রামাযান ও ছিয়াম

রামাদানে ব্যস্ততা ও ইবাদত

রামাদান মাসে অনেকেই নিম্নোক্ত সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হন।

# সারাদিন অফিসের কাজ করতে করতে সময় চলে যায়, ফলে দিনে তেমন একটা ইবাদত করা হয় না।

# খুব ভোরে অফিস যেতে হয় বলে রাতে ইবাদতের জন্য বেশি জাগতে পারেন না।

# গৃহিণীদের দিনের একটা বড় অংশ ব্যয় হয়ে যায়, সংসার এর কাজ করতে ও সন্তানদের দেখভাল করতে গিয়ে।

# অনেক সময় ঘরে অসুস্থ বা বৃদ্ধ সদস্য থাকেন, তাদের সেবায় অনেকটা সময় চলে যায়।

# যাদের পরীক্ষা থাকে তাদের পড়াশোনার পেছনে সময় খরচ হয়ে যায়।

# আরো বিভিন্ন অনাকাঙ্খিত কারনে ইবাদতের জন্য সময় কমে যায়।

অনেকেই সারা বছর উন্মুখ হয়ে বসে থাকেন রামাদান মাসের জন্য, যেন প্রাণ ভরে আল্লাহ্‌ র ইবাদত করতে পারেন।

কিন্তু জীবনের নানা রকম (unavoidable) ব্যস্ততার কারণে সময় আপ্রাণ ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও এ মাসে পুরো সময়টা কাজে লাগানো যায় না।

আজকের পোস্ট টা এই সব ব্যস্ত মানুষদের জন্য।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজের ভেতর ইবাদতের সময় বের করার কিছু টিপস থাকছে আজ।

# রাসুল (সাঃ) বলেছেন “সকল কাজ তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল…………”। আমাদের প্রাত্যহিক কাজ গুলো যদি আল্লাহ্‌কে খুশি করার ‘নিয়তে’ করি, তাহলে সাধারণ কাজও ইবাদতে পরিণত হতে পারে।

যেমন স্ত্রী-সন্তানের ভরন পোষণ করা স্বামীর দায়িত্ব। তাই সে যদি আল্লাহ্‌র হুকুম পালনের নিয়তে হালাল রুজি অর্জনের জন্য চাকরি বা ব্যবসা করে তবে তার কাজের জন্যও সে সোয়াব পাবে।

সন্তানদের যদি আল্লাহ্‌র পথে মানুষ করা হয়, অসুস্থের সেবা করা অথবা ঘরের রোজাদার সদস্যদের জন্য ইফতার তৈরী করা ইত্যাদি কাজ যদি একান্তভাবে আল্লাহ্‌কে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে করা হয়, তাহলে কাজের সাথে সাথে আমল নামাও ভারী হতে থাকবে ইন শা আল্লাহ্‌।

# রামাদান মাসে সবার শখ থাকে বেশী বেশী কুরআন তিলাওয়াত করার। আজকাল প্রায় সবার হাতে রয়েছে স্মার্ট ফোন।

প্লে স্টোরে গিয়ে আজই ডাউনলোড করে ফেলুন কুরআনের পছন্দসই কোন একটি app. অফিসে কাজের ফাঁকে, রাস্তায় জ্যামে বসে, গাড়িতে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাবার সময় app থেকে কুরআন বের করে তিলাওয়াত করতে থাকুন।

[যারা ভাবেন, কুরআন এর ছাপানো অক্ষর থেকে না পড়লে তিলওয়াত হবে না কি,

তারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন আমাদের নবী করীম (সাঃ) কিন্তু কখনো মুসহাফ দেখে দেখে কুরআন পড়েন নি, তিনি পড়তেই পারতেন না।

আবার হাফিয যারা তারা মুখস্ত থেকেও তিলওয়াত করতে পারেন, সেখানে app থেকে পড়লে সোয়াব না হবার কোন কারণ নেই।

(তবে ফোনে যেহেতু কল বা মেসেজ আসার মাধ্যমে কন্সান্ট্রেশনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, তাই যখন সম্ভব হয়, তখন মুসহাফ থেকে পড়া উত্তম। আর মোবাইল থেকে পড়ার সময় ফোন সাইলেন্ট বা এরোপ্লেন মোডে রাখা যায়) ]

# রাস্তাঘাটে সব সময় তিলওয়াত করার পরিস্থিতি নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কুরআনের সমধুর কোন অডিও ফোনের মেমোরিতে সেভ করে, যেকোন সময় কানে হেডফোন দিয়ে কুরআন শুনতে পারেন।

