সংবাদ

মুসলিমদের পক্ষে আল আকসার মালিকানার ঘোষণা দিয়ে ইউনেস্কোর প্রস্তাব গৃহীত

পবিত্র আল-আকসা মসজিদকে মুসলমানদের মালিকানাধীন স্থাপনা বলে স্বীকৃতি দিয়ে জেরুজালেম বিষয়ক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে ইউনেস্কো। প্রস্তাবটি নিয়ে ইসরাইলের ব্যাপক সমালোচনার মুখেই গত বুধবার চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। প্যারিসে এ সংক্রান্ত ভোটাভুটিতে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১০টি দেশ। ভোটদানে বিরত থাকে আটটি দেশ এবং প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় দুটি দেশ। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম।

গৃহীত প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে ইসরাইল। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনীত মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন এ সিদ্ধান্তকে হতাশাজনক এবং ভুল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইউনেসকো’র গৃহীত এ প্রস্তাব সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রসহ নানা ক্ষেত্রে নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের সহায়তার পথ প্রশস্ত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রস্তাবে আল আকসা মসজিদ ও আশপাশের এলাকাকে ইসলামী নাম হারাম শরিফ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইহুদিদের দাবি অনুযায়ী টেম্পল মাউন্ট বা উপাসনা-পর্বত নামের কোনও উল্লেখ করা হয়নি। বহু বছর ধরেই মুসলমানদের প্রথম কিবলা তথা পবিত্র আল আকসা মসজিদ ও বায়তুল মুকাদ্দাস শহরের মালিকানা নিয়ে নানা বিতর্ক চলছিল। জাতিসংঘ ইসরাইলের দখলে-থাকা এ অঞ্চলটিকে অধিকৃত অঞ্চল বলে মনে করে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে বহু বছর আগেই এ অঞ্চল থেকে ইসরাইলকে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমান্তে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। তবে তাতে কর্ণপাত না করে যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় ফিলিস্তিনি ভূখ-ে জোরপূর্বক বসতি বিস্তার করে চলেছে ইসরাইল। ইসরাইল চায় বায়তুল মুকাদ্দাস শহরটিকে কথিত ইহুদি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হোক। অন্যদিকে আল-আকসা মসজিদ তথা মুসলমানদের প্রথম কিবলার শহর বায়তুল মুকাদ্দাসের পূর্বাঞ্চলকে ফিরে পেতে চায় ফিলিস্তিনিরা। তারা এ অঞ্চলকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী করতে চায়। জাতিসংঘের বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর প্রস্তাবে এই পবিত্র ভূমিতে মুসলমানদের ওপর ইসরাইলি সহিংসতারও নিন্দা জানানো হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, ফিলিস্তিনিদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলো এবং পূর্ব বায়তুল মুকাদ্দাসের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার চেষ্টা করছে ইউনেস্কো। এতে ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই অঞ্চলের সব কিছুই ইব্রাহিমি সব ধর্ম তথা ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মে সম্মানিত। আর তাই বায়তুল মুকাদ্দাসের পশ্চিম প্রাচীরও এইসব পবিত্র স্থাপনার অংশ যা ইহুদিদের ইবাদাতের স্থান। ইউনেসকো বলছে, ইসরাইলকে মাসজিদুল আকসার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে। ২০০০ সাল থেকে এই ঐতিহাসিক মসজিদ নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরাইল। এর আগে মুসলমানদের প্রথম কিবলার এই স্থাপনা পরিচালিত হত জর্ডানের ওয়াকফ বোর্ডের তত্ত্বাবধানে। ইউনেসকোর প্রস্তাবে সেখানে ফের জর্ডানের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, আল আকসা মসজিদে উগ্র ইসরাইলিদের হামলার দায়-দায়িত্ব ইসরাইলি সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বর্তায়। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ফিলিস্তিনিদের গ্রেফতার ও তাদের আহত করার ঘটনা নিন্দনীয়। বায়তুল মুকাদ্দাসের আশপাশে ইসরাইলের ১৮টি পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের কাজ যথাশীঘ্র সম্ভব বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে ইউনেসকো। ইউনেসকোর মহাসচিব ইরিনা বোকোভা বলেছেন, জেরুজালেম তথা বায়তুল মুকাদ্দাস তিন একত্ববাদী ধর্ম তথা ইহুদি, খ্রিস্ট ও ইসলাম ধর্মের কাছে পবিত্র শহর। আর এখানকার অসাধারণ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বৈচিত্র্যকে মর্যাদা দিতেই ইউনেসকো এই শহরটিকে বিশ্ব-ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করেছে। বায়তুল মুকাদ্দাসের ঐতিহ্যকে বিচ্ছিন্ন বা ভাগ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ইউনেসকোর দায়িত্ব হচ্ছে সহিষ্ণুতা ও ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধার প্রসার ঘটানো। আর এই দায়িত্ববোধ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমরা অভিন্ন মানবজাতির অংশ এবং বৈচিত্র্যময় এ পৃথিবীতে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে সহিষ্ণুতা। গার্ডিয়ান।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button