ইহকাল-পরকাল

আপনি কি সত্যই জান্নাত চান?

“আমি জান্নাতে যেতে চাই” এটাই আমাদের জীবনের লক্ষ হওয়া উচিৎ। ভুলে যাবার সম্ভাবনা থাকলে এটা আমাদের চোখের সামনে বড় বড় অক্ষরে লিখে রাখা দরকার যেন তা সবসময় মনে পড়ে যায়, এটা এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য জান্নাতের যে ছোট্ট একটি চাবি রেখে গেছেন, তা যেন আজ আমরা মুসলিমরা ভুলতেই বসেছি। গাড়ির বা ঘরের বা অফিসের দরজা খুলতে যেমন একটি চাবির দরকার হয়, তেমনি জান্নাতের দরজা খুলতে হলেও আপনার একটি চাবি লাগবে। কি সেই চাবি?

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য বের হবে, আল্লাহ তার জন্যে বেহেশতের রাস্তা সহজ করে দেবেন।” {সহীহ মুসলিম, ৩য় খন্ড, হাদীস নং ৯৯}

জ্ঞান অর্জনে বের হওয়া বলতে বোঝায় হেটে বা গাড়িতে করে- দুটোই। যেমন কোনো আলাপ-আলোচনায় যোগ দিতে গাড়িতে করে যাওয়া বা এলাকার মসজিদে কোনো ওয়াজ বা বিজ্ঞজনের বক্তব্য শুনতে হেটে যাওয়া। অর্জনের এ পন্থায় এ ব্যাপারটিও সম্পৃক্ত যে আপনি কোরআন এবং হাদীসকে মুখস্ত করবেন। এ মুখস্ত কিন্তু কেবল টিয়া পাখির মতো মুখস্ত করা নয়, বরং তা বুঝবেন আর নিজ জীবনে তাকে আমলে রাখবেন।

যারা জ্ঞান অর্জন করতে চায়, আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য তা শিক্ষা সহজ করে দেবেন, তার সে পথকে খুলে দেবেন, আর জান্নাতের পথে তার যাওয়াকে মসৃণ করে দেবেন। এ কারণেই আমাদের পূর্ববর্তী ধর্মভীরু পথপ্রদর্শকরা কেউ কেউ বলতেন, “আছে কেউ জ্ঞান-সন্ধানী, যেন আমরা তাকে তা পেতে সহযোগিতা করতে পারি?”

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আপনারা সেরকম জ্ঞানানুরাগী হয়ে যান, জ্ঞান-সন্ধানী হয়ে যান। “কোথায় আজ আমার কোরআন, কোথায় আমার সহীহ বোখারী!” চলুন আজ থেকে আমরা প্রতিটি সকালে একটা উদ্দেশ্য নিয়ে জেগে উঠি- আর তা হলো আমরা জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে জান্নাতকে খুঁজবো।

আল্লাহ তায়ালাকে পাবার জন্য জ্ঞান একটি অতি সহজ পথ। যে জ্ঞান আরোহনের জন্য বের হয়, সে আল্লাহ তায়ালার কাছে ও জান্নাতে পৌঁছে যায় সবচেয়ে সহজ পথে। জ্ঞান আমাদেরকে অন্ধকার থেকে, অজ্ঞতা থেকে, দ্বিধা ও পলায়নী প্রবৃত্তি থেকেও বের করে আনে। এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা তার কোরআনকে বলেছেন, “আলো”।

জ্ঞান হচ্ছে সেই রাস্তা যা জান্নাত অভিমুখে গেছে আর ইসলাম হলো সেই বাহন যা অভীষ্ট জান্নাতে পৌঁছে দেয়। যেভাবে আপনি একটি গাড়িতে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে যান ঠিক তেমন করে, কিন্তু কিভাবে? তা হচ্ছে সেখানে যাবার নির্দেশনা খুঁজে বের করে, তা মানচিত্র দেখেই হোক অথবা কাউকে জিজ্ঞেস করেই হোক। একইভাবে, কোরআন ও হাদীস হলো আমাদের মানচিত্র, আর আমাদের জ্ঞানী ব্যক্তিগণ, বিজ্ঞ আলেমগণ হচ্ছেন সেইসব মানুষ যারা সে মানচিত্র থেকে আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য, জান্নাতে পৌঁছাবার পথ দেখান।

নিজেকে প্রশ্ন করুন, “জান্নাত কি আসলে সহজ?”

এবার আবার ভেবে দেখুন, কখনো কি এমন কোনো ভাই বা বোনকে দেখেননি যারা কতো সহজেই কোরআন-কে মুখস্থ করে হৃদয়ে ধারণ করে? কখনো কি আমাদের মধ্য হতে এমন কাউকে দেখেননি যারা ঘন্টার পর ঘন্টা কোরআন-হাদীস অধ্যয়ন করে, যেখানে অন্যরা সারা বছরে কিংবা মাসে কোরআন-হাদীসের একটি পাতাও ওল্টাতে পারে না? কেন এমন হয়?

মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন-
“অতএব যে (আল্লাহর পথে) দান করেছে এবং আল্লাহকে ভয় করেছে,”
“ভালো কথাগুলো যে সত্য বলে মেনে নিয়েছে,”
“অবশ্যই আমি তার (জান্নাতের) পথ চলা সহজ করে দেবো;”
“কিন্তু যে ব্যক্তি কার্পণ্য করেছে এবং বেপরোয়া ভাব দেখিয়েছে,”
“এবং যে ভালো কথা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে,”
“আমি তার (চিরস্থায়ী) দুঃখ কষ্টের জন্যে (এ পথে) চলা সহজ করে দেবো,” {সূরা আল লায়ল, আয়াত ৫-১০}

উপরের আয়াতগুলোতে যা বলা হয়েছে, তা আমাদের বর্তমান সমাজে খুবই দৃশ্যমান, তবুও আমরা এ থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করছি না। উদাহরণস্বরূপ, কারো কারো জন্যে নফল রোজা রাখা কতোই না সহজ অথচ আবার কারো জন্যে রমজানের রোজা রাখাই অনেক কঠিন। কারো কারো জন্যে যখন মাঝরাতে তাহাজ্জুদের সালাতের মাধ্যমে তার মালিকের সাথে একান্ত মোলাকাতে মিলিত হতে কোনোই সমস্যা বোধ হয় না, সেখানে অন্যদের মধ্যে অনেকের ফরজ সালাত আদায় করাই কঠিন হয়ে যায়।

কেউ কেউ চিরদিন অবিবাহিত থেকেও কতো সহজে নিজের পবিত্রতা এবং অবৈধ যৌন আচরণ থেকে নিজেকে রক্ষা করে, অপরদিকে বিয়ে করেও কেউ কেউ ব্যভিচারে জড়ায়। কেউ কতো সহজেই কোরআন ও হাদীস মুখস্ত করে, অন্যদিকে অন্যেরা মুখস্ত করে সদ্য বাজারে আসা আধুনিক গান।

আমাদের কারো কারো জন্যে ইসলাম পালন করা যতো সহজ, অন্যদের কারো জন্যে তা ততোটাই কঠিন। এসবের কারণসমূহের উত্তর উপরের আয়াতেই দেয়া আছে। এগুলো তাদের জন্যে সহজ কারণ তারা জ্ঞান অর্জন করে ও তার ওপর সে অনুযায়ী আমল করে, আর এইভাবে আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্যে জান্নাতের পথে যাত্রাকে সহজ করে দেন।

আমাদের প্রিয় নবী (স.) প্রত্যেক সালাতে এ প্রার্থণা করতেন যে, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এমন জ্ঞান থেকে আশ্রয় চাই যা কোনো উপকারে আসেনা।”

টিভির সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা আমাদের কোনো কাজে আসবে না আর এটা আমাদের জান্নাতের পথে নিতেও পারবে না। আমরা এভাবে বহু সময় ম্যাগাজিন আর গল্প-উপন্যাসে নষ্ট করি। অথচ এ সময়টায় যদি আমরা কোরআন ও হাদীস বা ইসলামী বই-পত্র পড়তাম তবে আমাদের জান্নাতের পথকে আরো সহজতর করতে পারতাম, ইনশা আল্লাহ।

ওসব আমাদের শুধু কাজে আসবে না তা না, ওসব আমাদের ক্ষতিও করে থাকে। ঐসব টিভি প্রোগ্রামগুলো আমাদেরকে কোরআন হাদীসের শিক্ষা দেয় না, বরং তা আমাদের শিখায় কিভাবে প্রেম করতে হয় বা কিভাবে উগ্র হতে হয় আর শিখায় কিছু অমার্জিত ভাষা। এরা ধীরে ধীরে তাদের শয়তানীকে আর তাদের অসৎ চিন্তাগুলোকে আমাদের মনে আর হৃদয়ে প্রবিষ্ট করে দেয়, আর ফলশ্রুতিতে আমাদেরকে জান্নাতের রাস্তা থেকে বহু দূরে নিয়ে যায়।

তাই আমাদেরকে আমাদের “গাড়ী”টাকে (ইসলাম) সারাতে হবে আর গন্তব্যকে নির্ধারন করতে হবে জান্নাত অভিমুখে। আমাদের হাতে তুলে নিতে সেখানে যাবার “মানচিত্র” (কোরআন ও সহীহ হাদীস) আর যেতে যেতে প্রয়োজনে জিজ্ঞেস করতে হবে তাদেরকে যারা জানে (বিজ্ঞ আলেম, ওলামা, ইসলামের মহান শিক্ষকগণ) যে সেদিকের রাস্তাটা কোনদিক দিয়ে গেছে।

* ভাই শহিদ খানের পাঠানো ইমেইল অবলম্বনে রচিত।
** এ লেখাটি যে কেউ কোনো পূর্বানুমতি ছাড়াই তাদের ব্যক্তিগত বা গ্রুপ সাইটে বা ইন্টারনেটের যে কোনো জায়গায় প্রচার করতে পারবেন এবং যে কোন অলাভজনক প্রকাশনায় প্রকাশ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে লেখকের নাম/লিংক প্রকাশ করা কোনো শর্ত নয়। মহান আল্লাহ তায়ালা জানেন আমরা কে কি করছি।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button