দাওয়াত ও জিহাদ

“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর প্রতি সাক্ষ্যদানের আহ্বান

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেনঃ

قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ

“আপনি বলে দিন! এটিই আমার পথ। পূর্ণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সাথে আমি আল্লাহর দিকে আহ্বান জানাই”। (সূরা ইউসুফঃ ১০৮)

ব্যাখ্যাঃ ইমাম আবু জাফর ইবনে জারীর তাবারী (রঃ) স্বীয় তাফসীরে বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবীকে বলছেনঃ হে মুহাম্মাদ! আপনি বলুনঃ আমি যেই দাওয়াত দিচ্ছি আর আমি যেই পথে আছি, তা হচ্ছে আল্লাহর তাওহীদের দিকে আহবান, অন্যান্য মাবুদ ও মূর্তিগুলোকে বর্জন করে একমাত্র আল্লাহর জন্যই এবাদতকে একনিষ্ঠ করা, শুধু তাঁরই আনুগত্য করা এবং তাঁর মা’সিয়াত (নাফরমানী) বর্জন করা। আমি আমার দাওয়াতে শুধু এক আল্লাহর এবাদতের দিকেই আহবান করছি, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আমার দাওয়াত সম্পর্কে খুব ভালভাবেই অবগত আছি এবং তার সত্যতা সম্পর্কেও আমি নিশ্চিত বিশ্বাসী। আমি এই পথে একা নই। যারা আমার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে এবং আমাকে সত্যায়ন করেছে, তারাও জেনে বুঝে একই দাওয়াত দিচ্ছে। আল্লাহ্ তাআলার রাজত্বে এবাদতে কোন শরীক হওয়া থেকে তিনি পবিত্র। আমি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত নই। অর্থাৎ আমি মুশরিকদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, আমি তাদের অন্তর্ভূক্ত নই, তারাও আমার দলের নই।

এই আয়াতটি ঐ কথার প্রমাণ বহন করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারীগণ জ্ঞানী হবেন এবং তারা আল্লাহর দিকে মানুষকে আহবান করবেন। যারা এ সমস্ত গুণাবলী হতে খালি হবেন, তারা প্রকৃত পক্ষে তাঁর অনুসারী হতে পারবে না। তিনি শুধু অনুসারী হওয়ার দাবীদার বলে গণ্য হবেন। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রঃ) বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

(قُلْ إِنَّمَا أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللّهَ وَلا أُشْرِكَ بِهِ إِلَيْهِ أَدْعُو وَإِلَيْهِ مَآبِ)

“বলুনঃ আমাকে এরূপ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, আমি আল্লাহ্র এবাদত করি এবং তার সাথে অংশীদার না করি। আমি তার দিকেই দাওয়াত দেই এবং তার কাছেই আমার প্রত্যাবর্তন”। (সূরা রা’দঃ ৩৬) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ আল্লাহ্ তাআলার আদেশসমূহ পালন করার দিকে মানুষকে আহবান করতেন, তাওহীদের দিকে দাওয়াত দিতেন, এককভাবে আল্লাহর এবাদত করার আহবান জানাতেন এবং শির্ক থেকে নিষেধ করতেন। দাওয়াতের পথে তিনি এবং তাঁর সাহাবীগণ আমরণ জিহাদ করেছেন। তাওহীদের দাওয়াত দেয়া আবশ্যক- এ বিষয়ে অনেক আয়াত রয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

(وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلاً مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحاً وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ)

“যে আল্লাহ্র দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার হতে পারে?” (সূরা ফুসসিলাতঃ ৩৩)

সাহাবী ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইয়ামানে পাঠালেন, তখন তিনি বললেনঃ

إنك تأتي قوماً من أهل الكتاب فليكن أول ما تدعوهم إليه شهادة أن لا إله إلا الله

হে মুআয! তুমি আহলে কিতাবদের একটি গোষ্ঠির দিকে তুমি যাচ্ছ। সর্বপ্রথম তুমি এই কথার দিকে মানুষকে এই কথার সাক্ষ্য দেয়ার দাওয়াত দিবে যে, আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। এখানে আহলে কিতাব বলতে ইয়ামানে বসবাসকারী সেই সময়ের ইহুদী ও নাসারা উদ্দেশ্য।

সেখানকার ইহুদী ও নাসারারা এই কালেমাটি উচ্চারণ করত। কিন্তু তারা এর অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল। আর তা হচ্ছে এককভাবে আল্লাহর এবাদত করা, তাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক না করা এবং আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের এবাদত বর্জন করা। সুতরাং তাদের লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ পাঠ করা তাদের কোন উপকার করবে না। কেননা তারা এই কালেমার অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল। পরবর্তী কালের অধিকাংশ লোকদের অবস্থা এরূপই। তারা নিজেদের জবানের মাধ্যমে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ পাঠ করে। সেই সাথে তারা শির্কও করে। মৃত, অনুপস্থিত, তাগুত এবং মাজারসমূহের এবাদত করছে। তারা এমন কাজ করত, যা কালেমা তায়্যেবা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ -এর বিরোধী। তাদের আকীদাহ, কথা ও কাজে তারা কালেমার বিপরীত বস্তু তথা শির্কে লিপ্ত হত এবং কালেমাটি যেই তাওহীদকে আবশ্যক করে, তারা তাকেই বর্জন করছে। তারা আশায়েরা সম্প্রদায়ের মুতাকাল্লিমীন তথা যুক্তিবিদদের অন্ধ অনুসরণ করে তারা ধারণা করত যে, কালেমার অর্থ হচ্ছে, সৃষ্টি করার উপর ক্ষমতাবান হওয়া। অথচ এটি হচ্ছে তাওহীদে রুবুবীয়ার অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তাআলাই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি সৃষ্টি করার উপর ক্ষমতাবান- এ কথা মক্কাবাসী মুশরিকরাও বিশ্বাস করত। কিন্তু তাদের এই বিশ্বাস তাদেরকে ইসলামে প্রবেশ করায় নি। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

