অধিকার ও মর্যাদা

বিভিন্ন অঞ্চল ও মতবাদে মানবাধিকারের ধারণা

পাশ্চাত্যে মানবাধিকারের ধারণা :

ইউরোপীয় দেশ সমূহ : পাশ্চাত্যে মানবাধিকারের ধারণাটি অতি প্রাচীন ও অস্পষ্ট। মানবাধিকারের বিষয়ে প্রাচীন গ্রীকের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সেখানে মনিব কর্তৃক দাসদেরকে চবিবশ ঘণ্টা কঠিন কাজে নিয়োজিত রাখা হ’ত অত্যন্ত নির্মমভাবে। আর সে দেশের গণতন্ত্র ছিল একান্তভাবে স্বাধীন-প্রভাবশালী জনগোষ্ঠীর জন্য। সেখানে সাধারণ জনগণের কোন অধিকার স্বীকৃত ছিল না।[1] গোটা ইউরোপে ভূ-স্বামী, সামন্ত প্রথা ও খৃষ্টান পাদ্রীদের প্রভাব-প্রতিপত্তি খুব শক্তিশালী ছিল। যা তাদের রাষ্ট্রীয় কার্যাবলী পরিচালনায় দারুণ ভূমিকা রাখতো। রাষ্ট্রীয় কিছু ব্যক্তিবর্গ ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে মানুষের মৌলিক অধিকারসহ নানা অধিকার সংরক্ষণ ও পরিচালনা করা হ’ত। যেমন- বৃটেনে রাজা জন এবং সম্পদশালী ও ধনী ভূম্যাধিকারী বা ব্যারণদের মধ্যে ১২১৫ সালে একটি চুক্তি হয়, যাকে ঐতিহাসিক ‘Magna carta’ বলা হয়। এই চুক্তিতে নিশ্চয়তা ছিল- জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের (Great council) পূর্বানুমতি ব্যতীত কাউন্সিলর খামখেয়ালীভাবে জনগণের উপর কর আরোপ করবে না। রাজকর্মকর্তারা যথেচ্ছভাবে জনগণের ভূসম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারবে না, জনগণ চুরির বিচার পাবার অধিকারী হবে। তবে ৬৩টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত ম্যাগনাকার্টা কখনই জনগণের চার্টার ছিল না। তা পরবর্তীতে হয়ে যায় Charter of English Liberties’ এবং বর্তমানে এটি মানবাধিকার ও মুক্ত সরকারের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাইল ফলক।[2]

পরবর্তীতে শাসকরাই যেন স্বেচ্ছাচারী না হয়ে ওঠে, সেজন্য ইংলিশ বিপ্লবের মাধ্যমে ১৬৮৯ সালে পার্লামেন্টের মাধ্যমে ‘বিল অব রাইটস’কে বিধিবদ্ধ আইনে পরিণত করা হয়। এভাবে ‘পিটিশন অব রাইটস’, ‘বিল অব রাইটস’ এবং ‘ম্যাগনাকার্টা’ এই তিনটি ঐতিহাসিক দলীলকে একত্রে বলা হয়, ‘ইংলিশ সংবিধানের বাইবেল’। তবে হবস, লক ও রুশো ছাড়াও অপরাপর সকল রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ও আইনবিদগণ এ সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে Grotius, Bon, Astim, Bentham, Laski প্রমুখ পন্ডিতগণের চিন্তার ফলাফলের কথা পর্যালোচনা করতে গিয়ে প্রফেসর ইলিয়াস আহমদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দর্শনে কর্তৃত্বকে দ্বারে দ্বারে হুমড়ি খেতে দেখা যাচ্ছে। কখনও এক ব্যক্তি থেকে মুষ্টিমেয় লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত হয় এবং কখনও অসংখ্য ব্যক্তির হাতে, কখনও ব্যক্তির হাত থেকে সমাজের হাতে, কখনও কখনও সংখ্যালঘুদের হাত থেকে সংখ্যাগুরুদের কাছে, কখনও সংখ্যাগুরুদের থেকে সংখ্যালঘুদের কাছে, কখনও প্রশাসন থেকে আইন পরিষদের কাছে, কখনও আইন পরিষদ থেকে বিচার বিভাগের কাছে এবং অবশেষে সমাজের নিকট থেকে পুনরায় রাষ্ট্রের একক দর্শকের দিকে।[3] ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী প্রখ্যাত রোমান আইন অভিজাত ও দাস শ্রেণীর মধ্যে বিরাট পার্থক্য সৃষ্টি করে দিয়েছিল। ফলে সে আইন সাধারণ মানুষের কোন কল্যাণে আসেনি। ইয়াহুদী ধর্ম জাতীয়তাবাদী শ্রেণী পার্থক্য সম্পন্ন ধর্ম। এখানে বাইরের লোকদের সাথে তার একবিন্দু সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকৃত ছিল না।

