত পাঠান। এ ব্যাপারে ভাষার বিভিন্নতাকে অন্তরায় সৃষ্টি করতে দেন নি। ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরবী না জানা মানুষের কাছে কুরআনের বাণী পৌঁছে দেবার তাগিদে অনারবী ভাষায় কুরআনের অনুবাদের ধারা মহানবীর জীবদ্দশায় সূচিত হয়ে আজো অব্যাহত আছে।

তবে এ কথা মুসলমানরা ভালোভাবে জানেন, অনুবাদ কোনো অবস্থাতেই মূল কুরআনের বিকল্প হতে পারে না। তাই কুরআনের অনুবাদকে কোনো অবস্থায় ‘বাংলা কুরআন’ বলার অবকাশ নাই। কেননা কুরআন হলো জিবরাঈল মারফত প্রেরিত ভাষা ও অর্থের সমন্বয়ে আল্লাহর বাণী। সুতরাং মূল আরবী ভাষায় কুরআন পাঠ করতে এবং কুরআনের মূল বাণী বুঝতে সক্ষম হওয়া পর্যন্ত কুরআনের অনুবাদের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হয়। এমন চেতনা মাথায় রেখেই নানাভাষী মুসলিম মনীষী ও পণ্ডিতবর্গ স্বতস্ফূর্তভাবে পবিত্র কুরআন অনুবাদে এগিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি অনেক অমুসলিম পণ্ডিতও ধর্ম প্রচারের অভিপ্রায়ে এ মহাগ্রন্থ অনুবাদে হাত দেন। সাম্প্রতিক এক জরিপে জানা গেছে, বিশ্বের প্রায় ৭০টি প্রধান ভাষায় আল কুরআন অনূদিত হয়েছে। অমুসলিমদের ভাষাতেও পর্যাপ্ত অনুবাদ হয়েছে।

আমাদের বাংলাভাষী মানুষদের আরবী ভাষাজ্ঞান কম থাকায় আমরা আল্লাহ তা‘আলার কালাম কুরআন মাজীদ বুঝতে পারি না। এ কারণেই বাংলাভাষী মুসলিমদের মধ্যে কুরআনের জ্ঞান প্রায় নেই বললেই চলে। অনুবাদ পড়ে কুরআনে বর্ণিত আলোচনা সম্পর্কে জানার প্রবণতাও আমাদের মধ্যে খুবই কম। আর এ কারণে শিরক, বিদ‘আত ও অন্যান্য পাপে লিপ্ত হয়েছে বাংলার মুসলিম সমাজ।

শুধু অনুবাদ পড়ে এর মর্ম বুঝা খুবই কঠিন। তবে আল্লাহ তা‘আলার বাণীর তরজমার সঙ্গে তাফসীর পাঠ করলে সে সম্পর্কে আমরা জ্ঞান লাভ করতে পারি। এ পবিত্র গ্রন্থ আমরা যত বেশি পড়ব এবং বুঝতে চেষ্টা করব, দীন ইসলাম সম্পর্কে আমাদের ধারণা ততই পরিষ্কার হবে। আমরা হিদায়াতের সন্ধান পাব। আমাদের পক্ষে সহজতর হবে আল্লাহ তা‘আলার দেয়া সরল ও সঠিক পথে চলা।

বলাবাহুল্য, আল্লাহ তা‘আলার পবিত্র কালামকে আমরা মাতৃভাষার মাধ্যমে যেভাবে বুঝতে পারব, অন্য কোনো ভাষায় তা সম্ভব নয়। কারণ মানুষ তার মনের ইচ্ছা একমাত্র আপন মাতৃভাষায়ই পূর্ণাঙ্গরূপে প্রকাশ করতে পারে। যে কোনো বিষয় বুঝতে সহজ হয় এ মাতৃভাষায়। এ কারণেই তো আল্লাহ প্রতিটি নবীকে নিজ ভাষায় দাওয়াতের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,

﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوۡمِهِۦ لِيُبَيِّنَ لَهُمۡۖ فَيُضِلُّ ٱللَّهُ مَن يَشَآءُ وَيَهۡدِي مَن يَشَآءُۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٤ ﴾ [ابراهيم: ٤]

‘আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার কওমের ভাষাতেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের কাছে বর্ণনা দেয়, সুতরাং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ {সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ০৪}

বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের যে হতাশা, অস্থিরতা ও নৈতিক অধঃপতন প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে, তাতে কুরআনের অনুসরণ ছাড়া এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। প্রাচ্যের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক কবি ইকবালের একটি উর্দূ কবিতার কথা এখানে প্রণিধানযোগ্য। তাঁর কবিতার চরণের অনুবাদ করেছিলাম আমি এভাবে :

‘কুরআন ছেড়ে মুসলমানে ছেড়ে তো আল্লাহকে,

তাই অপমান হচ্ছে নিজে করছে হেয় ধর্মকে।’

কুরআনই আমাদের সত্যের পথে এবং শান্তির রথে পরিচালিত করতে পারে। এজন্য আমাদের কুরআন পড়তে হবে, বুঝতে হবে এবং কুরআনের নির্দেশিত পথে চলতে হবে। অথচ দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা কুরআনকে বুঝতে চেষ্টা করি না, তাই আমাদের ছেলে-মেয়েরা শুধু কুরআন তিলাওয়াত করে আনন্দ পায় না। কারণ, তারা তা বুঝে না। তার মর্ম তার স্পর্শ করে না। এ জন্যই প্রয়োজন সহজবোধ্য কুরআনের অনুবাদ এবং তাফসীর।

আল-কুরআন আরবী সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম অবদান। আর কিছুর সঙ্গে এর তুলনা চলে না। আর এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত মহাগ্রন্থ। মানব রচিত কোনো উক্তি, গদ্য বা কাব্য নয়। তাই তো উমর রাদিআল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহণের আগে খোলা তরবারি নিয়ে আপন ভগ্নি ও ভগ্নিপতিকে হত্যা করতে গিয়ে সূরা ত্বহার আয়াত তিলাওয়াত শুনে অবাক হয়ে বলে উঠেছিলেন, কোথায় মুহাম্মাদ ? আমাকে নিয়ে চল তাঁর কাছে। অতপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কালিমা শাহাদাহ পাঠ করে ইসলাম কবূল করেছিলেন। তাই কুরআনের সে অনুপম ভাষার সৌন্দর্য কোনো মানুষ অনুবাদে আনবে কী করে ? সে সাধ্য কোনো মানুষেরই নেই। তাই অনুবাদকগণ চেষ্টা করেছেন কেবল কুরআনের অনুবাদকে সহজবোধ্য করার।

আল-কুরআন মানব জাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানী কিতাব। এ কিতাব কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির একমাত্র হিদায়াত তথা পথনির্দেশক গ্রন্থ। মানুষকে সত্য ও সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য এ কিতাব আল্লাহ তা‘আলার এক অশেষ অবিনশ্বর নি‘আমানত। তাই সকল মুসলিমেরই উচিত পবিত্র কুরআনে তিলাওয়াত এবং এর অর্থ উপলব্ধির চেষ্টা করা। পবিত্র কুরআনের শিক্ষা এবং তদনুযায়ী জীবন গঠন করতে হলে সকলকেই নিজ নিজ মাতৃভাষায় আল-কুরআন বুঝতে হবে। সে চিন্তায়ই বাংলা ভাষায় স্বার্থক ও নির্ভরযোগ্য অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা অমলিন থাকবে।

বাংলায় কুরআন অনুবাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

অনুবাদ বা ভাষান্তর এমনিতেই একটি দুরূহ কাজ। আল-কুরআনের মতো একটি আসমানী গ্রন্থের ব্যাপারে জটিলতার সঙ্গে স্পর্শকাতরতার বিষয়ও জড়িত। মানব রচিত গ্রন্থের বেলায় বক্তার কথার হুবহু ভাষান্তর না হলে তেমন কি-ই বা আসে যায়। বড় জোর বলা যায় অনুবাদক মূল লেখকের কথাটার সঙ্গে যথাযথ ইনসাফ করতে পারেন নি। কিন্তু আল-কুরআনের ক্ষেত্রে বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে অনুবাদের একটু হেরফের হলে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলার কথাই বিতর্কিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এসব কারণেই মুসলমানদের মাঝে কেউই এক দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আল-কুরআনের অনুবাদের ঝুঁকি নিতে চায় নি।

এমনকি বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মধ্য এশিয়ার আলেমরা ফতোয়ার মাধ্যমে তাতারি ভাষায় আল-কুরআনের যাবতীয় অনুবাদ প্রচেষ্টাকে বন্ধ করে রাখেন। আফ্রিকা মহাদেশে বিশষ করে নাইজেরিয়া ও নাইজারে হাউসা হচ্ছে আরবীর পর সর্বাধিক সমৃদ্ধ ভাষা। এই ভাষায় আলেমরা দীর্ঘদিন পর্যন্ত তাদের ভাষায় আল-কুরআনের অনুবাদকে এই বলে বন্ধ করে রাখেন যে, এতে আল-কুরআনের মর্যাদাহানী হতে পারে। এই মহাদেশের ক্যামেরুন রাজ্যের সুলতান সাঈদ নিজেও আলেমদের প্রবল বিরোধিতার কারণে বামুম ভাষায় কুরআনের অনুবাদ কাজ থেকে ফিরে আসেন। মুসলিম দুনিয়ার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফতোয়া বোর্ডও তো এই সেদিন পর্যন্ত আল-কুরআনের যাবতীয় অনুবাদকর্মের বিরোধিতা করে আসছিলো।

তারা ১৯২৬ সালে তুরস্কে উসমানী খেলাফত বিলুপ্তির পর তুর্কী ভাষায় আল-কুরআনের অনুবাদ প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেন। কুরআনের ইংরেজি অনুবাদক নওমুসলিম মার্মডিউক পিকথল যখন কুরআনের অনুবাদ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন তখন হায়দারাবাদের শাসক নিযাম তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিলেও আল আযহার কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করেন। অবশ্য দীর্ঘদিন পর হলেও মক্কাভিত্তিক মুসলিম সংস্থা রাবেতা আলামে ইসলামী আয়োজিত বিশ্বের সর্বমতের উলামা কুরআন অনুবাদের একটি ঘোষণাপত্রে সই করে এ পথের যাবতীয় বাধা অপসারণ করেন। কিন্তু এটা তো ১৯১৮ সালের কথা, মাত্র সেদিনের ঘটনা। অবশ্য এরও বহু আগে ইংরেজ লেখক জর্জ সেল কুরআনের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেছেন। ১৭৩৪ সালে এই অনুবাদ কর্মটির প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। ১৭৬৪ সালে তার পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ মুদ্রিত হয়। ১৮২৫ সালে এটি পুনর্মুদ্রিত হয়।