قُلْ لِمَنِ الأرْضُ وَمَنْ فِيهَا إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (৮৪) سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ أَفَلا تَذَكَّرُونَ (৮৫) قُلْ مَنْ رَبُّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ (৮৬) سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ أَفَلا تَتَّقُونَ (৮৭) قُلْ مَنْ بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ يُجِيرُ وَلا يُجَارُ عَلَيْهِ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (৮৮) سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ فَأَنَّى تُسْحَرُونَ

“বলুনঃ পৃথিবী এবং পৃথিবীতে যারা আছে, তারা কার? যদি তোমরা জান, তবে বল। এখন তারা বলবে: সবই আল্লাহ্র। বলুনঃ তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না? এখন তারা বলবে: আল্লাহ্। বলুন: তবুও কি তোমরা ভয় করবে না? বলুনঃ তোমাদের জানা থাকলে বলঃ কার হাতে সব বস্তুর কর্তৃত্ব? বলুন: তোমাদের জানা থাকলে বল, কার হাতে সব বস্তুর কর্তৃত্ব, যিনি রক্ষা করেন এবং যার কবল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না? এখন তারা বলবেঃ আল্লাহ্র। বলুনঃ তাহলে কোথা থেকে তোমাদেরকে জাদু করা হচ্ছে?” (সূরা মুমিনূনঃ ৮৪-৮৯) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ

قُلْ مَنْ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أَمْ مَنْ يَمْلِكُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَمَنْ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ فَسَيَقُولُونَ اللَّهُ فَقُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ

হে নবী! আপনি জিজ্ঞেস করুন, তোমাদেরকে আসমান থেকে ও যমীন থেকে কে রুযী দান করেন? কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? তাছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন এবং কেইবা মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্ম স¤পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ! তখন তুমি বলো, তারপরেও ভয় করছ না? (সূরা ইউনুসঃ ৩১) কুরআন মজীদে এই আয়াতে এই রকম আয়াত আরও অনেক রয়েছে।

উপরের আয়াতগুলোতে যেই তাওহীদের বর্ণনা রয়েছে, পূর্ব যামানার মুশরিক লোকেরাও এমন কি যেই জাহেলী সমাজে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রেরিত হয়েছিলেন সেই সমাজের লোকেরাও এ বিষয়টির (তাওহীদে রুবুবীয়ার) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। এতে করে তারা মুসলমান হয়ে যায় নি। কেননা তারা কালেমায়ে তাইয়্যেবা যেই তাওহীদে উলুহীয়াতের দাবী জানায়, তা অস্বীকার করেছিল। তারা যে বিষয়টি অস্বীকার করেছিল, তা হচ্ছে ইখলাসের সাথে ও এককভাবে আল্লাহর এবাদত করা, শির্ক প্রত্যাখ্যান করা এবং শির্ক ও মুশরিকদের সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করা। আল্লাহ্ তাআলা সূরা আল-ইমরানের ৬৪ নং আয়াতে বলেনঃ

(قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْاْ إِلَى كَلَمَةٍ سَوَاء بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاَّ نَعْبُدَ إِلاَّ اللّهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئاً وَلاَ يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضاً أَرْبَاباً مِّن دُونِ اللّهِ فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُولُواْ اشْهَدُواْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ)

“বলুনঃ হে আহ্লে-কিতাবগণ। একটি বিষয়ের দিকে আস, যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান। তা এই যে, আমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারও এবাদত করব না, তার সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহ্কে ছাড়া কাউকে প্রতিপালক বানাব না। তারপরও যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে বলে দাও যে, সাক্ষী থাক আমরা তো অনুগত”।

এই আয়াতে যেই তাওহীদের কথা বলা হয়েছে, তা হল দ্বীনের মূলভিত্তি। আল্লাহ্ তাআলা সূরা ইউসুফের ৪০ নং আয়াতে বলেনঃ

(إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلّهِ أَمَرَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ)

“আল্লাহ্ ছাড়া কারও হুকুম (আদেশ) করার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও এবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না”। আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ

(فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ الْقَيِّمِ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ يَوْمٌ لَّا مَرَدَّ لَهُ مِنَ اللَّهِ)

“যে দিবস আল্লাহ্র পক্ষ থেকে প্রত্যাহত হবার নয়, সেই দিবসের পূর্বে আপনি সরল ধর্মে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুন”। (সূরা রোমঃ ৪৩) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ

(ذَلِكُم بِأَنَّهُ إِذَا دُعِيَ اللَّهُ وَحْدَهُ كَفَرْتُمْ وَإِن يُشْرَكْ بِهِ تُؤْمِنُوا فَالْحُكْمُ لِلَّهِ الْعَلِيِّ الْكَبِيرِ)

“তোমাদের এ বিপদ এ কারণে যে, যখন এক আল্লাহ্কে ডাকা হত, তখন তোমরা কাফের হয়ে যেতে, আর যখন তাঁর সাথে শরীককে ডাকা হত, তখন তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করতে। এখন আদেশ তাই, যা আল্লাহ্ করবেন, যিনি সর্বোচ্চ, মহান”। (সূরা গাফেরঃ ১২) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ

(فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصاً لَّهُ الدِّينَ أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ)

অতএব, আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ্র এবাদত করুন। জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত আল্লাহ্রই নিমিত্ত।

নবী-রাসূলগণ যেই তাওহীদের দিকে মানুষকে আহবান করেছেন এবং যেই তাওহীদসহ আসমানী কিতাবসমূহ নাযিল করা হয়েছে, কুরআন মজীদে সেই প্রকার তাওহীদের বিবরণে অনুরূপ আয়াত অনেক রয়েছে। এই কিতাবে আমরা এ রকম কিছু আয়াত উল্লেখ করব, ইনশা-আল্লাহ্।

রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুআয বিন জাবাল (রাঃ)কে ইয়ামানে পাঠানোর সময় বলেছিলেনঃ

্রادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ، فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ، فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً فِي أَمْوَالِهِمْ، تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْগ্ধ (بخارى: ১৩৯৫)

“তুমি তাদেরকে এই কথার সাক্ষ্য দেয়ার আহবান জানাবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। তারা যদি এ কথা মেনে নেয় তবে তুমি তাদেরকে বলবে যে, আল্লাহ তাদের উপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করেছেন। তারা যদি এ কথাও মেনে নেয় তবে তাদেরকে বল আল্লাহ তাদের সম্পদের যাকাত ফরজ করেছেন। ধনীদের কাছ থেকে আদায় করে দরীদ্রদের মাঝে তা বন্টন করা হবে।

ব্যাখ্যাঃ তুমি সর্বপ্রথম কালেমায়ে তাওহীদ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্-এর দিকে দাওয়াত দিবে। এতে প্রমাণিত হয় যে, বান্দার উপর সর্বপ্রথম ওয়াজিব হচ্ছে, তাওহীদুল ইবাদাহ্। অর্থাৎ এককভাবে আল্লাহর এবাদত করা। কেননা এটিই হচ্ছে দ্বীনের মূল এবং ইসলামের মৌলিক ভিত্তি।

মুতাকাল্লিমীন তথা যুক্তিবিদরা বলে থাকেন যে, বান্দার উপর সর্বপ্রথম ওয়াজিব হচ্ছে, যুক্তি প্রমাণের মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় লাভ করা। সঠিক কথা হচ্ছে, এটি ফিতরী তথা সৃষ্টিগত বিষয়। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে তাঁর পরিচয় ঢুকিয়ে দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। এ জন্যই রাসূলগণ তাদের জাতিসমূহকে সর্বপ্রথম তাওহীদুল ইবাদাহ্-এর দিকে তথা এককভাবে আল্লাহর এবাদত করার দিকে আহবান জানিয়েছেন। তারা তাদের জাতির লোকদেরকে বলতেনঃ

يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ

“হে আমার জাতি! আল্লাহ্র এবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন সত্য উপাস্য নাই”। (সূরা হুদঃ ৬১) এই সূরা হুদের ২৬ নং আয়াতে আরও উল্লেখ আছে,

(أَن لاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ اللّهَ)

“তোমরা এক আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও এবাদত করবে না”। (সূরা ২৬) আল্লাহ্ তাআলা সূরা আম্বীয়ার ২৫ নং আয়াতে বলেনঃ

(وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ)

“আপনার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে এ আদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং আমারই এবাদত কর”। আল্লাহ তাআলা সূরা ইবরাহীমের ১০ নং আয়াতে বলেনঃ

(قَالَتْ رُسُلُهُمْ أَفِي اللّهِ شَكٌّ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ)

“তাদের রাসূলগণ বলেছিলেনঃ আল্লাহ্ সম্পর্কে কি সন্দেহ আছে, যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের স্রষ্টা? ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় দু’টি কথা বলা যেতে পারে। (১) আল্লাহর অস্তিত্বে কোন সন্দেহ আছে কি? কেননা মানুষের ফিৎরাত তথা সৃষ্টিগত স্বভাব আল্লাহর অস্তিত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর অস্তিত্বের স্বীকারোক্তি প্রদানের বৈশিষ্ট দিয়েই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং সুস্থ বিবেক ও মস্তিস্ক অবশ্যই সৃষ্টি কর্তার অস্তিত্বকে মেনে নিবে। (২) আল্লাহর এবাদতের ক্ষেত্রে এবং তিনিই একমাত্র এবাদতের হকদার- এ বিষয়ে কোন সন্দেহ আছে কি? তিনি সকল সৃষ্টির একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। সুতরাং তিনি ব্যতীত অন্য কেউ এবাদতের হকদার নয়। তাঁর কোন শরীক নেই। অতীতের অধিকাংশ জাতি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু তাঁর সাথে সুপারিশকারীদের এবাদতও করে থাকে। তাদের ধারণা এ সমস্ত সুপারিশকারীগণ তাদের উপকার করবে এবং তাদেরকে আল্লাহর নিকট পৌঁছিয়ে দিবে। ব্যাখ্যাকার বলেনঃ আমি বলছি যে, দ্বিতীয় সম্ভাবনাটিও প্রথম সম্ভাবনাকে অন্তর্ভূক্ত করে।

ইমাম ইবনে জারীর তাবারী (রঃ) ইকরিমাহ, মুজাহিদ এবং আমের (রঃ) হতে এই আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেনঃ

وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلا وَهُمْ مُشْرِكُونَ

“অনেক মানুষ আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনয়ন করে, কিন্তু সাথে সাথে শির্কও করে”- প্রত্যেকেই জানে যে, আল্লাহ্ তাআলাই তাকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন। উক্ত আয়াতে ঈমানে বলতে এই ঈমানই তথা তাওহীদে রুবুবীয়াতের প্রতি ঈমান উদ্দেশ্য। ইকরিমাহ (রঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর যে, আসমান ও জমিন কে সৃষ্টি করেছে? উত্তরে তারা বলবেঃ আল্লাহ্! তাদের ঈমান এর মধ্যেই সীমিত। কিন্তু তারা আল্লাহর সাথে অন্যের এবাদতও করে। পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে যে, কুরআন ও হাদীছে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্-এর অনেক ভারী ভারী শর্ত জুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, ইল্ম, দৃঢ় বিশ্বাস, ইখলাস, সত্যবাদীতা, ভালবাসা, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্এর মর্মার্থকে কবুল করে নেওয়া, অনুগত হওয়া এবং আল্লাহ্ ছাড়া অন্যান্য যে সমস্ত বস্তুর উপাসনা করা হয়, তা অস্বীকার করা। যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ পাঠ করল, তার মধ্যে যদি উক্ত শর্তগুলো পাওয়া যায়, তাহলেই তার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ উপকারে আসবে। যার মধ্যে যদি উপরোক্ত শর্তগুলো পাওয়া না যাবে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ তার কোন উপকার করবে না। কালেমা তায়্যেবার অর্থ সম্পর্কে অবগত এবং এর দাবী অনুযায়ী আমলকারীগণের অবস্থা বিভিন্ন রকম। যারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ পাঠ করে, এটি তাদের কারও উপকার করবে। অপর পক্ষে এটি পাঠ করেও অনেকেই লাভবান হবে না। এ বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্ট।

তারা যদি আল্লাহর ওয়াহদানিয়্যাত বা একত্ববাদের স্বীকৃতি প্রদান করে তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দিও যে, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, মুশরিকের উপর নামায ফরজ নয়। তবে সে যখন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল প্রকার শির্ক বর্জন করে ইসলাম গ্রহণ করবে, তখন নামায ফরজ হবে। কেননা এবাদত বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত হচ্ছে প্রথমে ইসলাম কবুল করা। ইমাম নববী (রঃ) বলেনঃ দুনিয়াতে ফরজ এবাদতসমূহ পালন করার দাবী কেবল তখনই করা হবে, যখন সে ইসলাম গ্রহণ করবে। তবে এ কথা জরুরী নয় যে, মুশরিকরা শরীয়তের হুকুম-আহকাম পালনের ক্ষেত্রে সম্বোধিত নয়। আর নামায না পড়ার কারণে তাদেরকে আখেরাতে অতিরিক্ত আযাব দেয়া হবে। বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে কাফের-মুশরিকদেরকেও শরীয়তের সকল বিষয় পালন করার আদেশ দেয়া হয়েছে এবং নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা। অর্থাৎ তাদেরকেও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো হতে বিরত থাকার আদেশ দেয়া হয়েছে। এটিই অধিকাংশ আলেমদের কথা।

তারা যদি তোমার কথা মেনে নেয় (নামায কায়েম করে) তবে তাদেরকে জানিয়ে দিও যে, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর যাকাত ফরজ করে দিয়েছেন, যা বিত্তশালীদের কাছ থেকে নিয়ে গরীবদেরকে দেয়া হবে। এতে প্রমাণ মিলে যে, তাওহীদে বিশ্বাস না করলে এবং সকল শর্ত, আরকান এবং ওয়াজিব বিষয়গুলোসহ নামায আদায় করাতে ও যাকাত আদায় করাতে কোন লাভ হবে না। কুরআনে যাকাতকে নামাযের সাথে মিলিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

(وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ)

“তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্র এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক দ্বীন”। (সূরা বায়্যিনাহঃ ৫)

যে ব্যক্তি এই কাজগুলো সম্পাদন করবে, সে অন্যান্য কাজগুলোও বাস্তবয়ান করবে। কেননা তাওহীদ, নামায এবং যাকাত- এই তিনটি বুনিয়াদী আমলের দাবী হচ্ছে, যে ব্যক্তি এই তিনটি আমল করবে, সে অন্যান্য আমলগুলোও করবে। আল্লাহ্ তাআলা সূরা তাওবার ৫ নং আয়াতে বলেনঃ

(فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ الصَّلاَةَ وَآتَوُاْ الزَّكَاةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمْ)

“কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও”। আনাস (রাঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ তাদের তাওবা হচ্ছে মূর্তিপূজা বর্জন করা, আল্লাহ্ তাআলার এবাদত করা, নামায কায়েম করা এবং যাকাত প্রদান করা। আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে মারফু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তোমাদেরকে নামায কায়েম করার এবং যাকাত প্রদান করার আদেশ দেয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি যাকাত প্রদান করবে না, তার নামায (কবুল) হবেনা। ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা যাকাত বিহীন নামায কবুল করেন না। আর উপরোক্ত হাদীছে যাকাত ব্যয়ের খাতও বর্ণিত হয়েছে।

