গ্রাফিক পোস্টার

মক্কা বিজয় (ইনফোগ্রাফিক)

৬ষ্ঠ হিজরীর ‍হুদায়বিয়ার সন্ধিই খুলে দিয়েছিল মক্কা বিজয়ের পথ।
কারণ এর ফলে খুযাআ গোত্রের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে উঠেছিল মুসলমানদের
আর বকর গোত্রের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে উঠেছিল কোরায়শের।
———-
খুযাআ এবং বকর :
দুটি গোত্রের মাঝে বৈরি সম্পর্ক চলে আসছিল প্রাক-ইসলাম যুগ থেকেই।
হিজরী ৮ -এর শাবান মাসে রাতের বেলা খুযাআ গোত্রের ওপর আক্রমণ করে বসে বকর। সমরাস্ত্র ও লোকবল দিয়ে তাদের সাহায্য করে কোরাইশ। হারামে আশ্রয় নেওয়া সত্ত্বেও খুযাআ গোত্রের বিশোর্ধ্ব লোককে হত্যা করে দেয় তারা। এরপর খুযাআর আমর বিন সালেম নিজ গোত্রের চল্লিশ জন লোক নিয়ে আল্লাহর রাসূলের কাছে এসে সাহায্য প্রার্থনা করে। আল্লাহর রাসূল সা. আমর বিন সালেমকে বললেন,আমরা তোমাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত!’ কোরায়শকে প্রত্যাঘাত এবং মক্কা বিজয়ের বৃহৎ সিদ্ধান্ত নেন আল্লাহর রাসূল।
———-
ওদিকে কোরায়শ রক্তপণ পরিশোধ করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চায়। মুসলমানদের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে আবু সুফিয়ানকে তারা মদিনায় পাঠায়। কিন্তু তাদের এ চেষ্টা ব্যর্থ হয়। আল্লাহর রাসূল যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেন মুসলমানদের।
———-
হিজরী ৮ -এর ১০ রমযান :
১০ হাজার যোদ্ধা নিয়ে মদিনা ছাড়ে মুসলিম-সেনাবহর। মদিনার শাসনভার দেওয়া হয় আবু রাহাম আল-গিফারীর হাতে। সম্পদ ও পরিবার নিয়ে হিজরত করা আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিবের সঙ্গে জাহফা এরিয়ায় সাক্ষাত হয় আল্লাহর রাসূলের।
———-
নিরাপত্তা বলয়, গোয়েন্দা টিম ও সহসা আক্রমণ :
– সেনাবহরের হালচাল এবং পথ অবলম্বনের বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন রাখেন আল্লাহর রাসূল।
– মুশরিকদের বিভ্রান্ত করতে ‘বাতন-ইজমে’ আবু কাতাদাহ বিন রবী’য়ের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি গোয়েন্দা টিম পাঠান আল্লাহর রাসূল।
– কোরাইশদের থেকে যুদ্ধসংক্রান্ত সব তথ্য গোপন রাখতে চাইলেন আল্লাহর রাসূল। আর তাই মদিনায় গমনকারী এবং বহির্গমনকারীদের প্রতি নজর রাখতে এবং মক্কা-মদিনা রোডে যাতায়াতকারী সবার গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে ওমর বিন খাত্তাবের নেতৃত্বে ক্ষুদ্র কিছু গ্রুপ তৈরি করেন সমরনায়ক মহানবী সা.।
– এ সময় কোরায়শকে যুদ্ধের সংবাদ জানিয়ে হাতেব বিন আবি বালতাআর লেখা চিরকুট উদ্ধার করা হয়। মক্কা পৌঁছার আগেই চিরকুটবাহক ওই নারীকে গ্রেফতার করা হয়। বদরী হওয়ার কারণে ওই সাহাবীকে মাফ করে দেন আল্লাহর রাসূল।
– আল্লাহর রাসূলের কাছে নিরাপত্তা চাইতে আব্বাসকে নিয়ে মুসলিম-সেনাবহরে ঢুকেন আবু সুফিয়ান। ওমর বিন খাত্তাব তাকে ফলো করে হত্যার জন্যে তার পিছু পিছু আসেন। কিন্তু আব্বাস তাকে আগলে রাখায় রক্তপাত থেকে বিরত থাকেন ওমর। আবু সুফিয়ানকে ইসলামের দাওয়াত দেন আল্লাহর রাসূল। প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করলেও পরে শাহাদাতের ঘোষণা দেন আবু সুফিয়ান। ‘আবু সুফিয়ান গরিমাপাগল, তাই তাকে একটা কিছু বিশেষ অনুগ্রহ দেখান হে আল্লাহর রাসূল!’ আব্বাসের এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহর রাসূল বললেন,
‘হ্যাঁ, যে আবু সুফিয়ানের ঘরে আশ্রয় নেবে, সে নিরাপদ। যে ঘরের দরজা বন্ধ রাখবে, সে নিরাপদ। যে মসজিদে হারামে ঢুকবে, সেও নিরাপদ।’
———-
– ডান দিকের বাহিনীর দলপতি করেন খালিদ বিন ওলীদকে।