কুরআন তিলওয়াত শোনার মাঝেও অশেষ নেকি রয়েছে।

# এছাড়া “তাফসির ইবনে কাসির” অথবা হাদিসের apps ডাউনলোড করলে, ঘরের বাইরে যেকোন কাজের মাঝে পড়া যায়।

# রান্নার ফাঁকে, ঘরের অন্যান্য কাজের সময়, রাস্তায় ইত্যাদি সময়ে মোবাইলের app থেকে কুরআনের ছোট ছোট সুরাহ গুলো কাজের ফাঁকে ফাঁকে মুখস্ত করা যায়।

# সর্বক্ষণ কাজের মাঝে, চলতে ফিরতে যখনই মনে পড়বে আল্লাহ্‌র যিকর করতে থাকা।

আল্লাহ্‌ বলেছেন, “তোমার রব্বকে স্মরণ করো মনের মধ্যে দীনতার সাথে ও ভীতি সহকারে এবং উচ্চ আওয়াজের পরিবর্তে নিম্ন-স্বরে সকাল-সন্ধ্যায় (অর্থাৎ সর্বক্ষণ) আর তোমরা উদাসীনদের (গাফিলদের) অন্তর্ভুক্ত হয়োনা”। [সুরাহ আরাফঃ২০৫]

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার রব্বকে যিকর (স্মরণ) করে, আর যে ব্যক্তি তার রব্বের স্মরণ করেনা, তাদের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতের ন্যায়”।

অতএব যিকর করাকে আমরা মোটেও অবহেলা করতে পারি না এবং সার্বক্ষণিক ইবাদতের জন্য যিকরই সবচেয়ে সহজ।

# অর্থ উপলব্ধি করে বারবার ইস্তিগফার করা। সব চেয়ে ছোট ইস্তিগফার করার দুয়া হল, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। আমাদের নবী (সাঃ) সারাদিনে অজস্র বার ইস্তিগফার করতেন।

# বাংলাদেশে মসজিদের কোন অভাব নেই, তাই পুরুষরা কাজের ফাঁকে সহজেই মসজিদে জামাত ধরার চেষ্টা করতে পারেন। একান্তই যদি সম্ভব না হয় অফিসের অন্যান্যদের সাথে নিয়ে জামাতে সালাত আদায় করা।

# সারা মাসে কি কি ইবাদত করতে চান, তার একটা লিখিত লিস্ট অথবা শিডিউল তৈরি করে ফেললে অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট goal set করলে তা খুবই ফলপ্রসু হয়।

যেমন প্রতিদিন অন্তত এক পারা কুরআন পড়া,

কমপক্ষে একটি আয়াত মুখস্ত করা অথবা

এক জন দরিদ্রকে ইফতার করানো ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের পরিকল্পনা থাকতে পারে শিডিউলটিতে।

# সময় অপচয় হয় এমন কাজ থেকে দূরে থাকা, তাহলে হাতে আরো বেশি সময় পাওয়া যাবে। যেমন টিভি কম দেখা, ইন্টারনেটে সময় নষ্ট না করা ইত্যাদি।

# যতটুকু ইবাদত করার সময় বের করা যায়, সেই সময়টুকুতে একনিষ্ঠ অন্তরে ইবাদত করা।

কারণ হুড়মুড় করে পরা একশ রাকাত নামাজের চেয়ে খাঁটি মনে পড়া দুই রাকাত নামাজের ওজন বেশি হবে।

আল্লাহ্‌ কিয়ামতের দিন আমাদের আমল গুনে দেখবেন না বরং ওজন করে দেখবেন। So, quality is more important than quantity!

# দৈনন্দিন কাজের প্রায়োরিটি সেট করে ফেলা এবং যেসব কাজ না করলেও চলে, সেসব কাজ প্রাত্যহিক কাজের লিস্ট থেকে সরিয়ে ফেলা।

Messenger of Allah (saw) says, “Ramadan has come to you. (It is) a month of blessing, in which Allah covers you with blessing, for He sends down Mercy, decreases sins and answers prayers.

In it, Allah looks at your competition (in good deeds), and boasts about you to His angels.

So show Allah goodness from yourselves, for the unfortunate one is he who is deprived in (this month) of the mercy of Allah, the Mighty, the Exalted.” [ImamTabarani]

সব শেষে একটি কথাই বলতে চাই, যে আল্লাহ্‌র ইবাদতের জন্য সময় বের করে,

আল্লাহ্‌ তার সময়ে অনেক বরকত দেন ও

যে এমনটি করে না,

সেই ব্যক্তির হাত তখন ব্যস্ততায় ভরিয়ে দেয়া হয়।

আল্লাহ্‌ যেন আমাদের সময়ে বরকত দেন, কবুল যোগ্য আমল করার ও এই মাসের সর্বোচ্চ বরকত হাসিলের তৌফীক দেন। আমিন।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button