তারা যদি এ ব্যাপারে তোমার আনুগত্য করে তবে তাদের উৎকৃষ্ট মালের ব্যাপারে তুমি খুব সাবধানে থাকবে। এখানে সাবধান করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তাআলা যাকাতের মধ্যে যে সমস্ত বিধান শরীয়তভূক্ত করেছেন, তার সীমা অতিক্রম করা ঠিক নয়। যাকাতে মধ্যম মানের মাল গ্রহণ করা হবে। এ রকম করা হলে মালদার সৎ নিয়তে এবং সন্তুষ্ট চিত্তে যাকাত প্রদান করবে। আর যেই কাজে শরীয়তের নির্ধারিত সীমা লংঘন করা হয়, তাতে কোন কল্যাণ নেই। এটি এমন একটি মৌলিক বিষয়, যার প্রতি সর্বদা খেয়াল রাখা দরকার।

আর মজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করে চলবে। কেননা মজলুমের ফরিয়াদ এবং আল্লাহ তাআলার মাঝখানে কোন পর্দা নেই। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যাকাত উসুলকারী যদি যাকাত সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্ধারিত সীমা লংঘন করে, তাহলে সে জালেম হিসাবে গণ্য হবে। আর মাজলুমের দুআ কবুল হয়ে থাকে। আল্লাহর মাঝে এবং মাজলুমের দুআর মাঝে এমন কোন পর্দা নেই, যা তার দুআ কবুলের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। এতে সকল প্রকার জুলুম থেকে সাবধান করা হয়েছে। যাকাত উসুলকারীর উচিৎ, সে তার কাজে ইনসাফ করার চেষ্টা করবে। কার কাছ থেকে নির্ধারিত হকের চেয়ে অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করবে না। এমনি অন্যায়ভাবে কারও প্রতি দয়া পরবশ হয়ে যাকাতের কোন কিছুই ছেড়ে দিবেনা। সুতরাং তার উচিৎ উভয় পক্ষের প্রতি ন্যায় বিচার করা। আল্লাহই ভাল জানেন।

বুখারী ও মুসলিমমে সাহাল বিন সাআদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বারের যুদ্ধের দিন বললেনঃ

لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَدًا لِرَجُلٍ يحب الله ورسوله ويحبه الله ورسوله يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَى يَدِهِ فَبَاتَ النَّاسُ يَدُوكُونَ ليلتهم أَيُّهُمْ يُعْطَاهَا فَلَمَّا أَصْبَحَوا غَدَوْا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كُلُّهُمْ يَرْجُو أَنْ يُعْطَاهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَيْنَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ؟ فقِيْل هُوَ يَشْتَكِي عَيْنَيْهِ ، فَأَرسلوا إليه فَأتي به فَبَصَقَ فِي عَيْنَيْهِ وَدَعَا لَهُ فَبَرَأَ كأن لم يكن به وجع فَأَعْطَاهُ الرَّايَةَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم انفذ عَلَى رِسْلِكَ حتى تنزل بِسَاحَتِهِمْ ثم ادْعُهُمْ إِلَى الإِسْلامِ وَأَخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ مِنَ حَقِّ الله تعالى فيه فَوَاللَّهِ لأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِك رَجُلا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمُرِ النَّعَمِ

“আগামীকাল এমন ব্যক্তির কাছে আমি ঝান্ডা প্রদান করবো যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাকে ভালবাসে। তার হাতে আল্লাহ তাআলা বিজয় দান করবেন। কাকে ঝান্ডা প্রদান করা হবে এ উৎকণ্ঠা ও ব্যাকুলতার মধ্যে লোকজন রাত্রি যাপন করলো। যখন সকাল হয়ে গেল, তখন লোকজন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট গেল। তাদের প্রত্যেকেই আশা পোষণ করছিল যে, ঝান্ডা তাকেই দেয়া হবে, তখন তিনি বললেন, আলী বিন আবি তালিব কোথায়? বলা হলো, তিনি চক্ষুর পীড়ায় ভোগছেন। তাঁকে ডেকে পাঠানো হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উভয় চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দুআ করলেন। এতে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন যে, মনে হচ্ছিল, তাঁর চোখে কোন অসুখই ছিল না। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাতে ঝান্ডা প্রদান করলেন এবং বললেনঃ তুমি মুজাহিদদেরকে নিয়ে ধীরস্থিরতার সাথে অগ্রসর হও। তুমি যখন তাদের আঙ্গিনায় অবতরণ করবে, তখন তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করবে। অতঃপর তাদের উপর আল্লাহর যে হক রয়েছে, সে সম্পর্কে তাদেরকে জানিয়ে দাও। হে আলী! আল্লাহর শপথ! তোমার হাতে যদি একজন লোকও হেদায়াত পায় (মুসলমান হয়) তাহলে তোমার জন্য এটি হবে লাল উট (দুনিয়ার সর্বশেষ্ঠ সম্পদ) পাওয়া থেকেও উত্তম।

্র لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلٌ يُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ

“আগামীকাল এমন ব্যক্তির কাছে আমি ঝান্ডা প্রদান করবো যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাকে ভালবাসে।

ব্যাখ্যাঃ এই হাদীছে খায়বার বিজয়ের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে এখানে নবুওয়াতে মুহাম্মাদীরও আলামত রয়েছে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই খবর দিয়েছিলেন, তার হুবহু বাস্তবায়ন হয়েছে।