এ বাহিনীতে সুলাইম, আসলাম, গিফার. মুযাইনা, জুহাইনা প্রমুখ গোত্রের মুসলমান অন্তর্ভুক্ত হয়। তাদের দায়িত্ব : দক্ষিণ দিক থেকে মক্কায় প্রবেশ।
– বাঁ দিকের বাহিনীর দলপতি করেন যুবাইর ইবনুল আওয়ামকে।
মুহাজির এবং অশ্বারোহীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এ বাহিনীতে।
তাদের দায়িত্ব : ‘কাদা’র উঁচু প্রান্ত দিয়ে মক্কায় প্রবেশ। আল্লাহর রাসূলের ঝাণ্ডাও থাকবে এ বাহিনীতে।
– পদাতিক বাহিনীর দলপতি করেন আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহকে।
তাদের দায়িত্ব : তারা বাতনুল ওয়াদীতে পৌঁছুবে। মক্কা অধিকারে আসা পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থান নেবে।
———-
প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব ও অবস্থান নিয়ে বীরদর্পে মক্কায় প্রবেশ করে। কোরায়শের প্রতিরোধবাহিনী পরাজয়ের মুখে পড়ে। ঈমানী শক্তির কাছে মাথানত করতে বাধ্য হয় পৌত্তলিকরা।
———-
– সাহাবীদের নিয়ে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করে হজরে আসওয়াদ স্পর্শ করেন আল্লাহর রাসূল। সেদিন মক্কায় ছিল তিন শ ষাটটি মূর্তি। ধনুক দিয়ে আল্লাহর রাসূল সেগুলো গুঁতো দিচ্ছিলেন। প্রতিমাগুলো ভেঙে দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন :
‘সত্য সমাগত। মিথ্যা বিতাড়িত; মিথ্যার বিনাশ অবশ্যম্ভাবী।’ (সূরা ইসরা : ৮১)
‘সত্য এসে গেছে। অসত্য না পারে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে আর না পারে পুনর্সৃজন ঘটাতে।’ (সূরা সাবা : ৪৯)
মুখ থুবড়ে মাটিতে আছড়ে পড়ছিল মূর্তিগুলো।
———-
বায়তুল্লাহর তাওয়াফশেষে ওসমান বিন তালহাকে ডাকেন আল্লাহর রাসূল। তার কাছ থেকে চাবি নিয়ে কাবার দরজা খুলতে বলেন এক সাহাবীকে। কাবায় ঢুকে দেখেন তাতে অনেকগুলো ছবি। সেগুলো নষ্ট করার পর তাতে নামায আদায় করেন। এরপর বিলালকে বলেন কাবার ছাদে উঠে আযান দিতে। এরপর তিনি কাবার দরজায় এসে দুহাত দরজার দু’কপাটে রেখে শরণার্থীদের উদ্দেশে বলেন :
‘কী বলো তোমরা?!! কী ভাবছো তোমরা?!!’ তারা বলল, ‘ভাবছি আপনি তো আমাদের ভাইপু। চাচার ছেলে। অতি সহানুভূতিশীল এবং দয়াবান আপনি।’ আল্লাহর রাসূল বললেন, ইউসুফ যা বলেছিল, আজ আমি তাই বলব তোমাদের :
‘কোনো অভিযোগ নেই আজ তোমাদের বিরুদ্ধে। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’
———-
– ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি বেশি শত্রুভাবাপন্ন ও সদা তৎপর চিহ্নিত অপরাধী ইকরামা বিন আবু জাহল, আবদুল উযযা বিন খাতাল, মিকয়াস বিন সাবাবা প্রমুখ ছয় পুরুষ ও তিন নারীর বিরুদ্ধে রাসূলের হত্যাদেশ ছিল। কিন্তু তারপরও তাদের কয়েক জনকে নিঃশর্ত ক্ষমা করে দেন আল্লাহর রাসূল।
———-
– ‘শুনব ও মানব’ এ প্রতিশ্রুতির ওপর মক্কার সকল নারী-পুরুষের বায়আত নেন আল্লাহর রাসূল। তিন দিন অবস্থান করে ইসলামের নানা প্রতীক সেখানে স্থাপন করেন তিনি। হেদায়েতের পথ দেখান মানুষকে। বিধ্বস্ত করেন ছোট বড় সব মূর্তি।
———-
এ অভিযানের মধ্য দিয়ে শত্রুদের মেরুদন্ড ভেঙে দেন মহান আল্লাহ। কুফুরী সাম্রাজ্য ধ্বংস করে পৌত্তলিকতার সব উপকরণ বিধ্বস্ত করেন। আবারও একত্ববাদ ও আল্লাহর একচ্ছত্র আধিপত্যে আলোকিত হয় পৃথিবী। এ মহাবিজয়টি শুধু ভূ-বিজয়ের ইতিহাস নয়; এটি তো ইসলাম দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করার ইতিহাস। দলে দলে মানুষ আল্লাহর মনোনীত ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার নজিরবিহীন ইতিহাস।
——–

HD JPG ফাইল 3.9 MB
Download

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button