অন্যদিকে খৃষ্টধর্মে প্রেমভালবাসার ঘোষণা নিয়ে এলেও তার মূলে ছিল মানুষে মানুষে মৌলিক বিভক্তি। যেমন- ইতিহাসের সকল অধ্যায়েই গীর্জা জনগণকে স্বাধীন চিন্তা ও মত গ্রহণ এবং তা প্রকাশের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে; পাদ্রীদের মতের বিপরীতে হ’লে জনগণকে কঠিন ও নিমর্ম শাস্তি পেতে হ’ত। উত্তর ইউরোপে জনগণকে খৃষ্টধর্মে দীক্ষিত করার জন্য এবং ইউরোপীয় আন্দালুসিয়ায় মুসলমানদের খৃষ্টান বানাবার জন্য যে নির্মমতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে মানবতার ইতিহাসে তার দৃষ্টান্ত অত্যন্ত বিরল।[4] আজও দক্ষিণ আফ্রিকায় সাদা চামড়ার অধিবাসী এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের সাদা চামড়ার অধিবাসীদের সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে, তা মানবাধিকার সম্পর্কে ইংরেজদের দ্বিমুখীপনার জ্বলন্ত প্রমাণ।[5] খৃষ্টান মিশনারীরা বর্তমান সময়েও দুনিয়ার মুসলিম দেশে লোকদের খৃষ্টান বানানোর উদ্দেশ্যে নানা কৌশলে সেই কাজ করে যাচ্ছে। ঠিক একইভাবে একালের বিভিন্ন মতাদর্শও মানুষে মানুষে বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য সৃষ্টির কাজ করেছে, সাধারণ ও মৌলিক মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আকাশ-পাতালের পার্থক্যের প্রাচীর তুলে ধরেছে। সম্ভবতঃ এ লক্ষ্যে বৃটেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমেরিকার সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে ন্যাটোর মাধ্যমে সারা বিশ্ব মানবাধিকার রক্ষার পরিবর্তে মানবাধিকারকে পদদলিত করছে।

আমেরিকায় মানবাধিকার : আমেরিকা ছিল একটি বৃটিশ কলোনী। কলোনীগুলোতে চলত বৃটিশ রাজ্যের শাসন। ইংরেজ রাজা কলোনীর শাসনকার্য পরিচালনায় তাদের কোন সুযোগ দিতেন না; উপরন্তু তাদের ওপর ‘ট্যাক্স’ আরোপ করতেন। অবশেষে আমেরিকানরা এই স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে এবং তারা ১৭৭৬ সালের ১২ই জুন ভার্জিনিয়াতে একটি Bill of Rights গ্রহণ করে, যার রচিয়তা ছিলেন জর্জ ম্যানসন। এর ২১ দিন পর ১৭৭৬ সালের ৪ঠা জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (স্বাধীনতা দিবস) ফিলো ডিলফিয়াতে প্রথম কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস আমেরিকার ১৩টি কলোনী ঘোষণা করেন ‘আমেরিকার রুশো বলে খ্যাত টমাস জেফারসন’। এই ঘোষণায় মানুষের সাম্য, জীবন, চলাফেরা, স্বাধীনতা সহ নানা অধিকারের বিষয় স্বীকৃতি পায়। এতে বলা হয়, যদি কোন সরকার এই অধিকার দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে সেই সরকারকে ধ্বংস করে নতুন সরকার গঠন করতে হবে।[6]