যেমনটি আমি একটু আগেও বলে এসেছি যে, কুরআনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাবো, কুরআন অনুবাদের এই মোবারক ধারাটি স্বয়ং তাঁর হাতেই সূচিত হয়েছে যার ওপর এই কুরআন নাযিল হয়েছে। আমরা জানি, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দাওয়াতী আন্দোলনের এক পর্যায়ে তৎকালীন বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে দূত পাঠাতেন। তাঁর পাঠানো এসব চিঠিতে অবশ্যই একাধিক কুরআনের আয়াত লেখা থাকতো। যেসব দেশের রাজা বাদশাহরা আরবী বুঝতেন না রাসূলের দূত তাদের কাছে গোটা চিঠির সঙ্গে সেসব আয়াতের তরজমাও পেশ করতেন। এ কারণেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দূতকে যে দেশে পাঠাতেন তাকে আগেই সে দেশের ভাষা শিখতে বলতেন। অধিকাংশ নতুন এলাকায় তিনি পারদর্শী দোভাষীও পাঠাতেন। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে সা‘দ বলেন, যে প্রিয়নবী তার ব্যক্তিগত সহকারী ওহী লেখক যায়েদ ইবন ছাবিত রাদিআল্লাহু আনহুকে সিরিয়ান ও হিব্রু ভাষা শেখার আদেশ দিয়েছিলেন। তাছাড়া আমীর ইবন উমাইয়া যে আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাসীর কাছে লেখা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরবী চিঠিকে আমহারিক ভাষায় অনুবাদ করেছেন তারও একাধিক প্রমাণ ইতিহাস গ্রন্থে মজুদ রয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় কুরআনের এসব আংশিক অনুবাদ ছিলো অনেকটা মুখে মুখে। কোথায়ও লিখিত আকারে এগুলোকে কুরআনের আয়াতের অনুবাদ হিসেবে কেউ সংরক্ষণ করেন নি। পরবর্তী সময়ে যখন কুরআনের বাণী নিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উৎসর্গিতপ্রাণ সাহাবীরা দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়লেন তখন এর প্রয়োজনীয়তা তীব্র হয়ে দেখা দিলো। কুরআনের বিষয়বস্তু ও ভাষাশৈলীর স্পর্শকাতরতার কারণে কুরআনের গবেষকরা প্রথম দিকে নানা আপত্তি উত্থাপন করলেও শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় কুরআন অনূদিত হতে শুরু করলো। এভাবেই কুরআনের আবেদন মূল আরবী ভাষার পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে বিভিন্ন ভাষায় ছড়িয়ে পড়লো।

বাইরের পরিমণ্ডলে এসে সম্ভবত ফার্সী ভাষায়ই সর্বপ্রথম কুরআন অনূদিত হয়েছে। প্রিয় নবীর ইনতিকালের প্রায় ৩৫০ বছর পর ইরানের সাসানী বাদশা আবু সালেহ মানসুর ইবন নূহ কুরআনের পূর্ণাঙ্গ ফার্সী অনুবাদ করেন। কুরআনের ফার্সী অনুবাদের এই বিরল কাজের পাশাপাশি তিনি মুসলিম ইতিহাসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ তাফসীর গ্রন্থ ইমাম মুহাম্মদ ইবন জারীর আত-তাবারীর ৪০ খণ্ডে সমাপ্ত বিশাল আরবী ‘তাফসীর জামেউল বয়ান আত-তাওয়ীলূল কুরআন’-এর ফার্সী অনুবাদ করেন। আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশে শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী কুরআনের যে ফার্সী ভাষান্তর করেছিলেন তা ছিলো আরো ৮০০ বছর পরের ঘটনা। প্রায় একই সময়ে অর্থাৎ ১৭৭৬ সালে শাহ রফিউদ্দীন ও ১৭৮০ সালে শাহ আবদুল কাদের কুরআনের উর্দূ অনুবাদ করেন।

বাংলা ভাষায় কুরআন অনুবাদের কাজটি আসলেই অনেক দেরীতে শুরু হয়েছে। এর পেছনে কারণও ছিলো অনেক। প্রথমত আমাদের এই ভূখণ্ডে যারা কুরআনের ইলমের সঙ্গে সুপরিচিত ছিলেন সেসব কুরআন সাধকদের অনেকেরই কুরআন শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ছিলো ভারতের উর্দূ প্রধান এলাকার ঐতিহ্যবাহী দীনী প্রতিষ্ঠান দেওবন্দ, সাহারানপুর, নদওয়া, জামেয়াতুল ইসলাহ, জামেয়াতুল ফালাহসহ উর্দূ ভাষাভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এর সব কয়টির ভাষাই ছিলো উর্দূ কিংবা ফার্সী, তাই স্বাভাবিকভাবেই এসব দীনি প্রতিষ্ঠান থেকে যারা উচ্চতর সনদ নিয়ে বের হন তাদের কুরআন গবেষণার পরিমণ্ডলও সে ভাষার বাইরে ছড়াতে পারে নি।

দ্বিতীয়ত পলাশীর ট্রাজেডির ফলে আমাদের এ অঞ্চলে কুরআন গবেষণার কাজটি নানারকম পঙ্গুত্বের কারণে এক রকম দেউলিয়া হয়ে পড়েছিলো। ফলে বাংলা আসামে কুরআনের আশানুরূপ কোনো অনুবাদই হয় নি। তৃতীয় কারণ হিসেবে বাংলা মুদ্রণ যন্ত্রের কথা উল্লেখ করতে হয়। ১৭৭৭ সালে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার হলেও এ অঞ্চলের মুসলমানরা ১৮১৫ সালের আগে বাংলা মুদ্রণযন্ত্রের সঙ্গে পরিচিত হবার কোনো সুযোগই পান নি।

কে প্রথম বাংলায় পবিত্র কুরআন অনুবাদ করেছেন ?

হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ লিখেন, ‘কে প্রথম কুরআনের বাংলা অনুবাদের সৌভাগ্যজনক এ কাজটি শুরু করেন তা নিয়ে আমাদের মাঝে বিভ্রান্তির অন্ত নাই। কে বা কারা আমাদের সমাজে এ কথাটা চালু করে দিয়েছে যে, ব্রাহ্মণ ধর্মের নব বিধান মণ্ডলীর নিষ্ঠাবান ধর্মপ্রচারক গিরিশ চন্দ্র সেন সর্ব প্রথম কুরআনের বাংলা অনুবাদ করেছেন। আসলে আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিন ধরে যাদের সর্বময় আধিপত্য বিরাজমান তারাই যে কথাটা ছড়িয়ে তাতে সন্দেহ নেই। দুঃখ লাগে যখন দেখি আমাদের এ অঞ্চলের দু’একজন কুরআনের মুদ্রাকর ও প্রকাশকও তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ঐতিহাসিকভাবে অসমর্থিত এমনি একটি কথা অবাধে প্রচার করে চলেছেন। অথচ কুরআন ও কুরআনের শিক্ষার প্রতিটি ছাত্রই জানেন যে তার অনুবাদের পাতায় কুরআনের শিক্ষা সৌন্দর্য বাকধারার সঙ্গে ব্রাহ্মবাদের প্রচারনীতিতে কুরআনের প্রতি ক্ষমাহীন বিদ্বেষ ছড়ানো রয়েছে।

গিরিশচন্দ্র সেনের ৬ বছর আগে অর্থাৎ ১৭৮৯ সালে আরেকজন অমুসলিম রাজেন্দ্রলাল মিত্র কুরআনের প্রথম পারার অনুবাদ করেন। কলকাতার আয়ুর্বেদ প্রেস নামক একটি ছাপাখানা থেকে এক ফর্মার (১৬ পৃষ্ঠা) এই অনুবাদটি ৫০০ কপি ছাপা হয়েছিলো।

১৮৮৫ সালে গিরিশচন্দ্র সেনের এই অনুবাদের প্রায় ৮০ বছর আগে অর্থাৎ ১৮০৮ সালে পূর্ব বাংলার রংপুর নিবাসী একজন সাধারণ কুরআনপ্রেমী মাওলানা আমিরুদ্দীন বসুনিয়া কুরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদের কাজে হাত দেন। তিনি সে সময় কুরআনের আমপারার অনুবাদ সম্পন্ন করেন। এই ঐতিহাসিক তথ্যের সমর্থন রয়েছে ঢাকা ও কলকাতার প্রায় সব ক’জন কুরআন গবেষকের লেখায়। উভয় বাংলার প্রায় সব ক’টি কুরআন গবেষণা সংস্থা, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানই এ ব্যাপারে একমত যে, মওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়াই সে সৌভাগ্যবান মানুষ যিনি বাংলা ভাষায় কুরআন অনুবাদের এই মহান কাজটির শুভ সূচনা করেন।

গত এক দশকে আমাদের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষায় কুরআন অনুবাদের ইতিহাসের ওপর যেসব পিএইচডি থিসিস লেখা হয়েছে তাতেও এ তথ্য সমভাবে সমর্থিত হয়েছে। ১৮১৫ সালে বাংলা মূদ্রণ যন্ত্রের ব্যবহারের পরপর কলকাতার মীর্জাপুরের পাঠোয়ার বাগানের অধিবাসী আকবর আলী এ কাজে এগিয়ে আসেন। তিনিও মাওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়ার মতো শুধু আমপারা ও সূরা ফাতেহার বাংলা অনুবাদ সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন তার অনূদিত অংশটি ছিলো পুথির মতো। তার এ অনুবাদটি কুরআনের কোনো মৌলিক অনুবাদও ছিলো না। তিনি যেটা করেছেন তা ছিলো ১৭৮০ সালে অনূদিত শাহ আবদুল কাদেরের উর্দূ অনুবাদের বাংলা। সরাসরি কুরআনের অনুবাদ নয় বলে সুধী মহলে এটা তেমন একটা স্বীকৃতি লাভ করে নি। আসলে ব্যক্তি যতো গুরুত্বপূর্ণ হোন না কেন তিনি যদি কুরআনকে কুরআন থেকে অনুবাদ না করেন তাহলে তাকে কখনো কুরআনের অনুবাদ বলে চালিয়ে দেয়া উচিত নয়।’

এ ব্যাপারে মাসিক আল-হুদা নামক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত নিবন্ধে এক নিবন্ধকার লিখেন, ‘অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাওলানা আমীর উদ্দীন বসুনিয়া ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ বাংলা ১২১৫ অব্দে তিনি প্রথম আমপারার তরজমা প্রকাশ করেন। যার আকার ছিল ডিমাই ১২ পেইজ ১৬৮ পৃষ্ঠা। অথচ আমাদের দেশে এই তথ্য আবিষ্কারের অভাবে গিরিশচন্দ্র সেনকে (১৮৩৫-১৯১০) কুরআনের প্রথম অনুবাদক বলা হয়। কিন্তু গিরিশচন্দ্র সেনের আগে রাজেন্দ্রনাথ মিত্র কুরআনের অনুবাদ করেন ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ। গিরিশচন্দ্র সেনের অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে এবং সমাপ্ত হয় ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে। রাজেন্দ্রনাথ মিত্রের অনুবাদ পূর্ণাঙ্গ ছিল না। তার অনুবাদ ছিল কয়েক খণ্ড।

