সংবাদ

লিবিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য ক্যামেরন দায়ী

লিবিয়ায় হামলা চালিয়ে দেশটিকে একটি ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে দায়ী করেছে সে দেশের একটি সংসদীয় কমিটি। গত বুধবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপযুক্ত গোয়েন্দা তথ্য কিংবা কোনো ধরনের সমন্বিত পরিকল্পনা ছাড়াই লিবিয়াতে হামলা চালানো হয়েছে। লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে সরানো বিরাট বড় ভুল ছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। মাস দুয়েক আগে যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক চিলকট তদন্ত প্রতিবেদনে ২০০৩ সালে ইরাকে হামলার জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে দায়ী করে বলা হয়, ব্লেয়ার কোনো যথাযথ কারণ ছাড়াই সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতে ইরাক হামলায় যুক্ত হন। আলোচিত ওই তদন্ত প্রতিবেদনের পর এবার যুক্তরাজ্যের আরেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে লিবিয়ায় হামলার জন্য দায়ী করা হলো। ক্যামেরন ইরাকযুদ্ধের ভুল থেকে নেওয়া কোনো শিক্ষাই লিবিয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগাননি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, লিবিয়ায় হামলার পর ক্ষমতা দখল না করার কৌশল নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ কৌশল কোনো কাজে আসেনি। ইরাকে হামলার ঘটনায় সৃষ্ট বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে চাপে পড়ে সরকার যেভাবে শক্তিশালী চিলকট ইনকোয়ারি গঠন করেছিল, লিবিয়ার ঘটনা তদন্তের বিষয়টি সে রকম ছিল না। লিবিয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটি নিজ তাগিদেই এই তদন্ত করে, যার ফলে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের গোপন নথিপত্র যাচাইয়ে এই কমিটির তেমন ক্ষমতা ছিল না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে জবাব দিতে এই কমিটির ডাকে সাড়া দেননি। গত ২৩ জুন যুক্তরাজ্যের মানুষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দেওয়ায় ইইউপন্থী ডেভিড ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন। চলতি সপ্তাহে তিনি সাংসদ পদ থেকেও পদত্যাগ করেন। ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ ঘটানোর জন্য দায়ী হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখান ক্যামেরন। লিবিয়ায় হামলার কারণেও তাঁকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

সংসদীয় কমিটির ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ানে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ইরাকে হামলার যথার্থতা নিরীক্ষায় চিলকট প্রতিবেদনে যেসব গলদ তুলে ধরা হয়েছিল, অনেকটা একই রকম ঘাটতির কথা বলা হয়েছে লিবিয়ার ক্ষেত্রেও। এতে বলা হয়, গাদ্দাফির বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের বিষয়ে ঠিকমতো খোঁজ খবর নেওয়া ছাড়াই এসব বিদ্রোহীদের সমর্থন দেওয়া হয়েছে। আর এই সমর্থনের সুযোগ নিয়েছে ইসলামিক উগ্রবাদীরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনগাজির নাগরিকদের রক্ষার কথা বলে হামলা শুরু করা হয়েছিল। ওই উদ্দেশ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সাধিত হয়েছিল। কিন্তু এরপরও হামলা অব্যাহত রেখে গাদ্দাফিকে সরানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা মোটেও ঠিক হয়নি। গাদ্দাফির অবর্তমানে দেশটির শাসনভার কে নেবেন, সে বিষয়েও সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলকে প্রভাবিত করে হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে ক্যামেরনকে পুরোভাগে দায়ী করেছে সংসদীয় কমিটি। বলেছে, গাদ্দাফির পতনের পর যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স দেশটির পুনর্গঠনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।

পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান ক্ষমতাসীন দলের এমপি ক্রিসপিন ব্লান্ট বলেন, লিবিয়ায় হামলা না করে গাদ্দাফির সঙ্গে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে কাজে লাগানো যেত। ব্লেয়ার লিবিয়ায় হামলা শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে গাদ্দাফির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে পড়ুয়া গাদ্দাফির ছেলে সাইফ গাদ্দাফির মাধ্যমে সমঝোতার সুযোগকেও হাতছাড়া করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের হস্তক্ষেপের ফলে লিবিয়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ধসে পড়েছে, বিভিন্ন উগ্রবাদী গোষ্ঠী ও স্থানীয় গোত্রগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের জন্ম দিয়েছে। সৃষ্টি করেছে অভিবাসী-সমস্যা। চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। আর গাদ্দাফি সরকারের অস্ত্র, গোলাবারুদ সমগ্র অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ায় ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের উর্বর ভূমিতে পরিণত হয়েছে পুরো উত্তর আফ্রিকা।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ দপ্তর এক বিবৃতিতে এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, লিবিয়ায় হস্তক্ষেপের বিষয়টি আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার ছিল। আরব লিগ ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ডাকে ওই হস্তক্ষেপ করা হয়। প্রায় চার দশক ধরে লিবিয়ার ক্ষমতায় থাকা মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা দিলে সাধারণ নাগরিকদের রক্ষার নামে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটিতে হামলা চালায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথবাহিনী। ওই বছরের আগস্ট মাসে গাদ্দাফি নিহত হন। এরপর থেকেই দেশটি বিভিন্ন গোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্বে এক অরক্ষিত ভূমিতে পরিণত হয়। উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো থেকে অবাধে শরণার্থী ও অভিবাসীরা লিবিয়ায় প্রবেশ করছে। সেখান থেকে তারা সাগরপথে পাড়ি দিচ্ছে ইউরোপে। এর ফলে লিবিয়ার পরিস্থিতি ইউরোপের শরণার্থী সংকটেও প্রভাব ফেলছে। গার্ডিয়ান, ওয়েবসাইট।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button