আমেরিকার মানবাধিকার অবস্থা বৃটেন ও ফ্রান্স থেকে মোটেও পৃথক নয়। আমেরিকার শেতাঙ্গ ঔপনিবেশিক গোষ্ঠী ঐ মহাদেশের মূল বাসিন্দা রেড ইন্ডিয়ানদের গোটা সম্প্রদায়কেই দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। নিজেদের ‘নতুন বিশ্ব’ গড়ার ও উন্নতি সাধনের জন্য তারা আফ্রিকা মহাদেশের কৃষ্ণাঙ্গ অধিবাসীদের পশুর মত ধরে নিয়ে গিয়ে নিজেদের দাসে পরিণত করে এবং জাহায বোঝাই করে আমেরিকায় নিয়ে যায়। এসব গোলাম যথারীতি ক্রয়-বিক্রয় হ’ত। আফ্রিকার যে উপকূল থেকে তাদের জাহাযে বোঝাই করা হ’ত তার নাম হয়েছে ‘দাস উপকূল’ (Slave Coast)। এই আমদানীকৃত গোলামদের যে বংশধর এখনও অবশিষ্ট রয়ে গেছে, তারা আজ পর্যন্ত সমান অধিকার পায়নি। তারা যখনই আমেরিকার সংবিধানে প্রদত্ত মানবাধিকার পুনরুদ্ধারের দাবী জানায় তখনই তাদের ওপর নির্মম জুলুম-অত্যাচার চালানো হয়। এ বিষয়ে রবার্ট ডেবি ভৎর্সনা করে বলেন, পাঁচ লাখ গোলাম এবং হাযার হাযার আমদানীকৃত শ্বেতাঙ্গ সেবকদের কলোনীতে বসে গোলামদের এক ধনবান মনিব টমাস জেফারসন কত বাগাড়ম্বর সহকারে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণার স্মৃতিচারণ করছে’।[7] এই আভ্যন্তরীণ গোত্রীয় স্বাতন্ত্র্যেতর কথা বাদ দিয়ে এখন বহির্বিশ্বে আমেরিকার ভূমিকা মূল্যায়ন করলে আরও ভয়ংকর দৃশ্য স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। হিরোশিমা, নাগাশাকি, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ইরাক, ফিলিস্তীন, আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের সর্বত্র আমেরিকার হাতে মৌলিক মানবাধিকার পদদলিত করার হৃদয়বিদারক দৃশ্য আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, আমেরিকা থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য সমুদ্রে ফেলে দেয়া হয়, তা তৃতীয় বিশ্বের বুভুক্ষু জনগণের ৩ বছরের প্রয়োজন পূরণের জন্য যথেষ্ট হ’তে পারে।

বিশ্বে নেতৃত্বের অগ্রনায়ক, মানবাধিকারের রক্ষক (?) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিতরের খবর অত্যন্ত শোচনীয়। সেখানকার অর্থনৈতিক অবস্থা, বেকার সমস্যা ও আইন-শৃংখলার অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। অথচ বিশ্বের বহু মানুষ জানে না সেখানে কি ঘটছে? আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস-এর ‘ন্যাশনাল ক্রাইম ভিকটিমাইজেশন সারভে ব্যুরো অব জাস্টিস’ প্রকাশিত রিপোর্টে ১৯৯৬ সালে ৩,০৭,০০০টি ধর্ষণের অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে। সে হিসাবে ঐ বছর আমেরিকাতে প্রতিদিন গড়ে ২,৭১৩ জন অর্থাৎ প্রতি ৩২ সেকেন্ডে ১ জন মহিলা ধর্ষিতা হয়েছে।[8] অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে তাদের ৩৩১টি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। হাযার হাযার কর্মচারী-কর্মকর্তা চাকুরী হারিয়েছেন। এমনকি এ মাসেই খোদ নিউইয়র্ক সিটিতে ছয় হাযার শিক্ষক চাকুরী হারাতে যাচ্ছেন। সেদেশে প্রতি ৭ জনের মধ্যে ১ জন হতদরিদ্র। চিরবৈরী চীনের নিকটে তারা এখন ৩ হাযার মার্কিন ডলার ঋণী।[9]