১৮৮৩ সালে টাঙ্গাইলের করটিয়া থেকে মৌলভি নঈমুদ্দিন (১৮৩২-১৯০৮) আকবারে ইসলামিয়া নামে মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন, আর এই পত্রিকার মাধ্যমে সমাজের কুসংস্কার দূর ও আল-কুরআনের অনুবাদ প্রকাশ করতে থাকেন। তার অনূদিত কুরআন শরীফের ১০ পারা পর্যন্ত অনুবাদ সমাপ্ত করে তিনি ইন্তেকাল করেন ১৯০৮ সালের ২৩ নভেম্বর। আকবারে ইসলামিয়া ১৮৮৩ সাল থেকে ১৮৯৩ পর্যন্ত চলছিল। বিখ্যাত সাহিত্যিক ও সম্পাদক শেখ আবদুর রহীম (১৮৫৯-১৮৩১) তৎকালে টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত আকবারে ইসলামিয়া ও মৌলভি নঈমুদ্দিনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

কবি আবদুল কাদির (১৯০৬-১৯৮৪) তার সুশীল সাহিত্য ও সংস্কৃতি গ্রন্থের তৃতীয় অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন বাঙালি মুসলমানের মধ্যে সর্বপ্রথম মৌলভি নঈমুদ্দিন কুরআন মাজীদের বঙ্গানুবাদ করেন। তিনি ১০ পারা পর্যন্ত অনুবাদ করেন এবং মুদ্রণ শেষ হওয়ার আগেই ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ নভেম্বর লোকান্তরিত হন। কবি আবদুল কাদির তার গ্রন্থের চতুর্থ অধ্যায়ে লিখেন ‘সমগ্র কুরআনের বঙ্গানুবাদ করেন মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম মাওলানা মোহাম্মদ আব্বাস আলী (১৮৫৯-১৯৩২) কলকাতা ৩৩ নম্বর বেনেপুকুর রোড, আলতাফি প্রেসে মুন্সি করিম বকসের দ্বারা মুদ্রিত ১৩১৬ বাংলা সন। আমপারা পর্যন্ত ৩০ পারার অনুবাদ। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৯৭৬। মূল আরবি পাঠের নিচে উর্দু তরজমা এবং তার নিচে বাংলা অনুবাদ।

বর্ডারের দুই পাশে উর্দু তাফসীর ও বাংলা টীকা দেয়া হয়েছে। অতপর ওই তাফসিরের শেষে অনুবাদক যা বলেছেন তার উদ্ধৃতি, ‘ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ অমৃতময় কুরআন… আলেমরা ফার্সি, উর্দু ইত্যাদি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। কিন্তু বাংলার মুসলমানদের বোধগম্য সরল বাংলা ভাষায় কোনো অনুবাদ অদ্যাবধি পরিদৃষ্ট হয় নি। তাদের শ্রুতিমধুর কুরআনের বাক্য সুধাপানে বঞ্চিত ছিল। তাদের সেই অভাব বিমোচনের জন্য এই অনুবাদ প্রকাশিত হলো।’

অতপর পঞ্চম অধ্যায়ে এনেছেন খান বাহাদুর মৌলভি তসলীমউদ্দিন আহমদের (১৮৫২-১৯২৭) অনূদিত তাফসিরের কথা। তার অনূদিত কুরআনের প্রথম খণ্ড (প্রথম ১০ পারা) প্রকাশিত হয় ১৩২৯ বঙ্গাব্দে তথা ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে এবং দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৩৩০ বঙ্গাব্দে বা ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে (দ্বিতীয় ১০ পারা) এবং তৃতীয় খণ্ড বা শেষ খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে। প্রথম খণ্ড ছিল ৪৫৮ পৃষ্ঠার দ্বিতীয় খণ্ড ৪৫৮ পৃষ্ঠা এবং তৃতীয় খণ্ড ৫২১ পৃষ্ঠা। এই অনুবাদে মূল আরবি দেয়া ছিল না, কিন্তু আয়াত ও রুকু নম্বর দেয়া ছিল। ষষ্ঠ অধ্যায়ে তিনি তাদের সবার নামোল্লেখ করেছেন যারা আল-কুরআনের পরবর্তী অনুবাদ সম্পন্ন করেছেন। মৌলভি আবদুল হাকিম ও আলী হাছান ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ণাঙ্গ কুরআনের অনুবাদ করেন। মৌলভি নকীবুদ্দিন খাঁর (১৮৯০-১৯৭৮) অনুবাদ ৩০ পারা ৩০ খণ্ডে ছিল। মাওলানা মো: রুহুল আমীন, মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মৌলভি এয়ার আহমদ, মৌলভি মো: তৈমুর, ফজলুর রহিম চৌধুরী, ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ডক্টর কুদরত-এ-খুদা, অধ্যাপক আবুল ফজল প্রমুখ কুরআনের অংশ বিশেষের অনুবাদ করেন। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে কবি নজরুল কাব্যে আমপারা প্রণয়ন করেন।

কুরআনের বহুবিধ অনুবাদ ও তাফসির সম্বন্ধে বিশেষ আলোচনা-পর্যালোচনা ও গবেষণা সাহিত্য যিনি প্রকাশ করেন তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক ডিন ড. মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান। তার অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল ‘বাংলা ভাষায় কুরআন চর্চা’ এই গ্রন্থে তার গবেষণালব্ধ তথ্যে তিনি সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘বাংলা ভাষায় কুরআন অনুবাদের পথিকৃৎ বসুনিয়া’ বাক্যটি থেকেই অনুমিত হয় যে তিনিও তার প্রাপ্ত তথ্যে মাওলানা আমীরউদ্দিন বসুনিয়ার প্রথম বঙ্গানুবাদের তথ্য পেয়েছেন।’

কুরআনের প্রথম অনুবাদক মওলানা আমীরুদ্দিন বসুনিয়া কুরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করে যেতে পারেন নি। পরবর্তী সময়ে গিরিশচন্ত্র সেনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদকর্ম যা তখন বাজারে প্রচারিত ছিলো তাও ছিলো নানা দোষে দুষ্ট, তাই তার অনুবাদের মাত্র ২ বছরের মাথায়ই কুরআনের বিশ্বস্ত ও পূর্ণাঙ্গ অনুবাদকর্ম নিয়ে হাযির হয়েছেন বিখ্যাত কুরআন গবেষক মাওলানা নায়ীমুদ্দীন। এর আগে কলকাতার একজন ইংরেজ পাদ্রীও কুরআনের অনুবাদ করেছিলেন। শোনা যায় মাওলানা আমিরুদ্দীন বসুনিয়া থেকে গিরিশচন্দ্র সেন পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮০৮ থেকে ১৮৮৫ সালের মধ্যে আরো ৯ জন ব্যক্তি কুরআন অনুবাদ করেছেন। তা ছাড়া ২০১১ সালকে বাংলা ভাষায় কুরআন অনুবাদের ২০০ বছর পূর্তি বছর হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় এ বিষয়ে আরো অনেক অজানা তথ্য জনসমক্ষে আসতে শুরু করেছে।

সঠিকভাবে কুরআন বুঝতে যা জানা দরকার

কুরআন মাজীদের সঠিক মর্ম ও উদ্দেশ্য জানার জন্য অথবা শুদ্ধভাবে তার অর্থ ও তাফসীর বুঝার জন্য শুধু আরবী ভাষা জ্ঞান ও সাহিত্যে পারদর্শিতা যথেষ্ট নয়। বরং এর জন্য চাই, আরবীর বেশ কিছু শাস্ত্রে সিদ্ধহস্ত হওয়া। কুরআন বিজ্ঞানের মহাজ্ঞানী আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘সঠিকভাবে কুরআন মাজীদের অর্থ ও তাফসীর বুঝার জন্য পনের রকমের জ্ঞানে পারদর্শী হতে হয়। যথা, আরবী ভাষা, ব্যাকরণ, ইলমে ছারফ, ইলমে ইশতিকাক, ইলমুল বায়ান, ইলমে বাদী‘, ইলমুল কির‘আত, ইলমু উসূলিদ্দীন, ইলমু উসূলিল ফিকহ, আসবাবে নুযূল, কাসাস বা ঘটনাবলী, নাসেখ ও মানসূখ, ইলমে ফিকহ, ইলমুল হাদীস এবং ইলমে লাদুনী। এসব জ্ঞান হলো তাফসীরে কুরআনের অপরিহার্য মাধ্যম। এসব জ্ঞানে যথেষ্ট পারদর্শিতা অর্জন ব্যতিরেকে কেউ কুরআনের তাফসীর করলে তা হবে ‘তাফসীর বির রায়’ তথা মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা, যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।’

তবে জ্ঞান থাকলেও যদি হাদীসের জ্ঞান না থাকে অথবা হাদীসকে বাদ দেয়া হয়, তবুও কুরআন বুঝা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমের কিছু ঘটনা দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা যায় :

ক. আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَلَمۡ يَلۡبِسُوٓاْ إِيمَٰنَهُم بِظُلۡمٍ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلۡأَمۡنُ وَهُم مُّهۡتَدُونَ ٨٢﴾ [الأنعام : 82]

‘যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলমের সাথে সংমিশ্রণ করেনি, তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত’। {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ৮২}

আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, যখন আল্লাহ জাল্লা জালালুহূ এ আয়াত নাযিল করলেন, তখন সাহাবীগণ রাদিআল্লাহু ‘আনহুম একে ভারী মনে করলেন। তাঁরা আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে পাপের মাধ্যমে নিজের ওপর কোনো ‘যুলুম’ করে নি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, তোমরা আয়াতের প্রকৃত অর্থ বুঝতে সক্ষম হও নি। আয়াতে ‘যুলুম’ বলে শিরককে বুঝানো হয়েছে। দেখ অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তাআ‘লা বলেন,

﴿ وَإِذۡ قَالَ لُقۡمَٰنُ لِٱبۡنِهِۦ وَهُوَ يَعِظُهُۥ يَٰبُنَيَّ لَا تُشۡرِكۡ بِٱللَّهِۖ إِنَّ ٱلشِّرۡكَ لَظُلۡمٌ عَظِيمٞ ١٣ ﴾ [لقمان: ١٣]

‘আর স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, ‘প্রিয় বৎস, আল্লাহর সাথে শিরক করো না; নিশ্চয় শিরক হল বড় যুলম।’ {সূরা লুকমান, আয়াত : ১৩}

কাজেই এ আয়াতের অর্থ হবে, যে ব্যক্তি বিশ্বাস স্থাপন করে, অতঃপর আল্লাহর সত্তা, নাম ও গুণাবলিতে এবং ইবাদতের বেলায় কাউকে অংশীদার না বানায়, সে শাস্তির কবল থেকে নিরাপদ ও সুপথপ্রাপ্ত।

খ. আয়েশা রাদিআল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

« لَيْسَ أَحَدٌ يُحَاسَبُ إِلاَّ هَلَكَ ».

