নির্বাচিত ফেসবুক স্ট্যাটাস

জীবনে কষ্ট আসবেই

দুনিয়াতে এমন কোনো মানুষ নেই যার জীবনে কোনো সমস্যা নেই, যে কখনো কষ্ট পায় না। কতো ধরনের সমস্যা আর কষ্ট রয়েছে দুনিয়াতে – শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক সমস্যা, ফ্রেন্ডদের সমস্যা, পড়ালেখার সমস্যা কতো কি! কারো তো সমস্যা না থাকলেও সাধারণ ব্যাপার নিয়েই সমস্যা তৈরি করে দুঃখবিলাসের অভ্যাস থাকে।

প্রায়ই আমরা কষ্ট পেলে ভাবি আমাদের এত কষ্ট কেন দিচ্ছেন আল্লাহ, অমুকে কত ভালো আছে বা আমার লাইফ তো এমন না হয়ে অমুকের মতো হতে পারত! খুব সহজে আমরা আশাহত হয়ে যাই। জীবন নিয়ে অভিযোগ করতে থাকি। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি এই কষ্টের মাঝে আমাদের জন্য আল্লাহ কত রহমত ও বরকত রেখেছেন? আমরা কষ্ট পেতে চাইনা, কিন্তু কষ্ট পেলে আমাদেরই আসলে লাভ হয়। কয়েকটি উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এই হাদিসটা কম বেশি সবাই শুনেছি যে রাসূল (সা) বলেছেন, এমন কোনো কষ্ট নেই যার মাধ্যমে বান্দার গুনাহ ক্ষমা হয়না। এমনকি পায়ে একটা কাঁটা ফুটলেও গুনাহ মাফ হয়। ১

এমন কেউ কি আছে যে গুনাহ করেনা বা সম্পূর্ণ পবিত্র? মৃত্যু একদিন আসবেই। দুনিয়ার সকল কষ্ট এই মৃত্যুর সাথেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আখিরাতে গুনাহের জন্য কতোকাল শাস্তি পেতে হবে তা আল্লাহই জানেন। দুনিয়ার জীবনের মতো এত স্বল্পমেয়াদী কষ্ট ভোগ করতে হবেনা। সেই শাস্তি আরো ভয়ংকর আরো অধিক সময় ধরে হয়তো চলবে। তাহলে দুনিয়ায় কষ্ট পেয়ে গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাওয়া কি আমাদের জন্যই ভালো না?

এই কথাটাও আমরা সবাই জানি যে আল্লাহ যাকে বেশি ভালোবাসেন বা যার ভালো চান তাকে দুঃখ কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করেন।২ যার ঈমান যতো বেশি তার পরীক্ষা তত কঠিন হয়। যার জীবনে সমস্যা, কষ্ট, অভাব বেশি সে যদি এই অবস্থায় ধৈর্য ধারণ করতে পারে তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহর অধিক প্রিয় ব্যক্তি হবে ও অনেক অনুগ্রহ পাবে। একজন মুসলিমের জন্য এটা কত বড় পাওয়া। আর আল্লাহ্ তো বলেছেনই তিনি কাওকে তার সহ্য ক্ষমতার চেয়ে বেশি কষ্ট দেন না।

আমরা ভাবি যে আমরা সহ্য করতে পারবো না বা এত বেশি কষ্ট কেনো। কিন্তু আমাদের চেয়ে যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন তিনি কি আমাদের সম্পর্কে ভালো জানেন না? যেহেতু আমাকে এই পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে তারমানে অবশ্যই এই পরীক্ষায় পাশ করার যোগ্যতা আমার আছে। সুতরাং হতাশ হবার তো কিছু নাই, উল্টো আমরা দুআ করতে পারি যাতে পরীক্ষায় ভালোভাবে পাশ করে যেতে পারি আর আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখতে পারি।

কুরআনের এই আয়াতটাও আমরা জানি যে কষ্টের সাথেই স্বস্তি রয়েছে।৩ আসলেই তো তাই। কষ্ট পেলে আমাদের যেমন লাভ তেমনি কষ্টের পর যখন শান্তি পাওয়া যায় তার আনন্দ অনেক গুণ বেড়ে যায়।

মনে করেন আপনার বাবার অনেক টাকা। ৫০,০০০ টাকা দিয়ে একটা মোবাইল কিনলেন,কিছুদিন খুব ভালো লাগল কিন্তু এরপর নতুন মডেলের কোনো সেট দেখলে আপনার ওইটার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। নিজেরটা আর ভালো লাগবেনা। কিন্তু ধরেন আপনি অনেক কষ্টে ভাড়া, খাওয়া ইত্যাদি থেকে টাকা বাঁচিয়ে ৮,০০০ টাকা দিয়ে একটা মোবাইল কিনলেন। ওই মোবাইলের প্রতি আপনার যে মায়া, ভালোবাসা থাকবে তা সহজে পাওয়া জিনিসের চেয়ে অনেক গুন বেশি হবে। এই তো গেলো জিনিস, আর ভাবেন যখন দুনিয়াতে কষ্ট সহ্য করে গিয়ে আখিরাতে জান্নাত পাবেন তখন কেমন লাগবে? বা দুনিয়াতেই যখন কষ্টে আল্লাহর উপর ভরসা করার জন্য পুরষ্কার পাবেন তখন তা কতই না আনন্দের হবে।

মানুষ বিপদে পড়লে আল্লাহকে বেশি মনে করে। আল্লাহর ইবাদতে বেশি মনোযোগ দেয়। অনেক আমল করে যা সাধারনত করত না। এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। নিজের মধ্যে অনেক ভালো আমলের অভ্যাস করে নিতে পারি। যে ফরজ সালাত পর্যন্ত পড়েনা সে-ও কিন্তু বিপদে আল্লাহকে ডাকে। সালাত পড়ে দুআ করে। এতে কিন্তু আল্লাহর লাভ না,আমাদেরই লাভ।

দু:খ কষ্ট বিপদ ইত্যাদির সুফল যখন এতো বেশি তাহলে কেনো আমরা হতাশ হবো? কেন পাপ কাজের দিকে ঝুঁকব? কেন কষ্ট ভুলতে নেশার আশ্রয় নিব? কেন আল্লাহকে কষ্ট দেয়ার জন্য দোষারোপ করবো?

জীবনে কষ্ট আসবেই। কিন্তু যে কষ্ট আমাদের আল্লাহর এত কাছে নিয়ে যেতে পারে তার জন্য কেন আমরা হতাশ হব?

সবর করলেই যার ফল অনেক মধুর হতে পারে গুনাহের দিকে ঝুঁকে কেন তা আমরা জাহান্নামের আযাবে পরিনত করব?

আল্লাহই কুরআনে বলেছেন নিশ্চয় কাফির সম্প্রদায় ব্যতিত আল্লাহর রহমত থেকে কেউ নিরাশ হয় না।৪ সুতরাং ইনশাআল্লাহ আমরাও হব না যদি না আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত হই।

__________________________________________

১. সহীহ বুখারীঃ ৫২৩৮
২. সহীহ বুখারীঃ ৫২৩৬
৩. সুরাহ ইনশিরাহঃ ৫
৪. সুরাহ ইউসুফঃ ৭৮

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button