ফ্রান্সে মানবাধিকার : ফ্রান্সে মানবাধিকারের জন্ম, ধারণা ও পরিস্থিতিও প্রায় বৃটেন ও আমেরিকার পর্যায়ে। কারণ তৎকালে ফ্রান্সের মধ্য শ্রেণী কৃষ্ণাঙ্গরা রাজা কর্তৃক মারাত্মকভাব শোষিত, বঞ্ছিত ও নির্যাতিত হয়েছে। এই বিপ্লবীরাই (মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও কৃষক) ১৭৮৯ সালে স্বৈরাচারী রাজাকে উৎখাত করে একটি খসড়া দলীল ঘোষণা করে। যার নাম Declaration of Rights of man and of the Citizen. ঘোষণাটির খসড়া দলীল তৈরী করেন জেনারেল দ্য মার কুইজ ডি লাফায়েত, যিনি ছিলেন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের বন্ধু এবং আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে লাফায়েতকেও বেশ কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল। ১৭৮৯ সালের ২৬শে আগষ্ট গৃহীত এই ঘোষণায় বলা হয়, Men are born and remain free and equal in Rights (অনুচ্ছেদ ১) এবং প্রত্যেক রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্দেশ্য হ’ল স্বাধীনতা, সম্পত্তি, নিরাপত্তা এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ (অনুচ্ছেদ-২)। এই ঘোষণায় আরও সন্নিবেশিত ছিল খামখেয়ালী গ্রেফতার থেকে মুক্তি (অনুচ্ছেদ ৭), ধর্মীয় স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ ১০), বাক ও সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা এবং সম্পত্তির অধিকার (অনুচ্ছেদ ১১, ১৭)। তাই ফ্রান্সের এই দলীলকে American Declaration-এর ‘কনিষ্ঠ ভগ্নি’ বলা হয়। এই ঘোষণার অনুচ্ছেদ ১০-এ ফ্রান্সের জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলা হ’লেও তা বর্তমান শাসকবর্গের পদতলে পিষ্ট হচ্ছে। ইতিমধ্যে (২০১১ সালে) সেখানে মুসলিম নারীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইন কেউ অমান্য করলে তাকে জেল-জরিমানাসহ বিভিন্ন দন্ড পেতে হবে। সম্প্রতি আরব দেশ থেকে ৩ জন হিজাব পরিহিতাকে ফ্রান্সের এয়ারপোর্ট থেকে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। কারণ সে দেশের আইনানুযায়ী বোরক্বা/হিজাব নিষিদ্ধ। এয়ারপোর্ট থেকে তাদের হিজাব খোলা ছাড়া তারা ফ্রান্সে প্রবেশ করতে দিবে না। ফলে মুসলিম মহিলারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এটা নিয়ে বিশ্বে হৈচৈ পড়ে গেছে। তবুও তাতে কোন কাজ হয়নি। এখানে মুসলিম ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হ’ল যা জাতিসংঘ মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন। অথচ পশ্চিমা শক্তিগুলো এখন এসব ব্যাপারে যেন মুখে কুলুপ এঁটেছে।

ফ্রান্সে মানবাধিকার সনদকে ১৭৯১ সালে আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হ’লেও সেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ‘যদিও উপনিবেশগুলো এবং এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকায় ফ্রান্সের অধিকারভুক্ত কোন দেশে ফরাসী রাষ্ট্রের একটি অংশ, কিন্তু এই আইন তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। তাহ’লে এখানে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, ফ্রান্সে যে মানবাধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, তা অপরিপূর্ণ ও লংঘনীয় ও জাতীয়তাবাদের রাহুগ্রাসে আষ্টে-পৃষ্টে বাঁধা। তাই তো পুরানো ‘সাম্রাজ্যনীতি’র হস্ত সম্প্রসারণের নতুন আক্রমণের শিকার হ’ল মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলো তথা লিবিয়া আক্রমণ। একই নীতিতে বৃটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, তাদের ক্রীড়নক ন্যাটো সহ গোটা পাশ্চাত্য দেশগুলোর ন্যক্কার জোটবদ্ধতা, তথাকথিত গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে তারা প্রমাণ করেছে- বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষার একমাত্র রক্ষক তারাই (?); এরাই আবার জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

