হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)

খন্দকের যুদ্ধ

পূর্বের অংশ পড়ুন: বনু নাযীর যুদ্ধ

(৫ম হিজরীর শাওয়াল মোতাবেক ৬২৬ খৃষ্টাব্দের মার্চ মাস)

মদীনা থেকে বনু নাযীর ইহুদী গোত্রটিকে খায়বরে নির্বাসনের মাত্র ৭ মাসের মাথায় খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদীনার উপরে পুরা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং দীর্ঘ প্রায় এক মাস ব্যাপী কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতাপূর্ণ অভিযান। এই যুদ্ধে শত্রু সৈন্যের সংখ্যা ছিল ১০,০০০। যা ছিল মদীনার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা মিলে মোট জনসংখ্যার চাইতে বেশী। মুসলিম বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ছিল  ৩০০০। কিন্তু তারা যে অভিনব ঈরানী যুদ্ধকৌশল অবলম্বন করেন, তা পুরা আরব সম্প্রদায়ের নিকটে ছিল অজানা। ফলে তারা হতাশাগ্রস্ত ও পর্যুদস্ত হয়ে অবশেষে পলায়ন করতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধের নেপথ্যচারী ছিল মদীনা থেকে বিতাড়িত বনু নাযীর ইহুদী গোত্রের নেতারা। মদীনার শনৈঃশনৈ উন্নতি দেখে হিংসায় জর্জরিত খায়বরে বিতাড়িত বনু নাযীরের ইহুদী নেতারা ২০ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে মক্কার কুরায়েশ নেতৃবৃন্দ এবং নাজদের বেদুঈন গোত্র বনু গাত্বফান ও অন্যান্য বড় বড় গোত্রের কাছে প্রেরণ করে। তারা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকলের সাধারণ শত্রু মুসলিম শক্তিকে নির্মূল করার জন্য প্ররোচিত করে। ফলে সমস্ত আরবে মদীনার বিরুদ্ধে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। অতঃপর আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে কেনানা ও তেহামা গোত্রের মিত্রবাহিনী মিলে ৪০০০ এবং বনু সুলায়েম ও বনু গাত্বফানের বিভিন্ন গোত্রের ৬০০০ মোট দশ হাযার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী সমুদ্র তরঙ্গের মত গিয়ে মদীনায় আপতিত হয়।

অপরপক্ষে মদীনার হুঁশিয়ার নেতৃত্ব গোয়েন্দা রিপোর্টের মাধ্যমে আগেই সাবধান হয়ে ঈরানী ছাহাবী সালমান ফারেসীর পরামর্শ মোতাবেক মদীনার উত্তর পার্শ্বে ওহোদের দিকে দীর্ঘ পরিখা খনন করে এবং তার পিছনে  ৩০০০ সুদক্ষ সৈন্য মোতায়েন করে। এর কারণ ছিল এই যে, তিনদিকে পাহাড় ও খেজুর বাগিচা দ্বারা বেষ্টিত মদীনার কেবল উত্তর দিকেই খোলা ছিল এবং এদিক দিয়েই শত্রুদের হামলার আশংকা ছিল। মুসলিম বাহিনী তীর-ধনুক নিয়ে সদাপ্রস্ত্তত থাকেন, যাতে শত্রুরা পরিখা টপকে বা ভরাট করে কোনভাবেই মদীনায় ঢুকতে সক্ষম না হয়। মুসলিম বাহিনীর এই নতুন কৌশল দেখে কাফের বাহিনী হতচকিত হয়ে যায়। ফলে তারা যুদ্ধ করতে না পেরে যেমন ভিতরে ভিতরে ফুঁসতে থাকে, তেমনি রসদ ফুরিয়ে যাওয়ার ভয়ে আতংকিত হ’তে থাকে। মাঝে-মধ্যে পরিখা অতিষমের চেষ্টা করতে গিয়ে তাদের ১০ জন নিহত হয়। অমনিভাবে তাদের তীরের আঘাতে মুসলিম পক্ষে ৬ জন শহীদ হন। এ যুদ্ধ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘কাফেররা বলে যে, আমরা আজ সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিশোধকামী’। ‘কিন্তু দেখবে যে সত্বর ঐ সম্মিলিত বাহিনী পরাজিত হবে এবং তারা পিঠ ফিরে পালিয়ে যাবে’ (ক্বামার ৫৩/৪৪-৪৫)। উক্ত আয়াত নাযিলের ২৫ দিন পর হঠাৎ উত্তপ্ত বায়ুর প্রচন্ড ঘুর্ণিঝড় আল্লাহর গযব আকারে নেমে আসে। যা অবরোধকারী সেনাদলের তাঁবু সমূহ উড়িয়ে নিয়ে যায় এবং তারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যায়। এভাবে তাদের মদীনা ধ্বংসের ব্যাপক প্রস্ত্ততি ধূলিসাৎ হয়ে যায় এবং মদীনা সমস্ত আরবে এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসাবে স্বীকৃতি পায়।

এটাই ছিল খন্দক যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ। কিন্তু এর মধ্যে রয়েছে বহু শিক্ষণীয় ঘটনা, যা আমরা একটু পরে আলোচনা করব। তবে এ যুদ্ধেরই আনুষঙ্গিক যুদ্ধ হ’ল বনু কুরায়যার যুদ্ধ, যার কারণ ও পটভূমি খন্দক যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তৈরী হয়। সেকারণ আমরা এখন বনু কুরায়যা যুদ্ধের ঘটনা বিবৃত করব। অতঃপর উভয় যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য ও শিক্ষণীয় ঘটনাবলী উল্লেখ করব।

পরবর্তী অংশ পড়ুন: বনু কুরায়যার যুদ্ধ

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button