আকাইদ

দস্তগীর: সামান্য নাম, ভয়াবহ মিথ্যাচারের গোপন দরজা

আবু উসাইদ

‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হওয়া’ বলে একটা প্রবাদ বাংলা ভাষায় প্রচলিত আছে। সামান্য একটি নামের অর্থ খুঁজে বের করতে গেলে যদি ভয়াবহ কোন সত্য বেরিয়ে আসে তখন এ প্রবাদটির কথা যেন বারে বারে মনে পড়ে।

দস্তগীর, মোহাম্মদ দস্তগীর কিংবা গোলাম দস্তগীর। ছোটবেলা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেকবার শোনা একটি নাম। নামটি শ্রুতিমধুরও বটে। তবে এই নামটির পেছনেই যে লুকিয়ে আছে ধর্মব্যবসাকে পাকাপোক্ত করতে ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ ধ্বংস ও আল্লাহর পবিত্র নামকে তুচ্ছ করার অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টা তা ভাবা কি কখনো কারো পক্ষে সম্ভব?

এ প্রসঙ্গে আসার আগে আল্লাহর বিশালত্বের পরিচয় এবং তাঁর সত্ত্বার ব্যাপকতা সম্বন্ধে জেনে নেয়ার আলোচনা করাটা জরুরী বলে মনে করছি। তবে আল্লাহর বিশালত্ব সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের ভাষ্য কি তা জানার আগে আসুন আল্লাহর সৃষ্টিজগতের ব্যাপকতা সম্বন্ধে একটি বর্ণনা থেকে জেনে নেই। এই বর্ণনাটি আমি আগেও একাধিক প্রসঙ্গে এনেছি, তবে প্রাসঙ্গিক বলে আবারো এখানে আনছি।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় আড়াই শত কিলোমিটার। দ্রুতগামী বাস এবং জ্যাম মুক্ত রাস্তায় এ পথটুকু পাড়ি দিতে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। ঢাকা থেকে নিউইয়র্কের দূরত্ব প্রায় বিশ হাজার কিলোমিটার। সুপারসনিক বিমানে (যা শব্দের চেয়েও দ্রুতগতিতে চলে) তা পাড়ি দিতেও প্রায় এক দিন ও এক রাত্রি লেগে যায়। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব হলো ১৫০ মিলিয়ন বা ১৫ কোটি কিলোমিটার।

সূর্য পৃথিবীর চেয়ে কত বড়?

এতটাই বড় যে, ১৩ লক্ষ পৃথিবীকে অনায়সে সুর্যের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া যাবে। শুধু তাই নয়, সৌর পৃষ্ঠ থেকে প্রতিনিয়ত যে বলয় তৈরী হয় তাতে হাজার হাজার পৃথিবী ঢুকিয়ে দেয়া যাবে এবং তাপে এর সবই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।

সূর্যের চেয়ে বড় কি কিছু আছে?

হ্যাঁ, অনেক কিছুই আছে তবে তুলনায় বৃহত্তম হলো গ্যালাক্সি। একেকটি গ্যালাক্সিতে কোটি-বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন সূর্যের মতো নক্ষত্র আছে। আমাদের সূর্য, সৌরজগত ও পৃথিবী যেই গ্যালাক্সির ভেতর আছে তার নাম ‘মিল্কি ওয়ে’। সূর্য, এর চেয়ে ছোট, এর সমান বা এর চেয়ে হাজার হাজার গুন বড় এরকম ৪০ হাজার কোটি তারা নিয়ে গঠিত এই মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি। আমাদের এই মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি হলো আল্লাহর সৃষ্টি জগতের মধ্যে এখনও পর্যন্ত মানুষ কর্তৃক আবিষ্কৃত গ্যালাক্সিগুলোর ভেতর একটি মাঝারী আকারের গ্যলাক্সি।

গ্যালাক্সি জগতে মাঝারী আকারের এই মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির বিশালত্ব কি আমরা বুঝতে পারছি? আসুন দেখা যাক।