মানবাধিকারের সমাজতান্ত্রিক ধারণা :

পাশ্চাত্যে মানবাধিকারের ধারণার সাথে সাথে আমাদের সমাজতান্ত্রিক মানবাধিকার সম্পর্কে ধারণা থাকা যরূরী। কারণ মানবাধিকারের উদগারক হিসাবে এদের দাবীর কমতি নেই। তাই এর প্রথম ও প্রধান উদগারক হ’ল জার্মান বংশের কার্লমার্কস (১৮১৮-১৮৮৩)। কার্লমার্কসকে পারিবারিক প্রতিকূলতায় যুবক বয়সে তাঁর পিতা হার্সকেল বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। সেখানে তিনি আইন, ইতিহাস ও দর্শনের উপর পড়ালেখা ও গবেষণা করেন। বিশেষ করে তিনি ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেগল-এর দর্শনশাস্ত্র, প্রকৃতি তত্ত্ব প্রভৃতি বই পড়ে যুবসমাজের উপর এক বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন। তিনি শাসক বিরোধী লেখার কারণে জার্মান থেকে ফ্রান্সে বিতাড়িত হন। সেখানে অবস্থানকালে প্রকাশিত Vorwart গ্রন্থে তার ভবিষ্যত জীবনের চিন্তা-ভাবনার প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে তিনি ধর্ম নিয়ে এক বিতর্কিত বক্তব্য লিখলেন, ‘ধর্ম পৃথিবীর মানুষের দুঃখ ভোলাবার জন্য স্বর্গের সুখের প্রতিশ্রুতি দেয়। এ আর কিছুই নয়; আফিমের মত মানুষকে ভুলিয়ে রাখবার একটা কৌশল’। দার্শনিকদের সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা শুধু নানাভাবে জগতের ব্যাখ্যা করা ছাড়া কিছুই করেনি। আমরা শুধু ব্যাখ্যা করতে চাই না, চাই জগতকে পালটাতে। এখানে তার দর্শনের সাথে শুরু হয় উঁচু শ্রেণীর সংঘাত। অনিবার্য এই অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে ফরাসী সরকার তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করে। এখানে পনেরো মাসের জীবনে পরিচয় হয় আর এক সংগ্রামী দার্শনিক ফ্রেডারিক এঙ্গেলস, যিনি মার্কসের ৬৬ বছর বয়সে মৃত্যুর পর তার বাকী কর্মের বাস্তবায়ন করেন। সমাজতান্ত্রিক ধারণা নিয়ে ১৮৪৭ সালে প্রথমে গড়ে উঠল আন্তর্জাতিক কমিউনিষ্ট লীগ। যেখানে যোগ দেয় বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানী, লন্ডনের প্রতিনিধিরা। এখানেই মার্কস এঙ্গেলসের যৌথ কমিউনিষ্ট ম্যানিফেস্টো ঘোষণা করা হয়।[10]

