শিক্ষামূলক গল্প

নিঃসঙ্গ

নারীর জীবনে আজন্ম লালিত স্বপ্ন থাকে একটা সুন্দর সংসার, স্বামীর ভালবাসা, সন্তানের মা ডাক প্রভৃতির। একজন নারী সারা দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে স্বামীর সংসারকে আগলে ধরে রাখে স্বামীর এতটুকু ভালবাসার জন্য। সন্তান গর্ভ ধারণে, প্রতিপালনে সীমাহীন কষ্ট করে সন্তানের ‘মা’ ডাক শোনার জন্য। স্বামীর প্রেমের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নারী তার সকল কষ্ট ভুলে যায়, সন্তানের মা ডাকে তার সকল বেদনা দূর হয়ে যায়। এসব থেকে যে বঞ্চিত হয়, সে ভাবে তার জীবনটা অর্থহীন। এ বিষয়ে নিম্নের গল্পটি।

নওরীন জাহান উচ্চবিত্ত পরিবারের উচ্ছল তরুণী। সুন্দর চেহারা, সুঠাম দেহ, টানা দু’টি ভরাট চোখ, এক কথায় অপূর্ব চেহারা তার। বাবার বিশেষ স্নেহ-মমতায় আর দশটা মেয়ের চেয়ে একটু আলাদাভাবে বেড়ে উঠেছে সে। শিক্ষা-দীক্ষা, আচার-ব্যবহারে অমায়িক একটি মেয়ে সে। উচ্ছলতা থাকলেও উচ্ছৃংখলতা তার মাঝে নেই। মেধা ও বুদ্ধিমত্তায় সে অনন্য। কোন ছেলের মিষ্টি কথায় মুগ্ধ হয়ে সে কখনও কারো দিকে ঝুকে পড়েনি। নিজের সতীত্বের প্রতি সে ছিল সজাগ।

দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, এভাবে তার জীবনের ২৩টি বসন্ত পেরিয়ে যায়। একদিন বাবা মহা ধুমধামে নিজের সবচেয়ে আদরের মেয়েকে তুলে দেন একটি ছেলের হাতে। মেয়ের সুখের কথা ভেবে সংসারের প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনে দেন। যে সুখের জন্য বাবা এতকিছু করলেন মেয়ের কপালে সে সুখ জুটল না। হাতের মেহেদীর রং মিলিয়ে যাওয়ার পূর্বেই তার স্বামী মারা যায়। নওরীন চোখে অন্ধকার দেখে। কি করবে সে? মেয়ের এই খবরে পিতা স্ট্রোক করেন। দশ দিন মারাত্মক অসুস্থ থাকার পর অবশেষে পরপারে পাড়ি জমান। নওরীন দু’দিক দিয়েই অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। নারীর জন্য যে দু’টি নিরাপদ আশ্রয় থাকে পিতা ও স্বামী কোনটিই তার অবশিষ্ট রইল না। একসময় সে ফিরে আসে ভাইদের সংসারে। সন্তানহীনা নওরীন মা ডাক শোনার জন্য ও একাকীত্ব ঘুচানোর জন্য একটি কন্যা সন্তান দত্তক নেয়। এই সন্তানের পিছনেই তার সময় কেটে যায়। জীবনের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে সে ঐ সন্তানকে মানুষ করার জন্য চেষ্টা করছে। মেয়েটিও পড়ালেখায় ভাল। দিন যত যায়, নওরীনের চিন্তা তত বাড়ে। কারণ একদিন এই মেয়েও তাকে ছেড়ে চলে যাবে পরের বাড়ী। তখন সে আবার নিঃসঙ্গ একা হয়ে যাবে। ভাইদের সংসারের শত গঞ্জনা উপেক্ষা করেও সে কেবল মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তায় দাঁত কামড়ে পড়ে আছে। বিবাহের বহু প্রস্তাব সে প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন তার একটাই চিন্তা মেয়ের জীবনেও যেন তার মত পরিণতি না আসে।

দিন গড়িয়ে যায় নওরীনের মেয়ে আজ পরিণত বয়সে উপনীত। মেয়ের ভবিষ্যত চিন্তায় সে ব্যাকুল। সে ভাবে কেমন ছেলের ঘরে তার মেয়ে গিয়ে পড়বে? মেয়েটি তার সুখী হবে তো? এসব ভাবনার মধ্যে একদিন দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত মার্জিত স্বভাবের একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলের হাতে নওরীন মেয়েকে তুলে দেয়। মেয়ের জন্য যথাসাধ্য সাংসারিক জিনিসপত্র কিনে দেয়। অনেক ধনীর দুলালরা প্রস্তাব দিলেও দ্বীনদার না হওয়ায় সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে নাওরীন।

আজ দ্বীনদার ছেলের হাতে মেয়েকে  তুলে দিতে পেরে নওরীন আনন্দিত। সেভাবে মেয়ে আমার দ্বীনী পরিবেশে থাকবে, ছালাত-ছিয়াম পালন করবে, আমার মরার পর তারা আমার জন্য দো‘আ করবে এটাই আমার পরম পাওয়া।

এ সবের মাঝেও নওরীন আজ একা, নিঃসঙ্গ সে। ভাই-ভাবী আছে, তাদের ছেলে মেয়েরা আছে। তবুও সে আজ একা, বড় একা। একা এই পৃথিবীতে এসেছিল, আবার তাকে একাই ফিরে যেতে হবে। এজগৎ সংসারে তার যেন আপন কেউ নেই।

শামীমা ফেরদৌসী
মোল্লাহাট, বাগেরহাট।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

আরও দেখুন
Close
Back to top button