আলো বা লাইট প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল বা তিন লক্ষ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। ব্যাপারটা এভাবে চিন্তা করা যাক। আমরা যদি আলোর গতিতে ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক যাত্রা করি, তাহলে ০.০৬ সেকেন্ড বা এক সেকেন্ডের একশ ভাগের ছয় সেকেন্ড সময়ে আমরা পৌছে যাব। এমনকি যদি আমরা আলোর গতিতে সুর্যের দিকে রওয়ানা করি, তাহলে পৃথিবী থেকে সূর্য পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে আট মিনিট। আর আমরা যদি আলোর গতিতে আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত যেতে চাই তাহলে কত সময় লাগবে? ১ লক্ষ ২০ হাজার বছর। আল্লাহু আকবার।

অবিশ্বাস্য বিশাল এ গ্যলাক্সির মতো কত গ্যালাক্সি সৃষ্টি জগতে আছে? অধিকাংশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী বলেছেন এর সংখ্যা জানা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, আর কেউ কেউ বলেছেন এর সংখ্যা কয়েক হাজার বিলিয়ন হতে পারে আবার বেশীও হতে পারে। তবে এ পর্যন্ত মানুষ কেবল ১০ হাজার গ্যালাক্সি আবিষ্কার করতে পেরেছে।

আল্লাহর সৃষ্টিজগত যদি এতো বিশাল হয় তাহলে তাঁর বিশালত্ব কেমন?

এবার আসুন কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে তা জানার চেষ্টা করি।

সহীহ বুখারীতে একাধিক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সাঃ বলেছেন, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাঁর একটি হাত দিয়ে সমস্ত মহাবিশ্বকে ধরবেন। সহীহ মুসলিমে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ একবার সাহাবাদের নিয়ে পথ চলার সময় একটি ফুলে ওঠা মৃত ছাগল দেখে থামলেন যার একটি কান কাটা ছিল ( যেসব ছাগল রোগাক্রান্ত হতো আরবে সেসব ছাগলের কান কেটে দেয়া হতো )। তিনি বললেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ কি এ ছাগলটি এক দিরহামে কিনতে রাজী আছো?” সাহাবারা বললেন, “এক দিরহাম বলছেন কি ইয়া রাসুলুল্লাহ, একে যদি বিনে পয়সায়ও দেয়া হয় তবুও কেউ কিনতে রাজী হবেনা।” রাসুল সাঃ বললেন, “তোমাদের কাছে এ মৃত ছাগল যেমন মূল্যহীন, সমগ্র পৃথিবীটা আল্লাহর কাছে এর চেয়েও মূল্যহীন।” ( যখন মানুষের কাছে পৃথিবীই ছিল কল্পনার বৃহত্তম সৃষ্টি, তখন সমস্ত পৃথিবীকে এরকম নগন্য বলা ও মেনে নেয়া ছিলো কঠিন ব্যাপার )।

আল্লাহু আকবার, আমরা কি কল্পনা করতে পারছি আল্লাহর বিশালত্ব?

এখন আসা যাক দ্বিতীয় প্রসঙ্গে। পরকালের নির্দিষ্ট একটি প্রতিশ্রুত সময়ের আগে কি কোন মানুষ আল্লাহ্‌কে দেখতে পারবে? সাধারণ মানুষের কথা বাদ দেয়া যাক, রাসুলুল্লাহ সাঃ কি এমনকি মেরাজে গিয়েও আল্লাহকে দেখেছেন? উত্তরটা পাওয়া যাবে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হাদীসে যেখানে আয়িশা রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি তাঁর ছাত্রদেরকে বলছেন, “যে ব্যক্তি বললো (এমনকি) মিরাজে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাঃ আল্লাহকে দেখেছেন, সে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করলো”। একজন প্রশ্ন করলো, “আল্লাহ কি কুরআনে বলেননি ‘তিনি তাঁকে নিশ্চিত দিগন্তে দেখেছেন’?” উত্তরে আয়িশা বললেন, “এই তিনি তো (আল্লাহ্‌ নন) হলেন জিবরাইল। আর তোমরা কি কুরআনে পড়নি ‘দৃষ্টি সমূহ তাঁকে আবদ্ধ করতে পারে না, বরং তিনিই সব দৃষ্টিকে আবদ্ধ করে রাখেন’, তবুও তোমরা এমনটা ভাবো কিভাবে”।