মার্কস ৫ সদস্যের সংসারে অত্যন্ত কষ্ট করে মানবেতর জীবন যাপন করতেন। দু’কামরা বিশিষ্ট কক্ষে কোন রকম ঠাঁই নিয়ে বেঁচে ছিলেন। পরের দিন খাওয়া জুটবে কি জুটবে না তা কেউ জানে না। জামা-কাপড়, জুতোর অবস্থা এমন যে, বাইরে যাওয়া দুষ্কর। বহুদিন গিয়েছে শুধু একটি জামার অভাবে ঘরের বাইরে যেতে পারেনি মার্কস। অভুক্ত শিশুরা বসে আছে শূন্য হাঁড়ির সামনে। দোকানী ধারে কোন মাল দেয়নি। এমনি করে তার কত দিন-রজনী কেটেছে নিদারুণ কষ্টে। তবে বন্ধু এঙ্গেলস তাকে সহযোগিতা করেছে। সম্ভবত এ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি ধনী-গরীবের ব্যবধান ঘুচানোর জন্য গড়ে তোলেন শ্রেণী সংগ্রাম, যা আজও তার চেতনায় উজ্জীবিত। মাকর্স মনে করতেন, সমগ্র সমাজ ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তি হ’ল অর্থনীতি। যাদের হাতে উদ্ধৃত্ত অর্থ সঞ্চিত হবে, তারাই হবে সবচেয়ে ক্ষমতাবান, সমাজের প্রভু। যা ১৮৬৭ সালে তার বিখ্যাত ‘ড্যাস ক্যপিটাল’ (Das Capital) বই-এর মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। এই বইটিই মূলতঃ ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের প্রেরণা যুগিয়েছিল।[11] এই ধারণা মার্কসবাদ তথা কমিউনিজম স্বীকার করে না। যদি এমন কোন উচু-নীচু বা অসম পার্থক্য দেখে, তাহ’লে সমাজতান্ত্রিক নীতিতে রাষ্ট্রীয় শাসকবর্গ সে শক্তিকে নিমিষে চুর্ণ-বিচুর্ণ করে দিতে প্রস্ত্তত। অর্থাৎ এই নীতিতে নিজের বলে কোন সম্পদ, অর্থ থাকবে না। সবই থাকবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে।

সমাজতান্ত্রিক দর্শনের চিন্তা ও ধারণা জনগণের মধ্যে এমনভাবে গ্রোথিত হয়েছিল, কখনও কখনও যার মারাত্মক পরিণতি স্বয়ং কমিউনিষ্ট নেতা ও শাসকগণকেই বহন করতে হয়েছিল। এ রকমই এক ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কমিউনিষ্ট নেতা ক্রুশ্চেভ-এর এক সুন্দরী কুমারী মেয়ে ছিল। এক সময় অনুসারীরা তার মেয়েকে তার সামনে থেকে ছিনিয়ে নিতে যায়। তখন ক্রুশ্চেভ বলেছিলেন, ‘তোমরা আমার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছ কেন?’ তখন জনগণ বলেছিল, আপনি তো বলেছেন, রাষ্ট্রে ‘আমার ব্যক্তির’ বলে কোন কিছু থাকবে না, সবই রাষ্ট্রের। সুতরাং এ সুন্দরী মেয়ে আপনার না, রাষ্ট্রের তথা জনগণের। তাই এ মেয়েকে ভোগ করার অধিকার আমাদের সকলের। তখন ক্রুশ্চেভ মেয়েকে রক্ষা করতে পারেননি। সেদিন শুধু পথচেয়ে নির্বাক চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া তার করার কিছুই ছিল না। এই তো হ’ল হতভাগা শাসক আর কমিউনিজ্যম কনসেপ্ট বা ধারণা।