সে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালবাসেন। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) এই অংশের ব্যাখ্যায় বলেনঃ এই গুণটি শুধু আলী (রাঃ)এর সাথে খাস নয়। মুসলিমদের ইমামদের সাথেও খাস নয়। কেননা যেই মুত্তাকী মুমিন আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলকে ভালবাসে, আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালবাসেন। এই হাদীছটি ঐ নাওয়াসেবদের (আলী (রাঃ)এর প্রতি ঘৃণা পোষণকারী সম্প্রদায়) বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী দলীল, যারা তাঁকে ভালবাসেনা, কিংবা তাঁকে কাফের মনে করে অথবা তাঁকে ফাসেক বলে। খারেজী সম্প্রদায়ের লোকেরা আলী (রাঃ)কে ফাসেক মনে করে। যে সমস্ত রাফেযী (শিয়াদের একটি সম্প্রদায়) সাহাবীদের ফজীলতে বর্ণিত হাদীছগুলোকে তাদের মুরতাদ হয়ে যাওয়ার পূর্বের বলে মনে করে, তাদের কথা অনুপাতে এভাবে দলীল গ্রহণ করা সঠিক নয়। খারেজীরাও আলী (রাঃ)এর ব্যাপারে একই কথা বলে। অর্থাৎ তারা আলী (রাঃ)কে কাফের মনে করে। এ রকম কথা বাতিল। যার সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা অবগত আছেন যে, সে কাফের অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে, আল্লাহ্ তাআলা এবং আল্লাহর রাসূল কখনই তার এ রকম প্রশংসা করবেন না।

এই হাদীছ থেকে জানা গেল যে, মুহাব্বাত তথা ভালবাসা আল্লাহ্ তাআলার একটি গুণ। জাহ্মীয়া এবং তাদের অনুসারীরা এটিকে বিশ্বাস করেনা। এতে আলী (রাঃ)এর ফজীলত প্রমাণিত হয়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাসভাবে তাঁকেই যুদ্ধের ঝান্ডা প্রদান করেছেন এবং খায়বারবাসীকে ইসলামের দাওয়াত দিতে আদেশ করেছেন। দাওয়াত কবুল না করলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বলেছেন। যুদ্ধ অবস্থায় আলী (রাঃ)এর হাতে অনেকগুলো কারামত প্রকাশিত হয়েছে। সীরাতের কিতাবসমূহে এই কারামতগুলো উল্লেখিত হয়েছে।

এই হাদীছে ইসলামের প্রতি মানুষকে আহবান করার গুরুত্ব বুঝা যাচ্ছে। যেই ইসলামের বুনিয়াদ (মূলভিত্তি) হচ্ছে এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ্ তাআলা সূরা আল-ইমরানের ১০৪ নং আয়াতে বলেনঃ

وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ)

“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হল সফলকাম”।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আলী বিন আবি তালিব কোথায়? বলা হল, তিনি চক্ষুর পীড়ায় ভোগছেন। লেখক বলেনঃ এতে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়নের বিষয়টি জানা গেল। কেননা যারা ঝান্ডা পাওয়ার চেষ্টা করল, তারা তা পেল না। আর যিনি কোন চেষ্টাই করেন নি, তিনি পেয়ে গেলেন।

তাঁকে ডেকে পাঠালেন। অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী (রাঃ)এর নিকট একজন লোক পাঠালেন। যাতে তিনি তাঁকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট ডেকে নিয়ে আসেন। মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় রয়েছে, সা’দ বিন আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) তাঁকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ডেকে নিয়ে এসেছিলেন। ইয়াস বিন সালামাহ তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, সালামাহ (রাঃ) তাকে নিয়ে এসেছিলেন। আলী (রাঃ) যখন আসলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উভয় চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য সুস্থতার দুআ করলেন। এতে তিনি তাৎক্ষণিক পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুআর বরকতেই এমনটি হয়েছিল। অন্য হাদীছে এসেছে, তিনি দুআ করলেন। তাঁর দুআ কবুল করা হল। এতেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণিত হয়। এ সব কিছু কেবল আল্লাহর পক্ষ হতেই এবং একমাত্র আল্লাহর কুদরতেই হয়েছিল। তিনিই কল্যাণ-অকল্যাণ এবং দেয়া-না দেয়ার একমাত্র মালিক। তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য মাবুদ নেই এবং তিনিই একমাত্র রব (প্রভু)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলীকে ধীরস্থরতার সাথে খায়বারবাসীর দিকে যেতে বললেন এবং শত্র“দের দূর্ঘের নিকটবর্তী আঙ্গিনায় অবতরণ করার আদেশ দিয়েছিলেন।

তখন তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করবে- এই অধ্যায়ের উদ্দেশ্য এটিই। মুসলিমদের উচিৎ, শুধু মানুষকে ইসলামের দিকে হেদায়াত করার উদ্দেশ্যেই এবং তাতে দাখিল করার জন্যই তারা জিহাদ পরিচালনা করবে। মুসলিম শাসকদের এটিই একমাত্র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ যেই দ্বীন ইসলামকে আল্লাহ্ তাআলা পছন্দ করেছেন এবং যা দিয়ে তিনি রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন, তা হচ্ছে শুধু আল্লাহর নিকটই আত্মসমর্পন করা। ইসলামের মূলনীতিগুলোর প্রতি অন্তর দিয়ে বিশ্বাস পোষণ করতে হবে। আল্লাহর সামনে মস্তক অবনত করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যান্য মাবুদসমূহ বর্জন করে একমাত্র আল্লাহর এবাদত করতে হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর এবাদত করবে এবং সেই সাথে অন্যান্য ছোট মাবুদগুলোরও এবাদত করবে, সে মুসলিম হিসাবে গণ্য হবে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর এবাদত করতে অহংকার করবে, সেও মুসলিম নয়। ঈমানের হাকীকত হচ্ছে, অন্তর দিয়ে সত্যায়ন করা এবং জবান দিয়ে তা স্বীকার ও উচ্চারণ করা।