‘কেয়ামতের দিন যে ব্যক্তিরই হিসাব নেয়া হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে।’

قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ أَلَيْسَ يَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ [فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا] قَالَ

আয়েশা বলেন, একথা শুনে আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কোরবান করুন। মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ কি বলেন নি,

﴿ فَأَمَّا مَنۡ أُوتِيَ كِتَٰبَهُۥ بِيَمِينِهِۦ ٧ فَسَوۡفَ يُحَاسَبُ حِسَابٗا يَسِيرٗا ٨ ﴾ [الانشقاق: ٧، ٨]

‘অতঃপর যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে; অত্যন্ত সহজভাবেই তার হিসাব-নিকাশ করা হবে।’ {সূরা ইনশিকাক, আয়াত : ৭-৮} উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

« ذَاكَ الْعَرْضُ يُعْرَضُونَ وَمَنْ نُوقِشَ الْحِسَابَ هَلَكَ ».

‘আমলনামা পেশ করার কথা যা এভাবে পেশ করা হবে। কিন্তু পরখ করে যার হিসাব-নিকাশ নেয়া হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে।’

গ. আল্লাহ তা‘আালা ইরশাদ করেন,

﴿ وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ ﴾ [البقرة: ١٨٧]

‘আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৮৭}

এই আয়াত নাযিল হবার পর আদী ইবন হাতেম রাদিআল্লাহু তা‘আলা আনহু একটি কালো সুতা ও একটি সাদা সুতা নিয়ে বালিশের নীচে রাখলেন। রাত অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে তিনি সে দুটোকে বার বার দেখতে লাগলেন। কিন্ত কালো সাদার পার্থক্য ধরা পড়ল না। সকাল হলে তিনি বললেন,

يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّى أَجْعَلُ تَحْتَ وِسَادَتِى عِقَالَيْنِ عِقَالاً أَبْيَضَ وَعِقَالاً أَسْوَدَ أَعْرِفُ اللَّيْلَ مِنَ النَّهَارِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِنَّ وِسَادَتَكَ لَعَرِيضٌ إِنَّمَا هُوَ سَوَادُ اللَّيْلِ وَبَيَاضُ النَّهَارِ ».

ইয়া রাসূলাল্লাহ আমি কালো ও সাদা দুটি সুতো আমার বালিশের নীচে রেখেছিলাম। (তারপর সব ঘটনা বললেন।) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তাহলে তো দেখছি তোমার বালিশ বেজায় চওড়া! (কারণ রাতের কালো প্রান্তরেখা ও ভোরের সাদা প্রান্তরেখার জন্য তোমার বালিশের নীচে স্থান সংকুলান হয়েছে।) আসলে এ দুটি সুতো নয় বরং রাতের অন্ধকার এবং দিনের আলো’।

ঘ. আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ وَٱلَّذِينَ يَكۡنِزُونَ ٱلذَّهَبَ وَٱلۡفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَبَشِّرۡهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٖ ٣٤ ﴾ [التوبة: ٣٤]

‘আর যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও।’ {সূরা আত-তাওবা, আয়াত : ৩৪}

এই আয়াত নাযিল হলে সাহাবায়ে কেরাম মনে করলেন কোনো ধন-সম্পদ জমা রাখা যাবে না, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

« إِذَا أَدَّيْتَ زَكَاةَ مَالِكَ فَقَدْ أَذْهَبْتَ عَنْكَ شَرَّهُ ».

‘যদি তুমি তোমার মালের যাকাত আদায় কর তাহলে নিজ থেকে তার ক্ষতিকে তুমি দূর করে দিলে।’

খালেদ ইবন আসলাম বর্ণনা করেন, একদা আমরা আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিআল্লাহু তা‘আলা আনহুমার সঙ্গে বের হয়েছিলাম। তাঁর কাছে এক গ্রাম্য লোক ওপরের আয়াতটি উল্লেখ করে জানত চাইল এর ব্যাখ্যা কী? তিনি বললেন,

مَنْ كَنَزَهَا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهَا فَوَيْلٌ لَهُ إِنَّمَا كَانَ هَذَا قَبْلَ أَنْ تُنْزَلَ الزَّكَاةُ فَلَمَّا أُنْزِلَتْ جَعَلَهَا اللَّهُ طُهْرًا لِلأَمْوَالِ.

‘যে ব্যক্তি যাকাত আদায় না করে সম্পদ সঞ্চিত রাখবে তার ধ্বংস অনিবার্য। সম্পদ সঞ্চয় করলে এই শাস্তির বিধান ছিল যাকাত সংক্রান্ত আয়াত নাযিলের আগে। পরে যখন আল্লাহ তা‘আলা যাকাত ফরয ঘোষণা করে আয়াত নাযিল করেন, তখন তিনি যাকাতকে ধন-মালের পরিশুদ্ধকারী করে দিয়েছেন’।

আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিআল্লাহু তা‘আলা আনহুমা বলেন,

كُلُّ مَالٍ أَدَّيْتَ زَكَاتَهُ وَإِنْ كَانَ تَحْتَ سَبْعِ أَرْضِيْنَ فَلَيْسَ بِكَنْزٍ وَكُلُّ مَالٍ لَا تُوَدِّى زَكَاتَهُ فَهُوَ كَنْزٌ وَإِنْ كَانَ ظَاهِرًا عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ .

‘যে মালের যাকাত আদায় করা হয়, তা যদি যমীনের সাত স্তর নীচেও থাকে, তাহলেও ‘কানয’ তথা সঞ্চিত ধন-রত্নের মধ্যে গণ্য নয়। আর যে সম্পদের যাকাত আদায় করা হয় না, তা যদি যমীনের পিঠে খোলা থাকলেও ‘কানয’ তথা সঞ্চিত ধন-রত্নের অন্তর্ভুক্ত।’

এ থেকে বুঝা গেল, যাকাত আদায়ের পর যা অবশিষ্ট থাকে তা জমা রাখা গোনাহ নয়।

ঙ. আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَٰكَ سَبۡعٗا مِّنَ ٱلۡمَثَانِي وَٱلۡقُرۡءَانَ ٱلۡعَظِيمَ ٨٧ ﴾ [الحجر: ٨٧]

‘আর আমি তো তোমাকে দিয়েছি পুনঃপুনঃ পঠিত সাতটি আয়াত ও মহান কুরআন।’ {সূরা আল-হিজর, আয়াত : ৮৭}

এই আয়াতে ‘সাবয়ে মাছানী’ অর্থ যে সূরা ফাতেহা, তা আমরা একমাত্র হাদীস থেকেই জানতে পারি। এমনিভাবে কুরআন মাজীদের আরো অনেক আয়াত ও শব্দের অর্থ শুধুমাত্র হাদীস থেকেই জানা যায়। হাদীস ছাড়া তা জানার অন্য কোনো উপায় নেই।

কুরআনী বিধান বাস্তবায়নে হাদীসের ভূমিকা বিকল্পহীন :

যদিও কুরআন মাজীদে শরীয়তের মৌলিক বিধানাবলির বর্ণনা আছে। কিন্তু তা এত সংক্ষিপ্ত যে, শুধু কুরআনের ওপর ভিত্তি করে সেগুলির বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব। এরূপ অনেক বিধি-বিধান রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ দু’একটি উল্লেখ করা যায় :

ক. ‘সালাত’ তথা নামায সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে,

﴿ وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرۡكَعُواْ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ ٤٣ ﴾ [البقرة: ٤٣]

‘আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ৪৩}

কিন্তু সালাতের ওয়াক্তসমূহ রাকাতের সংখ্যা, কেরা’তের তাফসীল, শর্তাদি, সালাত ভঙ্গের কারণসমূহ এবং সালাতের সঠিক নিয়ম-পদ্ধতি ইত্যাদির বিস্তারিত বর্ণনা জানতে হাদীসই ভরসা।

খ. কুরআন মাজীদে যাকাতের ব্যাপারে বলা হয়েছে,

﴿ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ ﴾ [البقرة: ٤٣]

‘এবং তোমরা যাকাত আদায় কর’। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ৪৩} কিন্তু যাকাত কী? এর নেছাব কত? কখন তা আদায় করতে হবে? কতটুকু আদায় করা জরুরী? ইত্যাদি শুধু হাদীস থেকেই আমরা জানি। হাদীস ছাড়া এসব জানার কোনো উপায় নেই।

গ. কুরআন মাজীদে সাওম বা রোযা সম্পর্কে বলা হয়েছে,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ ﴾ [البقرة: ١٨٣]

‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেযগার হতে পার’। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৮৩}

কিন্তু সিয়াম ফরয হওয়ার জন্য শর্তাদি কী? সিয়াম ভঙ্গের কারণসমূহ কী? সিয়ামাবস্থায় কী কী বৈধ? ইত্যাদি আরো অনেক বিধি-বিধানের বিস্তারিত বর্ণনা শুধু হাদীস থেকেই পাওয়া যায়।

ঘ. কুরআন মাজীদে হজ সম্পর্কে বলা হয়েছে,

﴿ وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧ ﴾ [ال عمران: ٩٧]

‘আর সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। আর এ ঘরের হজ করা হ’ল মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য, যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার’। {সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭}

কিন্তু জীবনে হজ কত বার ফরয? হজ্জের রুকুন কী? হজ আদায়ের সঠিক নিয়ম কী? ইত্যাদি হজ ও উমরা সম্পর্কীয় আরো অনেক বিধানের বিস্তারিত বর্ণনা শুধু হাদীসেই রয়েছে।

ঙ. পানাহারের বস্তু সামগ্রীর কিছুকে হালাল ও অন্য কিছুকে হারাম ঘোষণা করে অবশিষ্ট বস্তুনিচয় সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে,

‘তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করা হয়েছে’। অন্য স্থানে আছে ‘অপবিত্র বস্তুসমূহ হারাম করা হয়েছে’। কিন্তু কোন বস্তু হালাল ও পবিত্র, আর কোনটি অপবিত্র ও হারাম, এসবের বিস্তারিত বর্ণনা আমরা জানতে পাই শুধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কাজ থেকেই।

চ. কুরআন মাজীদে চুরি করার শাস্তি বলা হয়েছে ‘হাত কেটে ফেলা। কিন্তু কী পরিমাণ মাল চুরি করলে? এবং কতটুকু হাত কাটা হবে? ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা শুধু হাদীসেই আমরা পেয়ে থাকি।

ছ. কুরআন মাজীদে মদপান হারাম বলা হয়েছে। কিন্তু সকল মাদকদ্রব্যের বিধান কী হবে? নেশাযুক্ত বস্তু পরিমাণে কমবেশি হলে কী বিধান হবে? ইত্যাদি মদ সংক্রান্ত অনেক বিধানের বিস্তারিত বর্ণনা শুধু হাদীসে পাওয়া যায়।

জ. কুরআন মাজীদে মহিলাদের মীরাছ সম্পর্কে বলা হয়েছে, একজন হলে সে অর্ধেক সম্পত্তি পাবে, আর যদি দুয়ের অধিক হয়, তখন দুই তৃতীয়াংশ পাবে। কিন্তু দুজন হলে কতটুকু পাবে তা আর কুরআনে নেই, তা শুধু হাদীসেই পাওয়া যায়। এছাড়া মীরাছ সম্পর্কিত আরো অনেক বিধান আমরা শুধু হাদীস থেকেই নিই।