একই নীতি ও ধারণা নিয়ে রাশিয়ায় জন্ম নিল ভি. গাই লেলিনের সমাজ বিপ্লবের নতুন ধারা। ১৯০৩ সালে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস শহরে পুলিশের ভয়ে একটি ময়দার গুদামে জন্ম নিল বলশিয়াভিক পার্টি। দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে ১০ বছর পর লেলিন ১৯১৭ সালে ১৬ই এপ্রিল দেশে ফিরে গোপনে উঠলেন বোন আনার বাড়িতে। এর মধ্যে পুলিশ টের পেয়ে তাকে ধরতে হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখান থেকে তিনি চাষীর ছদ্মবেশে পালিয়ে সীমান্তের রাজর্লি শহরে ছোট্ট কুড়ে ঘরে বসে চিঠি লিখলেন, ‘বলশেভিকদের ক্ষমতা দখল করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠা করতে হবে মার্কসবাদ ও সশস্ত্র অভ্যুত্থান। সশস্ত্র অভ্যুত্থান ছাড়া ক্ষমতা দখল করা সম্ভব নয়। সে লক্ষ্যে ১৯১৭ সালের ২৪শে অক্টোবর শুরু হ’ল রাশিয়ায় সশস্ত্র বিপ্লব। এ বিপ্লব ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। যেমন- একমাত্র কৃষি ক্ষেত্রে মার্কসীয় নীতি বাস্তবায়নের জন্য ১৯ লক্ষ কৃষকের মাথার খুলি উড়িয়ে দিয়েছে মেশিনগান চালিয়ে। দেশে সকল ছাত্র-যুবককে ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের পক্ষে যুদ্ধ করতে বাধ্য করেছে। তা না করলে তাদের উপর চালানো হয়েছে কারা নির্যাতন ও অমানবিক অত্যাচার। মুসলমানদের উপর বিধি নিষেধ করলে সে দেশ থেকে ৩০ মিলিয়ন মুসলমান বিতাড়িত হয়।[12] বিপ্লবের সময়ে পেঁŠনে ২ কোটি মানুষ নিহত হয়। এ সম্পর্কে রুশ সমাজতাত্ত্বিক ও দার্শনিক প্রফেসর পিটিরিম সরনিক রুশ বিপ্লবে মানুষের জীবন নাশের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ১৯১৮-২২ সালের বিপ্লবে সরাসরি সংঘর্ষে ছয় লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। প্রতি বছর গড়ে লক্ষাধিক লোক নিহত হয়। গৃহযুদ্ধে নিহত এবং পরোক্ষ আক্রমণে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ কোটি ৫০ লাখ থেকে এক কোটি ৭০ লাখ।[13] লাল বিপ্লবের খুনী চেহারা দেখে জীবন বাঁচানোর জন্য দেশ থেকে দশ লাখ লোক পলায়ন করে।[14] এসব ঘটনা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, পাশ্চাত্য দেশসমূহে অধিকারের ধারণা মানবীয় নয়, বরং গোত্রীয়, আঞ্চলিক, জাতীয়তাবাদী ও তাত্ত্বিক গোঁড়ামির দোষে দুষ্ট। তারা অন্যের অধিকারের প্রতি কোনরূপ তোয়াক্কা করে না।

এভাবে সমাজতন্ত্রের জন্মের ঠিক কয়েক যুগ পার না হ’তেই ১৯৯০ দশকে সমাজতন্ত্রের সুতিকাগার সোভিয়েত ইউনিয়ন রাষ্ট্রটি ভেঙ্গে ডজনেরও বেশী রাষ্ট্র তৈরী হ’ল। পৃথিবী থেকে এক প্রকার বিদায় নিল মার্কসবাদ, লেলিনবাদের সেই ভয়ংকর একপেশে মতবাদ। নানা রঙে পরিবর্তন হ’ল সেই মতবাদ। লেলিন বলেন, ‘আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের উৎস হচ্ছে গরীব জনগণের শ্রেণী সংগ্রামের স্বার্থ’।[15] অর্থাৎ লেলিনের কথা অনুযায়ী সমাজে কোন উঁচু-নীচু মানুষ বলে কেউ থাকবে না। সবাই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দিক দিয়ে সমান। কিন্তু বাস্তবে তা কি সম্ভব? কেউ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হবে, কেউ হবে সুইপার। তাই বলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদায় দু’জন কি এক হতে পারে? আবার কেউ ধনী হবে, কেউ হবে ফকীর এটাই স্বাভাবিক। ধনীরা গরীবদেরকে যাকাত, দান এবং নানা দিক দিয়ে সহযোগিতা করবে এটাই নিয়ম। তবে ধনী-গরীবের মধ্যে ব্যবধান কম হবে। কোন গরীব-মিসকীন যেন না খেয়ে, বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়, তার ব্যবস্থা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যেমন- ইসলামের পঞ্চম খলীফা নামে পরিচিত ওমর ইবনে আব্দুল আযীয (রহঃ) বলেন, ফোরাতের তীরে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায়, তাহ’লে তার জন্য ওমরকে আল্লাহ্র কাছে জবাবদিহি করতে হবে। খলীফার এ উক্তি থেকে এ কথাই অনুমিত হয় যে, তখন ধনী-গরীবের ব্যবধান খুব একটা ছিল না। আর থাকলেও ঐ সময়কার শাসকগণ গরীবদের ব্যাপারে কত সতর্কতা অবলম্বন করতেন। অভুক্ত প্রতিবেশীর প্রতি জোরাল খেয়াল রাখা এসব মুসলিম সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য। পৃথিবীতে ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখ, ছোট-বড় থাকবে এটাই স্বাভাবিক। পক্ষান্তরে সমাজতান্ত্রিক ধারণায় এসব থাকা চলবে না। আসলে সমাজতান্ত্রিক ধারণাটি ভুলের উপরে নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কারণ যে ধারণার নৈতিক কোন ভিত্তি নেই, নেই কোন পারলৌকিক জবাবদিহিতা-সেখানে তো গলদ থাকবেই। তাইতো এ সম্পর্কে সি.ডি কারনিগ বলেন, মৌলিক অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত ও বাস্তবায়িত আইনের মাধ্যমে অস্তিত্ব লাভ করে। প্রাকৃতিক আইনের ভিত্তিতে তার কোন বৈধতাকে এখানে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এভাবে রাষ্ট্রের বিপরীতে নাগরিকদের কার্যকর হেফাযতের গ্যারান্টি এখানে অসম্ভব করে তোলা হয়েছে।[16] এখানে ‘প্রাকৃতিক আইন’ বলতে প্রকৃতিগত উপায়ে তথা আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত আইনকে বুঝানো হয়েছে। এখানে একটা কথা সুস্পষ্ট যে, মানুষের মনগড়া যেকোন ধরনের নিয়ম বা বিধিবদ্ধ আইন দ্বারা হৌক না কেন, তাতে মানব জাতির মুক্তির কোন গ্যারান্টি নেই, যা আছে শ্বাশত বিধান ইসলামে।