আল্লাহর বড়ত্ব ও তাঁর সত্ত্বা আমাদের ধারণারও অনেক বাইরে তা কুরআন ও হাদীসে অনেক যায়গাতেই বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ্‌ এমনকি যে সকল নির্বাচিত মানুষকে রাসুল হিসাবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, তাদের মধ্যে একমাত্র মুসা আঃ ছাড়া কারো সাথে সরাসরি কথা বলেননি অথবা হাতে গোনা দু একবার বলেছেন। সকল ক্ষেত্রেই রাসুলগণ ও আল্লাহর বাণীর বার্তাবহণের মাধ্যম হিসাবে জিবরাইল থেকেছেন। আর নবী-রাসুলগণ ছাড়া অন্য কোন মানুষের সাথে আল্লাহ্‌র প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগাযোগের কোন উপায় নেই।

এবার ফিরে আসা যাক দস্তগীর প্রসঙ্গে। দস্তগীর একটি ফারসী শব্দ যার দুটি ভাগ আছে। দস্ত এবং গীর। দস্ত শব্দটির মানে আমরা অনেকেই হয়তো জানি যা হলো-‘হাত’। আর গীর শব্দের মানে হলো ‘ধরা’। তাহলে দস্তগীর এর শাব্দিক মানে দাঁড়ালো ‘হাত ধরা’। তবে দস্তগীর মূলতঃ একটি উপাধি। আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর উপাধি। কিন্তু তিনি কার হাত ধরলেন, আর কেনই বা উপাধিটি এলো? আসুন দেখা যাক।

আবদুল কাদের জিলানী ও আল্লাহ্‌ একদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। নাহ, ভুল পড়ছেন না। আবদুল কাদির জিলানীর সাথে স্বয়ং আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার হেঁটে যাবার কথাই বলা হচ্ছে। যেতে যেতে হঠাৎ আল্লাহ্‌ হোঁচট খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। না, এবারো ভুল শোনেননি। স্বয়ং আল্লাহই হোঁচট খেয়েছিলেন (আল্লাহ্‌, তুমি আমায় ক্ষমা করো), জিলানী নন। এবার আবদুল কাদির তাঁর একটি হাত দিয়ে ধরে ফেললেন আল্লাহকে। এতে করে তিনি আল্লাহকে পড়ে যাবার হাত থেকে বাঁচালেন (আল্লাহ্‌, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই)। যেহেতু তিনি আল্লাহর হাত ধরেছিলেন, তাই সেই থেকে তিনি দস্তগীর।

এবার আপনি মেলান কুরআন, সহীহ হাদীস আর এই দস্তগীরকে। আল্লাহু আকবার। এভাবেই ভয়ংকর মিথ্যাচার করে আপনাকে আর আমাকেই বোকা বানিয়ে যাচ্ছে এক ধরণের ভয়ংকর ধর্ম ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। কিন্তু তারা এই কাহিনী ফেঁদেছে কেন জানেন? কারণ দস্তগীর আবদুল কাদের জিলানীর হাত ধরেছে কোন পীর বা বুজুর্গ, এভাবে চেইনের মতো ধরতে ধরতে সেই হাত ধরছেন আপনি। দস্তগীরের যেই হাত এমনকি আল্লাহকে ধরে বাঁচিয়েছে (নাউ’যুবিল্লাহ মিন যালিক) সেই হাত কি সামান্য আপনার পীর এবং সাথে আপনাকে বাঁচাতে পারবেনা? আর কি কোন সংশয় আছে আপনার?

আল্লাহ্‌ আমাদের ক্ষমা করুন। এ তো গেলো একটি মাত্র। এমনই সব ভয়াবহ কাহিনী দিয়ে আমাদের কুরআন আর সুন্নাহ থেকে দূরে সরিয়ে ফেলছে একটা গোষ্ঠী। তারা নিজেরা বলে আমরা কুরআন হাদিসের বাইরে নই, আর এতেই আমরা অন্ধ বিশ্বাস করে নিয়েছি। পৃথিবীতে আমাদের সময় ফুরিয়ে যাবার আগেই ইসলাম সম্পর্কে জানা তরপর মানা আমাদের জন্য জরুরী তা কি আমরা বুঝতে পারছি না?

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

১টি মন্তব্য

  1. মিথ্যাচার তো আপনি করলেন। যে ঘটনা বর্ণনা করলেন তার রেফারেন্স দেননি। এটি একটি মিথ্যাচার। মহান আল্লাহর অলিগণের নামে মিথ্যাচার করা অত্যন্ত নিকৃষ্ট অপরাধ।

মন্তব্য করুন

আরও দেখুন
Close
Back to top button