অতঃপর তাদের উপর আল্লাহর যে হক রয়েছে, সে সম্পর্কে তাদেরকে জানিয়ে দাও- অর্থাৎ কালেমায়ে তায়্যেবা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্-এর যে সমস্ত হক আল্লাহ্ তাআলা শরীয়তের অন্তর্ভূক্ত ও নির্ধারণ করেছেন এবং যে সমস্ত বিষয়ের হুকুম করেছেন, তা তাদেরকে জানিয়ে দাও। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, বান্দার আমলসমূহও ঈমানের অন্তর্ভূক্ত। তবে আশায়েরা ও মুরজিয়া সম্প্রদায় এর বিরোধীতা করেছে। তাদের কথা হল ঈমান শুধু (অন্তরের) কথার নাম। তাদের ধারণা হল, শুধু তাসদীক তথা বিশ্বাস ও সত্যায়নকেই ঈমান বলা হয়। এ ক্ষেত্রে তারা কুরআন ও সুন্নায় বর্ণিত দলীলসমূহের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেনি। কেননা দ্বীন হচ্ছে ঐ সমস্ত কর্মের নাম, যা করার জন্য আল্লাহ্ তাআলা আদেশ দিয়েছেন এবং ঐ সমস্ত কাজ না করার নাম, যা থেকে আল্লাহ্ তাআলা নিষেধ করেছেন।

এই হাদীছে ঐ সমস্ত মুশরিকদের (নামধারী মুসলিমদের) প্রতিবাদ করা হয়েছে, যারা কারামতে আওলীয়াসমূহকে উল্লেখ করে শির্ক-বিআত জায়েয হওয়ার উপর দলীল গ্রহণ করে থাকে। কেননা কারামত অলীদের অতিরিক্ত ফজীলতের প্রমাণ বহন করে। আমীরুল মুমিনীন আলী (রাঃ)এর এমন অনেক ফজীলত বর্ণিত হয়েছে, যা অন্যদের জন্য হয়নি। সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করা, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাসহ তাঁর আরও অনেক ফজীলত রয়েছে, যা অন্যদের ছিল না। যারা তাঁকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছিল (তাঁকেই ইলাহ্ মনে করেছিল), গর্ত খনন করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে তিনি তাদেরকে তথায় নিক্ষেপ করে হত্যা করেছিলেন। আহলে বাইত এবং অন্যদের ব্যাপারে যারা মুশরিকদের ন্যায় আকীদাহ পোষণ করেছিল, তিনি তাদের সাথে একই আচরণ করেছিলেন। এর মাধ্যমে আলী (রাঃ) অন্যান্য সাহাবীদের তুলনায় শির্ক ও মুশরিকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। এমনকি তিনি তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।

এমনিভাবে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)এর অসংখ্য কারামত থাকা সত্ত্বেও শির্ক ও শির্কের পথ বন্ধ করায় অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। সাহাবীদের মধ্যে যে সমস্ত ব্যক্তি কারামত প্রাপ্ত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে এই দুইজন তথা আলী ও উমার (রাঃ) ছিলেন সর্বোত্তম। তাদের হাতে প্রকাশিত কারামত তাদেরকে তাওহীদের উপর অতিরিক্ত শক্তি প্রদান করেছে এবং শির্ক ও মুশরিকদের প্রতিবাদে কঠোর থেকে কঠোরতর করেছে। আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করার মাধ্যমে এবং হুরমুযানের বাইতুল মালে সাহাবায়ে কেরামগণ যখন দানিয়ালের কবরের সন্ধান পেলেন, তখন তা গোপন করে দেয়ার মধ্যে শির্কের বিরুদ্ধে উমার (রাঃ)এর কঠোর ভূমিকার প্রমাণ পাওয়া যায়। নবী-রাসূলদের হাতে মু’জিযা প্রকাশ তাওহীদের প্রতি দাওয়াতের ক্ষেত্রে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছিল এবং মুশরিকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও জিহাদে তাদেরকে কঠোর করেছিল। যাদের উপর শয়তান ও শয়তানি শক্তি জয়লাভ করেছে, তাদের কারও কাছ থেকে কিছু কিছু শয়তানী কার্যকলাপ প্রকাশিত হয়ে থাকে। ফলে তারা তাদের প্রভুর সরণকে ভুলে যায়। যে সমস্ত জাহেল লোক শির্কে লিপ্ত তারা এই শয়তানী ভেলকি বাজিকে কারামত মনে করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে সেগুলো শয়তানের চক্রান্ত ও চালবাজি ছাড়া অন্য কিছু নয়। এর মাধ্যমে অনেক সময় হক ও বাতিল এবং হেদায়াত ও গোমরাহীর মাঝে পার্থক্য করা যায় না। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবীকে লক্ষ্য বলেনঃ

(فَاسْتَمْسِكْ بِالَّذِي أُوحِيَ إِلَيْكَ إِنَّكَ عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ)

“অতএব, আপনার প্রতি যে অহী নাযিল করা হয়, তা দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করুন। নিঃসন্দেহে আপনি সরল পথে রয়েছেন”। (সূরা যুখরুফঃ ৪৩) সুতরাং প্রত্যেকের উচিৎ কুরআন মজীদে চিন্তা-গবেষণা করা এবং তা থেকেই হেদায়াত অনুসন্ধান করা। কেননা কুরআনের পথই হচ্ছে সরল ও সঠিক পথ। শয়তানের চাকচিক্যময় পথে দৃষ্টি না দেয়া। শয়তানের সাজানো পথে অগ্রসর হয়ে এই উম্মাতের এবং পূর্ববর্তী উম্মাতের অনেকেই ধোঁকায় পড়েছে।