ঝ. কুরআন মাজীদে সুদকে কঠোরভাবে নিষেধ করে একে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু কোন ধরনের লেনদেন সুদের অন্তর্ভুক্ত আর কোনটি নয়- এসব ব্যাপারে হাদীসেই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

এমনিভাবে শরীয়তের আরো অনেক বিধি-বিধান রয়েছে যেগুলি সম্পর্কে কুরআন মাজীদে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হয়েছে। অথচ হাদীসেই পাওয়া যায় তার বিস্তারিত বিবরণ। এমতাবস্থায় যে বা যারাই হাদীসকে বাদ দিয়ে কুরআন বুঝার বা কুরআনী বিধানাবলি বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে, তারা যে স্পষ্ট গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কেন নয়, আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেসব দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন তার অন্যতম ছিল মানুষকে পবিত্র কুরআন শিক্ষা দেওয়া এবং তার বক্তব্য তাদের কাছে সুস্পষ্ট করে দেওয়া। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ كَمَآ أَرۡسَلۡنَا فِيكُمۡ رَسُولٗا مِّنكُمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡكُمۡ ءَايَٰتِنَا وَيُزَكِّيكُمۡ وَيُعَلِّمُكُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمۡ تَكُونُواْ تَعۡلَمُونَ ١٥١ ﴾ [البقرة: ١٥١]

‘যেভাবে আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। আর তোমাদের শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৫১}

শায়খ ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, এটা জানা দরকার যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের কাছে কুরআনের অর্থ বলে দিয়েছেন যেমন তিনি তাঁদের কাছে এর শব্দসমূহ বর্ণনা করেছেন। কেননা আল্লাহর বাণী,

﴿ وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلذِّكۡرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيۡهِمۡ وَلَعَلَّهُمۡ يَتَفَكَّرُونَ ٤٤ ﴾ [النحل: ٤٤]

‘এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে।’ {সূরা আন-নাহল, আয়াত : ৪৪} এই আয়াতটি কুরআনের শব্দ এবং তার ব্যাখ্যা উভয়টাকেই শামিল করে।

নিম্নে বাংলায় রচিত ও অনূদিত আল-কুরআনের অনুবাদ ও তাফসীরগ্রন্থসমূহের একটি তালিকা প্রদান করা হলো :

(পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ ও তফসীর)

গিরিশচন্দ্র সেন, ১৮৩৪-১৯১০। পাঁচদোনা, নরসিংদী।

– কোরান শরীফের অনুবাদ। ৩ খণ্ড। কলিঃ নববিধান ব্রাহ্মণ সমাজ, ১৮৮১-৮৬। ২য় মুদ্রণঃ ১৮৮৯-৯২। ৩য় মুদ্রণঃ ১৯০৭-০৮। ৪+১০+৭২০ পৃ। ৪র্থ মুদ্রণঃ ১৯৩৬। ৭২০ পৃ। নতুন মুদ্রণঃ কলিঃ হরফ প্রকাশনী, ১৯৭৯। ৬৮৩ পৃ। (প্রথমে ১৮৮১ থেকে খণ্ড হিসাবে বের হয় এবং ১৮৮৫তে ৩০তম খণ্ডের কাজ শেষ হয়। ১ম খণ্ড শেরপুর (ময়মন) অনুবাদক, ১৮৮১। ২৮+৭২৯ পৃ। অন্য সংস্করণ, খোশরোজ, ১৯৯৬। ৭৬৬ পৃ। নতুন মুদ্রণঃ কলিঃ হরফ প্রকাশনী, ১৯৭৯। ৬৮৩ পৃ। (প্রথমে ১৮৮১ থেকে খণ্ড হিসাবে বের হয় এবং ১৮৮৫তে ৩০ তম খণ্ডের কাজ শেষ হয়। ১ম খণ্ড। শেরপুর (ময়মন) অনুবাদক, ১৮৮১। ২৮ পৃ। অন্য সংস্করণ : ঝিনুক পুস্তিকা, ১৯৭৭। ২৮+৭৯২ পৃ। আরেক সংস্করণ : খোশরোজ, ১৯৯৬। ৭৬৬ পৃ।

শাহ আব্দুর রহীম, ১৮৫৯-১৯১০।

– কোরান। কলিঃ গ্রন্থকার, ১৮৯২।

খান বাহাদুর তসলিমুদ্দীন আহমদ, ১৮৫২-১৯২৭। রংপুর। আইনজীবী।

– কোরানের বঙ্গানুবাদ। ৩ খণ্ড। কলিঃ ওরিয়েন্টেল প্রিন্টার্স এন্ড পাবলিশার্স, ১৯২২-২৫। ১ম খণ্ড ১৯২২। ৮+৪৫৮ পৃ। সংসদ। ২য় খণ্ড ১৯২৪। ৪৫৮ পৃ। ৩য় খণ্ড ১৯২৫। ৫২১। (প্রথমে পারা হিসাবে বের হয়। অমুসলিমগণও যাতে পড়তে পারে তাই মূল আরবী বাদ দেয়া হয়। রচনাকাল-১৮৯১-১৯১৩)

ডা. সূফী ময়েজ উদ্দীন আহম্মদ (মধুমিয়া), ১৮৫৫-১৯৩০।

– বঙ্গানুবাদ তাফসীরে হক্কানী। ১ম খণ্ড কলিঃ অনুবাদক, ১৯০১। ৬০ পৃ। (প্রথমে ইাসলাম প্রচারকে ধারাবাহিকভাকে প্রকাশিত হয়। স্যার সৈয়দ আহমদ খান, ১৮১৭-৯৮ কৃত উর্দু অনুবাদ থেকে বাংলায় অনূদিত হয়।)

এই তফসীরের অন্য অনুবাদ।

মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী, ১৮৯৫-১৯৬৯।

– হক্কানী তফসীর। (১৬৫০ পৃষ্ঠা ৬ খণ্ড প্রকাশ হয়েছে) পুরো কুরআন করেছেন। খাদেমুল ইসলাম পাবলিকেশান্স, ১৯৮২। ৩০০ পৃ।

মুহম্মদ আব্দুল মজিদ।

– কোরান শরীফ। কলিঃ গ্রন্থকার, ১৯০৭। পুর্ণ। আ!

মাওলানা আবুল হাসান মোঃ, আব্বাস আলী, ১৮৫৯-১৯৩২। চন্ডীপুর।

বাদুড়িয়া, ২৪ পরগনা।

– কুরআনের বঙ্গানুবাদ। ১-৭ খণ্ড, কলিঃ আলতাফী প্রেস, ১৯০৮। ৫+২২২ পৃ। খণ্ড ৮-৩০ (একত্রে) : ১৯০৯। ৭৫৪ পৃ। ১২-৩০ পারা একত্রে কলিঃ আলতাফী প্রেস, ১৯০৯। ৯৬০ পৃ। ৫ম সংস্করণ ১৯৮৩। (মূল আরবীর নীচে শাহ রফি উদ্দিন, ১৭৪৯-১৮৩৩ কৃত উর্দু তরজমা ও এর নীচে বাংলা অনুবাদ। পাশে মাওলানা বাবর আলী, ১৮৭৪-১৯৪৬, সাহেবের বিস্তৃত টিকা রয়েছে)।

রেভারেন্ড উইলিয়াম গোল্ডস্যাক, ১৮৬১-১৯৫০।

– কোরআন। কলিঃ খৃষ্টান সাহিত্য সমিতি, ১৯০৮-২০। (পারা হিসাবে) অন্য মুদ্রণঃ কলিঃ খৃষ্টান সাহিত্য সমিতি,….। ২ খণ্ড। ১১৯৩ পৃ।

খোন্দকার আবুল ফজল আব্দুল করীম, ১৮৭৫-১৯৪৭। সেহড়াতৈল, টাঙ্গাইল।

– কুরআন শরীফ। ১ম খণ্ড : টাঙ্গাইল, অনুবাদক, ১৯১৪। ২১৭ পৃ। পারা : ১-৪, টাঙ্গাইল : গ্রন্থাকার, ১৯১৪-২০। (আরবী ছাড়া) অন্য সং : পারা ১-৪ : কলিঃ গ্রন্থকার, ১৯২৯। (আরবীসহ) পঞ্চবিধ সংস্করণঃ সমগ্র কুরআন শরীফ।

১। আরবী-বাংলা সং। ২। আরবী-উর্দু সং। ৩। আরবী সং। ৪। বাংলা সং। ৫। উর্দু সং।

মাও আব্দুল হাকিম, ১৮৮৭-১৯৫৭। ফরিদপুর।

Ñ আল-কুরআনুল হাকিম : মূল আরবীসহ বিশুদ্ধ ও বিস্তারিত তফসীর। ৩ খণ্ড।

– কোরান মঞ্জিল, ১৯৫৮। (সুদীর্ঘ ১৫ বছরের সাধনার ফর। প্রথমে পারা হিসাবে (১৯২২-৩৮) প্রকাশিত হয়। ১ম পারা : কলিঃ ফাজেল এন্ড সন্স, ১৯২২। ৫৮ পৃ। অন্য মুদ্রণ : কলিঃ ওসমানিয়া লাইব্রেরি, ১৯৭৯-৮০। ৩ খণ্ড। (যুগ্ম-অনুবাদক : মাওলানা মোঃ আলী হাসান।)

ফজলুর রহিম চৌধুরী, ১৮৯০-১৯৩০। উলানিয়া, বরিশাল।

Ñ কুরআন শরীফের বাংলা তরজমা। ২ খণ্ড। কলিঃ ফজলুল করিম চৌধুরী, ১৯৩০। ৪৫২+৫০০ পৃ। (আরবী ছাড়া)

– কোরান শরীফ : বাঙ্গালা অনুবাদ।

নকীব উদ্দীন খান, ১৮৮৪-১৯৭৮। বাদপুর, বসিরহাট।

– কোরান শরীফের বঙ্গানুবাদ। পারা হিসাবে ১৯৩৮-৪৬। ১৫৪৪ পৃ।

(মাওলানা মুসা ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম লেখককে সাহায্য করেন)

মৌলভী মুহাম্মদ গোলাম আকবর, ১৮৯৩-১৯৫৬। কটি, শালিখা, যশোর।

– সমগ্র কোরআনের অনুবাদ। অপ্রকাশিত।

মাওলানা আনিসুর রহমান মুর্শিদাবাদ, ১৯০২। সুজানগর, মুর্শিদাবাদ।

– কোরানের অনুবাদ। অপ্রকাশিত।

মাওলানা ওসমান গনি, ১৮৯০। সালদা, বর্দ্বমান।

– কোরান শরীফ : বাংলা হরফে মূল আরবীসহ। ঢাকা। ১৩০০ পৃ।

– কুরআনের বঙ্গানুবাদ। কলিঃ এলায়েন প্রেস, ১৯৪৭। ১২৭৪ পৃ। (পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ)

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ১৮৮৫-১৯৬৯।

– কোরআনের তফসীর। পাণ্ডুলিপি, বাংলা একাডেমী। রচনাকাল : ১৯৪০-৪৯।

খান বাহাদুর আবিদ আলী, ১৯০৭-৮৭। সাতবাড়িয়া, পাবনা।

– কুরআনের অনুবাদ। অপ্রকাশিত। (পূর্ণাঙ্গ)