মূল লেখা: মানবাধিকার ও ইসলাম

– শামসুল আলম

 


[1]. মাওলানা আব্দুর রহীম, ইসলাম ও মানবাধিকার (ঢাকা : খায়রুন প্রকাশনী), পৃঃ ৪।

[2]. Dr. M. Ersloadul Bari, International concern for the Promation and Protection of Human Rights, Dhaka University Studies Part F. vol. 11 (1). 21. মানবাধিকার আইন সংবিধান ইসলাম এনজিও, ডঃ হেবা মন্ডল ও ডঃ শাহজাহান মন্ডল, শামস পাবলিকেশনস, ঢাকা- ২য় প্রকাশ পৃঃ ৮।

[3]. সালাউদ্দীন, মৌলিক মানবাধিকার, অনুবাদ: মুহাম্মাদ আবুল বাশার আখন্দ (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন), পৃঃ ২৭-২৮।

[4]. ইসলাম ও মানবাধিকার, পৃঃ  ৫।

[5]. মৌলিক মানবাধিকার, পৃঃ  ২৯।

[6]. ডঃ রেবা মন্ডল ও ডঃ  শাহজাহীন, মানবাধিকার আইন সংবিধান ইসলাম এনজিও, (ঢাকা : সামস্ পাবলিকেশন্স), পৃঃ  ১০।

[7]. R.Edewey, Freedom, p.347; মৌলিক মানবাধিকার, জুন, ২০০৪, পৃঃ ৩০।

[8]. ডা. জাকির নায়েক, লেকচার সমগ্র, অনুবাদ ও সংকলন : মাওলানা শরীফ মুহাম্মাদ আবু হানিফ (ঢাকা : ইসলামিক একাডেমি বাংলাদেশ), পৃঃ ১১১।

[9]. মাসিক আত-তাহরীক, রাজশাহী, ১৪তম বর্ষ, ৯ম সংখ্যা, জুন ২০১১, সম্পাদকীয়।

[10]. Mychel H. Heart, THE HUNDRED, P. 124-125.

[11]. তদেব, পৃঃ  ১২৫।

[12]. ইসলাম ও মানবাধিকার, ই.ফা.বা. পৃঃ  ৬।

[13]. Sorinik Pitirim A, The Crisis of our Age (New Yourk: E.P. Duttan & Co., 1951), P. 229;মৌলিক মানবাধিকার, পৃঃ ৩০।

[14]. তদেব, পৃঃ ৩১; Encylo. Britannica, 15th ed. Vol. 16, P. 71.

[15]. মৌলিক মানবাধিকার, পৃঃ  ৩৫।

[16]. তদেব, পৃঃ ৩২-৩৩।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button