তোমার হাতে যদি একজন লোকও হেদায়াত পায় (মুসলমান হয়) তাহলে তোমার জন্য এটি হবে লাল উট পাওয়া থেকেও উত্তম। তৎকালে লাল উট ছিল আরবদের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। এখানে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এবং যার ভাগ্যে আল্লাহ্ তাআলা হেদায়াত রেখেছেন, তার জন্য হেদায়াত প্রার্থনা করা হয়েছে। যাতে করে ইসলামের দাঈগণ হেদায়াত প্রার্থীকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে এই বিরাট ফজীলতটি অর্জন করতে পারে। সুতরাং এ বিষয়ে মোটেই অলসতা করা ঠিক নয়। আল্লাহই তাওফীক দাতা। এ অধ্যায় থেকে নিম্বোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণকারীর নীতি ও পথ হচ্ছে আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করা।

২) ইখলাসের ব্যাপারে শতর্কতা অবলম্বন করা। কেননা অনেক লোক হকের পথে মানুষকে আহ্বান জানালেও মূলতঃ তারা নিজের নফস বা স্বার্থের দিকেই আহ্বান জানায়।

৩) তাওহীদের দাওয়াতের জন্য জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থাকা অপরিহার্য্য।

৪) উত্তম তাওহীদের প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার প্রতি গাল-মন্দ আরোপ করা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র থাকা।

৫) আল্লাহ তাআলার প্রতি গাল-মন্দ আরোপ করা নিকৃষ্ট শির্কের অন্তর্ভূক্ত।

৭) তাওহীদই হচ্ছে সর্ব প্রথম ওয়াজিব।

৮) সর্বাগ্রে এমন কি নামাযেরও পূর্বে তাওহীদের প্রতি আহবান করতে হবে।

৯) আল্লাহর ওয়াহদানিয়াতের অর্থ হচ্ছে, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর সাক্ষ্য প্রদান করা। অর্থাৎ “আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন ইলাহ নেই” এ ঘোষণা দেয়া।

১০) একজন মানুষ আহলে কিতাবের অন্তর্ভূক্ত হওয়া সত্ত্বেও সে তাওহীদ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতে পারে কিংবা তাওহীদের জ্ঞান থাকলেও তা দ্বারা আমল নাও করতে পারে।

১১) শিক্ষা দানের প্রতি পর্যায়ক্রমে গুরুত্বারোপ।

১২) সর্ব প্রথম অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দিয়ে শুরু করা জরুরী।

১৩) যাকাত প্রদানের খাত সম্পর্কে জানা গেল।

১৪) শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রের সংশয় ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব উন্মোচন করা বা নিরসন করা।

১৫) যাকাত আদায়ের সময় বেছে বেছে উৎকৃষ্ট মাল নেয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা।

১৬) মজলুমের বদ দোয়া থেকে বেঁচে থাকা।

১৭) মজলুমের ফরিয়াদ এবং আল্লাহ তাআলার মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকার সংবাদ।

১৮) সাইয়্যিদুল মুরসালীন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং বড় বড় অলীর উপর যে সব দুঃখ- কষ্ট এবং কঠিন বিপদাপদ আপতিত হয়েছে, তা তাওহীদেরই প্রমাণ পেশ করে।

১৯) “আমি আগামীকাল এমন একজনের হাতে পতাকা প্রদান করবো যার হাতে আল্লাহ বিজয় দান করবেন।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ উক্তি নবুয়তেরই একটি নিদর্শন।

২০) আলী (রাঃ) এর চোখে থুথু প্রদানে চোখ আরোগ্য হয়ে যাওয়াও নবুয়্যতের একটি নিদর্শন।

২১) আলী (রাঃ) এর মর্যাদা সম্পর্কে জানা গেল।

২২) আলী (রাঃ) এর হাতে পতাকা তুলে দেয়ার পূর্বে রাতে পতাকা পাওয়ার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের উদ্বেগ ও ব্যাকুলতার মধ্যে রাত্রি যাপন এবং বিজয়ের সুসংবাদে আশ্বস্ত থাকার মধ্যে তাদের মর্যাদা নিহিত আছে।

২৩) বিনা প্রচেষ্টায় ইসলামের পতাকা তথা নেতৃত্ব লাভ করা আর চেষ্টা করেও তা লাভে ব্যর্থ হওয়া, উভয় অবস্থায়ই তাকদীরের প্রতি ঈমান রাখা।

২৪) “ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে যাও” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ উক্তির মধ্যে ভদ্রতা ও শিষ্ঠাচার শিক্ষা দানের ইঙ্গিত রয়েছে।

২৫) যুদ্ধ শুরু করার পূর্বে ইসলামের দাওয়াত পেশ করা জরুরী।

২৬) ইতিপূর্বে যাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হয়েছে এবং যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়েছে তাদেরকেও যুদ্ধের আগে ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে।

২৭) أخبرهم بمايجب عليهم রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বাণী হিকমত ও কৌশলের সাথে দাওয়াত পেশ করার ইঙ্গিত বহন করে।

২৮) দীন ইসলামে আল্লাহর হক সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।

২৯) আলী (রাঃ) এর হাতে একজন মানুষ হেদায়াত প্রাপ্ত হওয়ার সওয়াব।

৩০) ফতোয়ার ব্যাপারে মুফতীর কসম করা জায়েয।

– আব্দুল্লাহ শাহেদ

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button