নূর মোহাম্মদ আযমী, ১৯০০-৭২। নোয়াখালী।

– বাংলায় কোরান তরজমা। (অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগারে আছে বলে জানা যায়)

মোক্তার শাফায়াতুল্লাহ, ১৮৮০-১৯৬৮। গাইবান্ধা। আইনজীবী।

– তফসীর ৩০ পারা (অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি গাইবান্ধা। সরকারী কলেজের অধ্যাপক জনাব আব্দুর রাজ্জাকের কাছে আছে)

নাছের হোসেন জাফরী, ১৮৬৮-১৯৬৭। ভেকুটিয়া, যশোর।

– কোরআন শরীফের তরজমা। অপ্রকাশিত।

সুলতান আহমদ মির্জা, নোয়াখালী।

– কোরান শরীফ।

খান বাহাদুর আব্দুর রহমান খাঁ, ১৮৮৯-১৯৬৪। ফরিদপুর। শিক্ষাবিদ।

– কোরান শরীফ। প্রভিন্সিয়েল লাইব্রেরী, ১৯৫২-৫৩। ৩ খণ্ড। ১৮০০ পৃ। পুনর্মুদ্রণ : ১৯৭৯। ৫০১+৫০১+৫৭০ পৃ।

মাও মোঃ আকরম খাঁ, ১৮৬৮-১৯৬৯। ২৪ পরগনা, পরে ঢাকা।

– তাফসীরুল কোরআন, সরল বাংলা অনুবাদ ও বিস্তারিত তফসীরসহ।

১ম খণ্ড কলিঃ মোহাম্মদী প্রেস, ১৯৩০। ৪৬ পৃ। ২য় খণ্ড। ১৯৩৮। ৩৩৮ পৃ। ২য় সংস্করণ : ১৯৫০। ৩য় খণ্ড। ৭৭৬ পৃ। অন্য সংস্করণ : বদরুল আনাম খাঁ, ১৯৫৮-৬৯। ৫ খণ্ড।

এই তফসীরের প্রতিবাদে লিখিত :

সূফী মাও মোঃ রুহুল আমিন, ১৮৮৪-১৯৪৫।

– খাঁ ছাহেবের তফছিরের প্রতিবাদ (১) নারায়ণপুরঃ গ্রন্থকার,…। ৬৪ পৃ।

মাওলানা আব্দুস সাত্তার। হাবীরপুর, খুলনা। শিক্ষক।

– তফসীরের নামে সত্যের অপলাপ (২) খুলনাঃ গ্রন্থকার, ১৯। ৮৮ পৃ।

মাও শামছুল হক ফরিদপুরী, ১৮৯৫-১৯৬৯। ফরিদপুর।

– তফসীরের নামে সত্যের অপলাপ (৩) মাওলানা আজিজুল হক, বিক্রমপুর। অধ্যাপক। লালবাগ মাদ্রাসা।

-পবিত্র কোরআনের অপব্যাখ্যা বা খাঁ ছাহেবের কতিপয় তফসীরের প্রতিবাদ (৪)। গ্রন্থকার, ১৯৬০। ৬১ পৃ।

মাও শামছুল হক ফরিদপুরী, ১৮৮৫-১৯৬৯।

– নূরুল কোরআন, বাংলা তরজমা কোরান শরীফ। হামিদিয়া লাইব্রেরি, ১৯৬-। ক্রমশ। (যুগ্ম-অনুবাদক- মাওলানা আজিজুল হক)

– তাফসীরে আশরাফী। ৬ খণ্ড। এমদাদিয়া লাইব্রেরি, ১৯৬২। (পারা হিসাবে)

– অন্য মুদ্রণ, ১ম খণ্ড। এমদাদিয়া, ১৯৭৭। ৭২৮ পৃ। ২য় খণ্ড। ১৯৭৬। ৬৫২ পৃ। ৩য় খণ্ড ১৯৭৭। ৬১৩ পৃ। ৪র্থ খণ্ড, ১৯৭৬। ৬২৪ পৃ। ৫ম খণ্ড, ১৯৭৫। ৩৪৪ পৃ। পুনর্মুদ্রণ, ১৯৮০। ৩৪৪ পৃ। ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৯৭৬। ২৭০ পৃ। ৯ম মুদ্রণ, ৬ খণ্ড। ৪৫০০ পৃ। (বিশেষ বোর্ড কর্তৃক সম্পাদিত) (উর্দু বায়ানুল কুরআনের অনুবাদ। মূল হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ., ১৮৬৩-১৯৪৩। (প্রথমে পারা হিসাবে বের হয়)

খন্দকার মোহাম্মদ হুছাইন।

– সহজ পাক তফসীর। পাকুল্লা, টাঙ্গাইল, তফসীর মঞ্জিল, ১৯৬৩। ১৮১ পৃ। ক্রমশ : অনুদ্রণঃ ময়মনঃ খন্দকার ফজলুল করিম, ১৯৭৬। ১৮১ পৃ।

কাজী আব্দুল ওদুদ, ১৮৯৪-১৯৭০। ফরিদপুর, পরে কলিকাতা।

– পবিত্র কোরান। কলিঃ অনুবাদক, ১৯৬৬-৬৭। ২ খণ্ড।

আলী হায়দার চৌধুরী, ১৯২১-৮৩। অধ্যক্ষ।

– কোরান শরীফ। ঝিনুক প্রকাশনী, ১৯৬৭। ৮৬২ পৃ। ২য় সংস্করণ, ১৯৬৯। অন্য মুদ্রণ, ১৯৭৫। (বাংলা অনুবাদ। আরবী বিবর্জিত)

ইসলামিক একাডেমি ঢাকা। (বর্তমানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

– কুরআনুল করীম। ই.এ, ১৯৬৭। ৩ খণ্ড। ১২১১ পৃ। ৭ম সংস্করণ, ই.ফা, ১৯৮৩। ৩ খণ্ড। (অনুবাদক, শামসুল ওলামা বেলায়েত হোসেন ও অন্যান্য)।

মাওলানা মোহাম্মদ ছায়ীদ ইব্রাহীমপুরী, ১৮৮২-৭১। ইব্রাহীমপুর, চাঁদপুর।

– কোরআনের মুক্তাহার, মূল কোরআন শরীফসহ উহার বঙ্গানুবাদ ও বিস্তৃত ব্যাখ্যা। কোরান মহল, ১৯৬৮। ১ম মঞ্জিল, ২৫২ পৃ. (৭ম মঞ্জিলে সমাপ্ত হয়। ১৯৫৩ সনে অনুবাদের কাজ শেষ হয়।

হাকীম আব্দুল মান্নান, ১৯২২। ঢাকা।

– কোরান শরীফ। সরল সহজ কথা ভাষায় প্রথম ও মূলানুগ অনুবাদ। তাজ কোম্পানী, ১৯৬৯। ৬৪৮ পৃ। (আরবী বর্জিত)

শামসুল ওলামা বেলায়েত হোসেন, ১৮৮৭-১৯৮৪। বীরভূম, পরে ঢাকা।

– কুরআনুল করীম । ৩০ পারা। অপ্রকাশিত।

আব্দুল আজিজ নেছারী।

– তাফহীমুল কুরআন : কুরআন মজিদের বাংলা তফসীর। ইসলামিক পাবলিকেশন্স, (পারা হিসাবে)। অন্য মুদ্রণ : আধুনিক প্রকাশনী, ১৯৭৮-৭৯। ১৯ খণ্ড। (প্রতি খণ্ড : ২০০-২৫০ পৃ।) ৮ম সংস্করণ : ১৯৯৯২।

– তরজমা কুরআন মজীদ। ১ খণ্ডে সম্পূর্ণ। ৩য় প্রকাশ : আধুনিক, ১৯৯৫। ১২৫২ পৃ।

– তাফহীমুল কোরআন। মাহবুব প্রকাশনী, ১৯৭৫। ৪৯৬ পৃ। (অনুবাদ। মূল লেখক মাওলানা মওদূদী) (৩) অন্য প্রকাশ : ৬ খণ্ড। ৩০ পারা। (৪) এই পুস্তকের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার পারা হিসাবে। পারা ২৬-৩০ একসঙ্গে। ১৯৯৫। ৭১২ পৃ। অনুবাদক- গোলাম আযম।

মুহা নূরুল ইসলাম, ১৯৩৩। বগুড়া, প্রকৌশলী।

– তফসীরুল কোরআন। শব্দসহ তফসীর। ১৯৭০।

অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মাদ তাহের, ১৯১৪-৯৪। সিঙ্গরিয়া, করিমগঞ্জ, আসাম। কলিঃ আলীয়া মাদ্রাসা।

– আল-কুরআন : তরজমা ও তফসীর। ৫ খণ্ড। কলিঃ মদনী মিশন, ১৯৭০-৭২। ২২৫০ পৃ। (মূল আরবীসহ)

মাওলানা নূরুর রহমান, ১৯০৯। নোয়াখালী।

– তফছীরে বয়ানুল কোরানের বঙ্গানুবাদ। এমদাদিয়া, ১৯৭৪। ৯৬৬ পৃ।

(মূল গ্রন্থকার, হযরত আশরাফ আলী থানভী রাহ.)

মোবারক করীম জওহর।

– কোরআন শরীফ : টীকাসহ সমগ্র কোরআন শরীফের বঙ্গানুবাদ। কলিঃ হরফ, প্রকাশনী, ১৯৭৪। ৩৮৪ প্র। (আরবী ছাড়া)

এ. কে. এম ফজলুর রহমান মুন্সী। রাজামেহার, কুলিল্লা।

– বাংলা কোরআন শরীফ। তাজ পা. হা, ১৯৬৫। ৫০৪ প্র। ২য় সংস্করণ : ১৯৭৫। ৬৩৮ পৃ। ৩য় সংস্করণ : ১৯৭৯। ৬১৮ পৃ। বাংলাদেশী সংস্করণ : খান ব্রাদার্স, ১৯৯২। ৪৪৮ পৃ। (শিরোনাম পরিবর্তিত)

মোঃ পিয়ার আলী নাজির, হাওড়া, পরে ঢাকা। সাবেক সি. এ. পি।

– আল-কোরআন। এস. মুজিবুল্লাহ এন্ড সন্স, ১৯৭৫। ৭৯৯পৃ। ২য় সং

১৯৮৩। ৬৬০ পৃ.। (তরজমা)

এ কে এম ফজলুর রহমান মুন্সী, রাজামেহার, কুমিল্লা।

– পবিত্র কুরআন শরীফ, ১-৩০ পারাঃ মূল আরবীসহ বিশুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা সম্বলিত। তাজ পা. হা, ১৯৭৭। ২ খ-। ৪০+১৫৬২ পৃ।

এ কে এম ফজলুর রহমান আনওয়ারী ।

– বঙ্গানুবাদ কোরান শরীফ। ২য় সং তাজ পা. হা, ১৯৭৫। ২৬৪+৩১৮ পৃ। সম্পাদক, একেএম ফজলুর রহমান মুন্সী।

ওহিদুল আলম, ১৯১১-৯৮। চট্র। শিক্ষক।

– কোরানের বাংলা অনুবাদ। অপ্রকাশিত।

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, ১৯৩৬। গফরগাঁও।

– তফসীরে মা’রেফুল কুরআন। ই.ফা ১৯৮০। ৮ খ-। (৭০০০ পৃ সম্বলিত)। মূল গ্রন্থকার, মুফতী মুহম্মদ শফী।

এই গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ :

পবিত্র কুরআনুল করীম : বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তফসীর (মা‘আরেফুল কুরআনের সংক্ষিপ্ত সং) সাউদী দূতাবাস, ১৯৯৪। ১৪৮৭ পৃষ্ঠা।

মুহম্মদ খুরশীদ উদ্দীন, ১৯৪৪ ।

– তাফসীরে জালালাইন । (দারুল উলুম পাবস, ১৯৮২ । ১০+৩৫৮ পৃ।

-তাফসীরে তাবারী । ২ খণ্ড । ই.ফা ।

মোঃ লুৎফর রহমান, ১৯৪৪। অধ্যক্ষ, দেলুয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, সুহাগপুর, সিরাজ ।

-কোরান কোষঃ বিশদ অনুবাদ ও আলোচনা । অপ্রকাশিত ।

আব্দুল আজিজ, ১৯৪২ । শাহজাপুর, বি.এ শিক্ষক ।

– কোরানের অনুবাদ । অপ্রকাশিত । রচনাকাল, ১৯৮০-৮৩ ।

তাফছীরে লুৎফুল্লাহ।

সদর উদ্দিন আহমদ চিশতি।

– তফসীরে কোরানুল করীমঃ বিস্তারিত ব্যাখ্যা। কেরানীগঞ্জ, ঢাকা। ইসলামিয়া চিশতিয়া সংঘ, ১৯৮৬।। ৪ খণ্ড। (এতে কিছু বিতর্কিত অংশ আছে বলে জানা যায়।)

মাওলানা মোঃ আমিনুল ইসলাম, ১৯৩৫। কুমিল্লা ।

– তাফসীরে নূরুল কোরআন । আলবালাগ পাবলিকেশন্স, ১৯৮৪ । ৩০ খণ্ড।

ড. মুহাম্মদ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান, ১৯৩৬। অধ্যাপক রা.বি।

-তাফসীরে ইবনে কাছির। ই.ফা, ১৯৮৮। রাজশাহী, অনুবাদক, ১৯৮৬। ১-৮ খণ্ড। প্রতি খণ্ডে পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৫০ (কমবেশি)।

অধ্যাপক আখতার ফারুক, ১৯৩৫। বরিশাল।

-তাফসীরে ইবনে কাছির। ই.ফা ১৯৮৮। তিন খণ্ড।

আব্দুদ দাইয়্যান চিশতী (মাওলানা শাহ সূফী)। শর্ষিণা, বরিশাল।

– বাংলা কোরান শরীফ। কথাকলি ১৯৮৭। পারা হিসেবে প্রকাশিত। (মূল আরবী, নামকরণ, শানেনযুল, বাংলা উচ্চারণ, অনুবাদ, শব্দার্থ, ব্যাখ্যা, ফজিলত, তাবিজাত ও মানব মনের জিজ্ঞাসা সম্বলিত।)

মোঃ শামসুল হক। এমএসসি।

– পবিত্র কোরানের বাংলা অনুবাদ। ৩ খণ্ড। অনুবাদক, ১৯৮৮। (আয়াত হিসাবে অনুবাদ)।

নূর মোহাম্মদ আযমী, ১৯০০-৭২। নোয়াখালী।

– ফুননুত তফসীর (বাংলায় কোরান তর্জমা)। অপ্রকাশিত। পাণ্ডুলিপি বাংলা একাডেমী।

মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ শরীফ।

– জালালাইন শরীফ। ১ম ও ২য় খণ্ড, চাঁদপুর, আবুল কাশেম, ১৯৮৪। ২৩৬ পৃষ্ঠা।

ফরীদ উদ্দিন মাসউদ, ১৯৫০।

– তাফসীর-ই জালালায়ন। ই.ফা, ১৯৯৩। মূল গ্রন্থকার, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ.)।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন। অনুবাদ পরিষদ।

-তাফসীরে তাবারী শরীফ। ই.ফা, ১৯৯১-৯৫। ৬ খণ্ড। মূল : আল্লামা আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর তাবারী রহ.।

মাওলানা মুহাম্মদ সাখাওয়াত উল্লাহ।

– রূহানী কোরআন শরীফ। তাজ. পা. হা, ১৯৯-। ৭২৭ পৃ.।

হাফিজ মুনির উদ্দীন আহমদ।

– তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন। আল কোরআন একাডেমি লন্ডন, ১৯৯৫। ৩০ খণ্ডে সমাপ্য। (মূল সাইয়েদ কুতুব শহীদ রহ.)।

আবদুল আজিজ আলি-আমান। পশ্চিমবঙ্গ।

– আল কোরান। (অ খণ্ড) কলিঃ হরফ প্রকাশনী, ১৯৯০। ৩৪০ পৃ।

ড. ওসমান গনি।

– কোরআন শরীফ। ২য় সংস্করণ, কলিঃ মল্লিক ব্রাদার্স, ১৯৯২। ৫৫২ পৃ।

জামিল বিন জিয়ারত।

– আল-কোরআন। কুষ্টিয়া, অনুবাদক, ১৯৭৭। ১ম খণ্ড ১-৫ পারা। মূল লেখক, মোল্লা মোহাম্মদ।

মাওলানা এম এ বশির উদ্দিন।

– ছহীহ বঙ্গানুবাদ কোরআন শরীফ। কো. ম. লা, ১৯৯৬। ৬৬২।

মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান মল্লিক। (অনুবাদক)

– তাফসীরে মাজেদী শরীফ। ই.ফা, ১৯৯৪। (মূল : মাওলানা আব্দুল মজীদ দরিয়াবাদী)।

ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান। অধ্যাপক ঢা.বি।

– কোরান শরীফ। খোশরোজ, ১৯৯৭। ২ খণ্ড (মূল আরবীর সঙ্গে বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থসহ)।

– কোরান শরীফ। খোশরোজ, ১৯৯৭। ২ খণ্ড (মূল আরবীর সঙ্গে বাংলা অর্থসহ পূর্ণাঙ্গ)।

– ত্রিশ পারার বাংলা তরজমাসহ সমগ্র কোরআন শরীফ। খোশরোজ, ১৯৯৭।

মাওলানা মোহাম্মদ শামসুল হক দৌলতপুরী।

– তাফসীর আহকামুল কুরআন। মদিনা শরীফ পারফিউমারী হাউস, ১৯৯৩। ৪২৩ পৃ.।

মোঃ আব্দুল আজীজ। নোয়াখালী। হেডমাস্টার, এমএবিটি।

– তাকমীলুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন। ১ম ও ৭ম খণ্ড ১৯৮৭-৮৮। ৪৫০+৪৯০ পৃ। ২য়-৬ষ্ঠ খণ্ড অপ্রকাশিত।

সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী।

– তফসীরে কোরান। রমযান, ১৯৯৯। ৫৫৬ পৃ.।

শামসুল হক দৌলতপুরী।

– তাফসীর শাস্ত্র পরিচিতি। ই.ফা, ১৯৯৯। ৭৭৬ পৃ।

মাওলানা মাজহার উদ্দীন আহমদ।

– শাহনূর কুরআন শরীফ (উচ্চারণসহ) ছারছীনা, ১৯৯৮। ১০৯৬ পৃ.।

বাসির উদ্দিন আহমদ।

– পবিত্র কোরান শরীফ। কোরান মঞ্জিল, ১৯৯৬। ৬৫১ পৃ.। অনুবাদ। মূল : আশরাফ আলী থানভী রহ.।

এম আব্দুল ওয়াহাব।

– কবিতার ছন্দে আল-কুরআনের বঙ্গানুবাদ। খন্দকার, ১৯৯৭। ১৬০ পৃ.।

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

– তাফসীরে উসমানী। ই.ফা, ১৯৯৬-৯৭। ২ খণ্ড ৭০৪+৭৫১ পৃ.। মূল : হযরত মাওলানা মাহমুদুল হাসান ও মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানী।

হাফেজ শহিদুল ইসলাম।

– তাফসীর ফাতহুল মাজীদ। আরআইএস, ১৯৯৭। ২ খণ্ড।

অধ্যাপক গোলাম আযম।

-আল- কোরানের সহজ অনুবাদ। আধুনিক, ১৯৯৮। ৪০৮ পৃ.।

মোঃ বেলাল হোসেন।

তাফসীরুল কাশশাফ : সূরা আল-ফাতিহা। এদারায়ে কুরআন, ১৯৯৮। ২২১ পৃ.। যুগ্ম অনুবাদক মোঃ নিজাম উদ্দীন।

আব্দুশ শহীদ নাসিম।

– আল-কুরআন আততাফসীর। ২য় সং. শতাব্দী, ১৯৯৮। ৮৪ পৃ.।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা।

– তাফসীরে মাযহারী। ই.ফা, ১৯৯৮ ২ খণ্ড ৭২৩-৭৮০ পৃ.। মূল : আল্লামা কারী সানাউল্লাহ পানিপথি রহ.।

আলহাজ্ব আব্দুর রব চিশতী।

– ছহীহ পরশমনি কোরান শরীফ (বাংলা উচ্চারণ, অনুবাদ) খাজা, ১৯৯৯। ৩৫০ পৃ.।

মুহিব্বুর রহমান খান।

– আল-কুরআনের কাব্যানুবাদ।

আল-বায়ান ফাইন্ডেশন।

– আল কুরআনের সহজ সরল অর্থানুবাদ,

হুসাইন বিন সোহরাব।

– আল-মাদানী কুরআন মাজীদ, মূল আরবী, বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত টীকা।

হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমদ।

– কোরআন শরীফ সহজ সরল বাংলা অনুবাদ, আল কোরআন একাডেমী লন্ডন, প্রথম প্রকাশ : মার্চ ২০০২।

মাওলানা আব্দুল হামিদ কাসেমী,

– পবিত্র আল কোরআনের পুথি অনুবাদ, (অনুবাদক ও প্রকাশক) নিউ হামিদিয়া প্রকাশনী, মিরপুর রোড (সুকন্যা টাওয়ার) ধানমন্ডি, ঢাকা, প্রকাশকাল : ডিসেম্বর ২০০৬।

সোহরাব বিন হুসাইন,

– মাদানী তাফসীর (১-১১ খণ্ড ৩০ পারা)।

হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ,

– তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন, অনুবাদ : মূল : শহীদ সাইয়েদ কুতুব রহ., প্রকাশক : আল কোরআন একাডেমী লন্ডন, (২২ খণ্ড)।

হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ,

– তাফসীরে উসমানী, মূল : মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানী, অনুবাদ, প্রকাশক : আল কোরআন একাডেমী লন্ডন, (২২ খণ্ডে সমাপ্য)।

আল কোরআন একাডেমী লন্ডন।

– আসান তাফসীর, মূল : আবু সলিম মোহাম্মদ আবদুল হাই, ভাষান্তর ও প্রকাশ : আল কোরআন একাডেমী লন্ডন।

সংক্ষেপে তরজমা ও তাফসীরের ভূত-ভবিষ্যত :

বাংলা ভাষায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদ শুরুর ধারাবাহিকতায়ই শুরু হয়েছে তাফসীর সংকলন ও এর অনুবাদের কাজ। ওপরে প্রকাশকালের হিসেবে মোটামুটি প্রথম থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত প্রায় সবগুলো অনুবাদ ও তাফসীরের নামই তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সঠিক বা ভ্রান্ত চিন্তা কিংবা অনুবাদ ও তাফসীরের মান বিবেচনায় আনা হয় নি। গবেষণার খাতিরে সবগুলোই এখানে সমভাবে উল্লেখিত হয়েছে। যাতে করে পাঠকগণ সুবিধেমত নিজের পছন্দের অনুবাদ বা তাফসীর এ তালিকা থেকে খুঁজে নিতে পারেন।

সন্দেহ নেই উপর্যুক্ত সকল তাফসীরকারক ও অনুবাদক নিজ নিজ মেধা, যোগ্যতা ও আন্তরিকতার জন্য ধন্যবাদার্হ। বিশেষত বিংশশতাব্দীর আগে যারাই এ কাজ করেছেন তাদেরকে নানা প্রতিকূলতা ও বাধা উজিয়ে এ কাজ করতে হয়েছে। তাঁরা নিজেদের শ্রম ও সময় কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে কাজে লাগিয়ে এ জাতির সেবা করেছেন। অনেকেই নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে অনুবাদ বা তাফসীর প্রকাশ করেছেন। আল্লাহ তাঁদের সকলকে উত্তম বিনিময় দান করুন।

আলহামদুলিল্লাহ পূর্ববর্তীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমানেও বাংলা ভাষায় কুরআনের তরজমা ও তাফসীরের কাজ অব্যাহত রয়েছে। তবে বর্তমানে যেমন ইচ্ছে করলেই যে কেউ তথ্যের প্রাচুর্য লাভ করতে পারেন, পূর্বে তেমন ছিল না। আগেকার দিনে কাঙ্ক্ষিত কিতাব বা উদ্ধৃতি গ্রন্থ সংগ্রহ করা চাট্টিখানি কথা ছিল না। তাঁরা অনেকেই খেয়ে না খেয়ে, নিজের উপার্জন ও জীবিকার প্রতি না তাকিয়ে প্রচণ্ড আবেগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ কাজ করেছেন। বর্তমানে আগ্রহী পাঠকের জন্য আরবী ও ইংরেজি ভাষায় পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আকর গ্রন্থ বিদ্যমান। বাংলায়ও তেমন এ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে মাকতাবা শামেলা ও ইন্টারনেট সেবার সৌজন্যে আরবীর সব রেফারেন্স বই ক্লিক করলেই সংগ্রহ করা সম্ভব। পাশাপাশি বাংলাতেও অনুবাদ ও তাফসীরের বিশাল এক ভাণ্ডার গড়ে উঠেছে।

পূর্বের কিছু কিছু তাফসীর বা অনুবাদে সঠিক তথ্য না পাবার কারণে কিংবা বিভ্রান্ত চেতনালালন হেতু কিছু ভুলচুক পাওয়া বিচিত্র নয়। তাই পাঠকের উচিত হবে সেসব তথ্যবিভ্রাট এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল-চুক সম্পর্কে সচেতন থাকা। বিজ্ঞ আলিমদের সাহায্য নিলে কাজটি সহজেই সম্পন্ন করতে পারবেন।

বাকি রইল পবিত্র কুরআনের বাংলা অনুবাদ ও তাফসীরের ভবিষ্যৎ সংকট ও সম্ভাবনা কথা। সে ব্যাপারে মোটা দাগে বলা যায়, ভবিষ্যতে আধুনিক মিডিয়া ও প্রচারমাধ্যম কাজে লাগিয়ে বিভ্রান্ত ফিরকা এবং ইসলামের চির শত্রুরা অনুবাদ ও তাফসীরের নামে কিছু ভেজাল ঢুকাবার চেষ্টা করে যাবে। এটাই স্বাভাবিক। যেমনটি তারা অতীতেও করেছে। কিন্তু কুরআনকে কিয়ামত পর্যন্ত অক্ষত ও অবিকৃত রাখার দায়িত্ব যেহেতু খোদ এর নাযিলকারী আল্লাহই নিয়েছেন তাই এ ব্যাপারে উদ্বেগের কিছু নেই। তবে তাদের খপ্পরে যেন কেউ না পড়েন সে চেষ্টা করে যেতে হবে হকপন্থী সকল মুসলিমকে। কারণ, যখন সঠিক তথ্য পাওয়া দুরূহ ছিল তখনই যেহেতু কুরআনের নির্মল আলোয় ভেজাল ঢুকানো যায় নি, সেখানে বর্তমান এই মুক্ততথ্যের হালজামানা, যখন এক ক্লিকেই হাদীসের সবলতা-দুর্বলতা এবং তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে সে যুগে এ কাজ আদৌ সহজ নয়।

তবে বাইরে থেকে অনুবাদ বা তাফসীরে বিভ্রান্তির অনুপ্রবেশ নিয়ে চিন্তিত হবার কারণ না থাকলেও উদ্বেগ বরং ঘরের শত্রু বিভীষণদের নিয়ে। ছদ্মরূপী মুসলিমদের নিয়ে। আরেকটি উদ্বেগের বিষয়, পূর্বে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে কুরআন কোনো সাধারণ গ্রন্থ নয় এবং খোদ আরবী ভাষার পণ্ডিত তদুপরি নাযিলের প্রেক্ষাপট প্রত্যক্ষকারী সাহাবীদেরও কুরআন বুঝতে রাসূলুল্লাহর সাহায্য নিতে হয়েছে, সেখানে যদু-মধুরা কেউ এর তাফসীর বা অনুবাদে হাত দিতে সমস্যা হওয়াই স্বাভাবিক। বাংলা কুরআনের অনুবাদ ও তাফসীর সামনে রেখে কুরআন তাফসীরে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন না করেই অনেকে জাগতিক স্বার্থে এ দুরূহ কাজে হাত দেবার এই ভয়ঙ্কর প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কুরআনের তাফসীর করতে চাইলে অবশ্যই তাকে মূল আরবী থেকে সরাসরি আরবী তাফসীর ও হাদীসগ্রন্থসমূহের সহযোগিতায় তা করতে হবে। অন্যথায় তিনি যত বড় বিদ্বানই হোন না কেন কুরআনে মর্মার্থ অনুধাবনের প্রয়োজনীয়তা এবং এর শিক্ষা প্রচারে কাজ করে যেতে পারেন। তবে কিছুতেই নিজে মুফাসসির তথা কুরআনের ব্যাখ্যাতা বা ভাষ্যকার হতে পারেন না। ইদানীং অনেককেই দেখা যাচ্ছে কুরআন শুদ্ধভাবে পড়তে জানেন না, আরবী উদ্ধৃতি গ্রন্থসমূহ রোমন্থন তো দূরের কথা, আরবী নেড়ে ইবারত তথা হরকতবিহীন বাক্যের মর্মোদ্ধার করতে পারেন না, অথচ তাকে মুফাসসির আখ্যা দেয়া হচ্ছে কিংবা তিনি নিজে ইচ্ছে মত তাফসীর রচনার দুর্গম পথে যাত্রা শুরু করেছেন। এ কারণেই একজন কুরআন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন লোক ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের অনুবাদকে ‘প্রথম সঠিক’ অনুবাদ বলার মতো বালখিল্য দেখাবার অবকাশ পান। এ ব্যাপারে আমাদের যেমন সতর্ক থাকতে হবে, তেমনি সজাগ করতে হবে অন্যদেরও। এ ক্ষেত্রে যারা আল্লাহর বাণী বুঝেন, যারা ইলমে ওহীর ধারক-বাহক তাঁদেরকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যারা কুরআন বুঝেন না কিংবা যারা আরবী তথা কুরআনী শিক্ষা অর্জন করতে পারেন নি, তাদেরকে পূর্বোক্ত শ্রেণীর সাহায্য নিয়েই কুরআন অনুধাবনের চেষ্টা করতে হবে।

আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে পবিত্র কুরআন বিশুদ্ধভাবে পড়া, সঠিকভাবে এর মর্ম উপলব্ধি করা এবং তদনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফীক দান করুন। আমীন।

– আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : ড. আব্দুল কাদের


. দৈনিক প্রথম আলো ১৬ মার্চ ২০১২ সংখ্যা।

. সামহোয়ারইন ব্লগে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে পোস্টকৃত জনৈক ব্লগারের সংগৃহীত লেখা থেকে।

. লেখক কর্তৃক উর্দূ থেকে কাব্যানুবাদকৃত।

. হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমদ, কোরআন শরীফ সহজ সরল বাংলা অনুবাদ, ভূমিকা অবলম্বনে।

. প্রাগুক্ত।

. আল-হুদা, ফেব্রয়ারি ২০১০ সংখ্যা।

. কোরআন শরীফ সহজ সরল বাংলা অনুবাদ, হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমদ, আল কোরআন একাডেমী লন্ডন, প্রথম প্রকাশ : মার্চ ২০০২, ইউকিপিডিয়া ও বিভিন্ন বাংলা ব্লগে প্রাপ্ত নানা নিবন্ধ।

. রূহুল মা‘আনী, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৬-৭। [সংক্ষেপিত]

. দেখুন, বুখারী : ৩১১০; মুসলিম : ১৭৮।

. বুখারী : ৪৯৩৯; মুসলিম : ৭৪০৮।

. দেখুন, বুখারী : ১৯১৬; মুসলিম : ২৫৮৫।

. ইবন খুযায়মা : ২২৫৮; হাকেম : ১৪৩৯। হাকেম বলেন, হাদীসটি মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ। ইমাম যাহবী তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। ইবন আবী শাইবা হাদীসটিকে জাবির রাদিআল্লাহু আনহু থেকে ‘মাওকূফ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (অবশ্য প্রথমে তিনি যঈফ বলেছিলেন)। দেখুন, আলবানী, সিলসিলা : ২২১৯ এবং তারাজু‘আত শায়খ আলবানী : ১৫।

. বুখারী : ১৪০৪।

. বাইহাকী, আস-সুনান আল-কুবরা : ৭০২২।

. বুখারী : ৪৬৪৭।

. হারুন আযিযী নদভী, হাদীস কি ও কেন ?

. ড. ইহসান আমীন, আত-তাফসীর বিল মা’ছুর ওয়া তাতবিরুহূ।

. আলহাজ্ব মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, বাংলা ভাষায় ইসলামী সাহিত্য গ্রন্থপঞ্জি ১৪০০-২০০০ খৃ. মদীনা পাবলিকেশান্স, প্রথম প্রকাশ, ২০০৩।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button